বুধবার   ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৩ ১৪৩২   ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

শরীয়তপুরে বিয়ের নামে প্রতারণা: ৩ মাস সংসারের নামে ধর্ষণ

নুরুজ্জামান শেখ ,শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৪৮ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২১ বুধবার

শরীয়তপুরে বিয়ের নামে প্রতারণা করে অবৈধভাবে সংসার পেতে তিন মাস ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে পালং উপজেলার চিকন্দী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের উত্তর শৌলা গ্রামের রহিম মাদবর এর ছেলে ইমরান মাদবর (২৫) এর বিরুদ্ধে। ওই একই গ্রামের ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী কিশোরী গণমাধ্যমকে বলেন, ওই একই গ্রামের রহমত মাদবর এর ছেলে ইমরান মাদব (২৫) এর সাথ প্রায় দুই বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্কের জেরে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ৩ থেকে ৪ মাস আগে ইমরানের বন্ধু উজ্জ্বল, তাদের বাড়ি আবুরা ওই বাড়িতে আমাকে নিয়ে যায় এবং ওই বাড়িতেই বিয়ের কথা বলে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ওই ধর্ষণের পর থেকেই মাঝেমধ্যে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করতো। এরমধ্যে আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। বর্তমানে ইমরানের বাচ্চা আমার পেটে, একথা জানার পরে ইমরানকে বলি আমাকে বিয়ে করো, তখন ইমরান আমাকে প্রত্যাখ্যান করে। ইমরানের মুখ থেকে এই কথা শোনার পর তখন আমি লজ্জায় ঘৃণায় আত্মহত্যা করার জন্য বিষ খাই। আমার বিষ খাওয়ার কথা শুনে ইমরান ও তার বন্ধুদের নিয়ে অটো ইজি বাইক ভাড়া করে আমাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করায় চিকিৎসার জন্য। আমি ওই হাসপাতালে তিনদিন থাকার পরে যখন সুস্থ হই তখন ইমরান আমাকে নিয়ে শরীয়তপুর সদরের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে  যায়। ওখানে গিয়ে দেখি ওই হোটেলে ইমরানের বন্ধু উজ্জ্বল এবং তার আপন বড় ভাবি এবং অচেনা আরো কয়েকজন উপস্থিতিতে একটা কাগজ এনে আমাকে সই করতে বললে আমি সই করি। সই করার পর ইমরান বলে এখন থেকে আমরা স্বামী-স্ত্রী। ইমরান আমাকে বাড়িতে না নিয়ে মনোহর বাজার এর কাছে লাল মিয়া সরদারের বাড়িতে বাসা ভাড়া করে তিন মাস সংসার করে। ওই বাসা বাড়িতে যাওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন কৌশলে আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য মাদারীপুর হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যায়। আমার পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ইমরান আমাকে মাঝেমধ্যে টর্চার করতো। পরবর্তীতে আমাকে ফাঁকি দিয়ে দুধের সাথে ওষুধ মিশিয়ে আমার পেটের বাচ্চাটি  নষ্ট করে ফেলে। ইমরানের আচরণ সন্দেহজনক মনে হলে আমি ওই হোটেলে গিয়ে জানতে পারি আমাদের বিয়েটি ছিল ভুয়া।যখন আমি জানতে পারলাম বিয়ের নামে মিথ্যে নাটক করছে আমার সাথে তখন আমি রাগে কষ্টে বাড়ি চলে আসি। বাড়িতে আসার কয়েক দিন পর ইমরান আমাকে ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে ঢাকায় নিয়ে যায়। ঢাকায় ইমরান আমাকে বিক্রি করার চেষ্টা করলে এ বিষয়টি আমি গোপনে জানতে পেরে লোকজনের সহযোগিতায় পালিয়ে বাড়ি চলে আসি। পরে আমার মাকে সম্পূর্ণ বিষয়টি খুলে বলি।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে ইমরান বিয়ের নামে নাটক সাজিয়ে প্রতারণা করে ওই কিশোরীকে দীর্ঘদিন ধর্ষণ করে। গত ১২ ই মার্চ এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার মা পালং মডেল থানায় ওই ধর্ষণকারী ইমরানের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগ পত্রটি চিকন্দী পুলিশ ফাঁড়িতে চলে আসলে চিকন্দী ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক এসআই বিশ্বজিৎ ও সাবেক জেলা যুবদলের নেতা এবং অ্যাডভোকেট হেলাল আকন, ধর্ষণকারী ইমরানের অভিভাবকগণ নিয়ে চিকন্দী ফাঁড়ির অফিস কক্ষে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার বিনিময় এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষতিপূরণ বাবদ ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ও তার পরিবারকে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকার প্রস্তাব দিলে ওই কিশোরী ও তার পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করে।

ধর্ষণকারীর বড় ভাই হান্নান মাদবর গণমাধ্যমকে মুঠোফোনে বলেন, আমরা অ্যাডভোকেট হেলাল আকন ও চিকন্দী ফাঁড়ির এসআই বিশ্বজিৎ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ১  লক্ষ ২০ হাজার টাকার বিনিময় এই বিষয়টিকে মীমাংসা করেছি। ৫০০০/ টাকা জমা দিয়েছি এবং বাকি টাকা দু'একদিন পরে দিয়ে দিব।

জোরপূর্বক সালিশের মাধ্যমে ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার পরিবারের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পেরে এ বিষয়টিকে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার কে অবগত  করা হলে গত ৩০ মার্চ চিকন্দী ফাঁড়ির কর্তব্যরত পুলিশের মাধ্যমে অভিযুক্ত ধর্ষণকারী ইমরান মাদবর (২৫) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। 

চিকন্দী পু‌লিশ ফাঁ‌ড়ির উপ-প‌রিদর্শক (এসআই) বিশ্ব‌জিৎ প্রশিক্ষণ থাকায় মু‌ঠো‌ফো‌নে যোগা‌যোগ করা হ‌লে ব‌লেন, ওই কি‌শোরীকে মারধ‌রের অ‌ভি‌যো‌গের ভি‌ত্তি‌তে দুই পক্ষ‌কে নি‌য়ে বসা হ‌য়ে‌ছিল। সেখা‌নে মিমাংসার কোন কথা হয়‌নি। ওই কি‌শোরী‌কে মারধর কর‌বে না ব‌লে দু্ই পক্ষ মিমাংসা হওয়ায় মামলা দা‌য়ের ক‌রে‌নি।

চিকন্দী পু‌লিশ ফাঁড়ির প‌রিদর্শক আজিজুর হক হাওলাদার গণমাধ্যমকে ব‌লেন, মিমাংসার কোন ঘটনা আমার ফাঁ‌ড়ি‌তে হ‌য়ে‌ছে ব‌লে জানা নেই। ত‌বে কিশোরীর অ‌ভি‌যো‌গের ভি‌ত্তি‌তে গতকাল রা‌তে আসামি ইমরান‌কে গ্রেফতার করা হ‌য়ে‌ছে ও ভিক‌টিম‌কে মে‌ডি‌কেল প‌রীক্ষা জন্য সদর হাসপাতা‌লে পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। বর্তমা‌নে আসামি পালং থানায় র‌য়ে‌ছে। এছাড়া মামলার প্রস্তু‌তি চল‌ছে ব‌লেও জানায় ওই পু‌লিশ কর্মকর্তা।