রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ৭ ১৪৩২   ০১ রজব ১৪৪৭

নানা সমস্যায় দিরাই-শাল্লা’র ৪ গ্রামের নারী-শিশুরা

শাল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২১ মঙ্গলবার

সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লা উপজেলার এক এলাকাবর্তী ৪টি গ্রামের নারী ও শিশুরা খাদ্যের অভাবসহ রয়েছে নানান সমস্যায়। জানা যায়, ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে গত ১৭মার্চ শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত নোয়াগাঁও গ্রামে দিরাই উপজেলার নাচনী, চন্দ্রপুর, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের কিছু কট্টরপন্থি লোকজন হামলা করে। এতে নোয়াগাঁও গ্রামের ৯০টি মতো বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ নিয়ে গত ১৮মার্চ রাতে শাল্লা থানায় দু’টি মামলা হলে দিরাই উপজেলার নাচনী, চন্দ্রপুর, ধনপুর ও শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের পুরুষেরা গ্রেফতার এড়াতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরইমধ্যে ঘটনার মূলহোতা স্বাধীন মেম্বরসহ ওইসব গ্রামের ৪০জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ প্রশাসন আটক করে জেলে পাঠিয়েছে।  
ওইসব গ্রামের পুরুষেরা পালিয়ে থাকায় তাদের পরিবারে দেখা দিয়েছে খাদ্যের অভাবসহ নানা সমস্যা। সরজমিনে দেখা যায়, গ্রামগুলো রয়েছে পুরুষ শূন্য। বাড়িতে দেখা যায় শুধুমাত্র নারী ও শিশুদের। পুলিশের ভয়ে তাদের বাড়িতে আসছে না কোনো আত্মীয়-স্বজনও।

নাচনী গ্রামের রত্না বেগম বলেন, আমার ঘরে কিছু হাঁস-মুরগী ছিল তা বিক্রি করে এ কয়দিন চলছি। পরে কি করব জানি না। আমার স্বামী কোথায় পালিয়ে আছে তাও আমি জানি না। ওইগ্রামের আছিয়া খাতুন বলেন, আমরার কেউ ইতাত গেছইনা, তারা বাড়িতেও আছলানা। পুলিশের ডরে বাড়ি ছাইরা গেইছন। আমরা বড় অভাবের মাঝে আছি।

নোয়াগাঁও হামলার মূল হোতা মোঃ শহীদুল ইসলাম স্বাধীনের মায়ের সাথে আলাপ হলে তিনি বলেন, আমার ছেলে স্বাধীন অপরাধী হলে তার বিচার হোক। কিন্তু আমার নিরপরাধ ছেলে আলফু মিয়া বাড়ির বাইরে মারা যায়। তার লাশ নিয়া বাইরের ৫-৬জন মানুষ আসে। পরে চেয়ারম্যানের কথায় তারা আমার ছেলের লাশ পুরান ধারি ও পুরান বাঁশ দিয়া দাফন করে। তিনি কেঁদে কেঁদে আরো বলেন, আমার ছেলেরে মাটি দেয়ার মানুষ পাইলাম না।

এদিকে ওইসব গ্রামের মহিলারা জানান, আমরা টাকা-পয়সার অভাবে খেতে পারছি না, বাচ্ছাদের অসুখে ঔষধ কিনতে পারছি না। আমরা অনেক বিপদ ও সমস্যা আছি। গত ২৫মার্চ নোয়াগাঁও গ্রামের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এসেছিলেন। আমরা তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেখা করতে পারিনি। আমাদের সমস্যাগুলোও সরকারকে জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। আপনাদেরকে বলছি, আপনারা আমাদের সমস্যাটাও দেখেন। আমরা অবলা নারী ও আমাদের শিশুরা খাদ্যের অভাবসহ চিকিৎসার অভাবে রয়েছে এবং রাতের বেলাতে আমরা অনিরাপদ রয়েছি।

অন্যদিকে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বলছে আমরা নিরপরাধ কাউকে গ্রেফতার করছি না। ঘটনার সাথে জড়িতদেরকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সনাক্ত করে গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করছি।