শিউলি আফছার-এর প্রবন্ধ ‘মোর উড়িবার শুকতি নাহি’
তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট
প্রকাশিত : ০৬:৪৫ পিএম, ১১ নভেম্বর ২০২০ বুধবার
আমি একসময় বাংলাদেশের শায়ান এবং আনুশেহ এর গানের খুব ভক্ত ছিলাম। এখনো শুনি। খুব কম শোনা হয় সময়ের অভাবে।আপনি যদি আমায় প্রশ্ন করেন, সাংস্কৃতিক পরিবেশ একজন সংবেদনশীল মননের জন্য কতোটা জরুরী আমি লিখে বা বলে বোঝাতে সক্ষম হবোনা! এটি অনুভূতি দিয়ে বুঝে নিতে হবে।এটা বুঝতে অনেক উদারমনা হতে হবে!
আমরা লেবাসের উপর এতো বেশী বুঝে না বুঝে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মানুসিক স্বাস্থ্য কে হুমকির মধ্যে ফেলে দেই! অনুশেহর লালনের সেই কথা নামায আমার হইলোনা আদায়,,, খন্নাসের,,। শুধু হেজাব পড়লেই আপনি জান্নাতি হতে পারবেন না! হুয়াল আউয়ালু হুয়াল আখিরু হুয়াল জাহিরু হুয়াল বাতিনু,,৷ জাহিরু বা জাহিরের দিকে আমরা বেশী ফোকাস করতে গিয়ে আমাদের ইনার সাইড বা বাতিন বা অন্তর খালি পড়ে বিরান হয়ে যাচ্ছে! জেনে না জেনে যত্র তত্র যারে তারে আজকাল ফতোয়া দিতে দেখা যায়।তরুন জীবনে ডিপ্রেশনে ভোগা মোটিবেশনাল স্পিকার ইয়াসমিন মুজাহেদ বলছেন, ধীরে ধীরে! লেবাসের চেয়ে ক্লালবুন সেলিম বা ভিতরের অন্তর কে সুস্থ করার দিকে অধিক মনোনিয়োগ করার জন্য! আমরা যেনো পায়াস হতে গিয়ে অহংকারী আর অসুস্থ হয়ে না যাই! ভারসাম্য! সবকিছুতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলি! আমরা মানুষ হয়ে বেচেঁ থাকি! আমাদের নিখুঁত ফেরেশতা করে আল্লাহ প্রেরণ করেন নাই! আমাদের তিনি মানুষ হতে বলেছেন! আমাদের বার বার ক্ষমা চাওয়া উনার কাছে খুবই প্রিয়!আমাদের সমাজে চলাফেরা করে, কাজের জন্য ছড়িয়ে পড়তে বলা হয়েছে!
লোকের কাছে ভালো হওয়ার অসভ্য প্রতিযোগিতা আর শো অফ আমাদের অন্তর কে মেরে ফেলেছে। আমরা মনের কথা কান পেতে শোনার সময় পাইনা।বাতেন কে আমরা ভুলে বসে আছি। আমরা সিনড্রেলা হতে চাই! যে পারটিতে সুন্দর পোশাক পড়েছিল বলে একজন রাজকুমার তাকে পছন্দ করেছিল! আমাদের সুখ খুজে নেয়ার জন্য পোশাক, রাজকুমার, ইত্যাদি বস্তুগত জিনিসের দিকে ঝুকে যাওয়ার ম্যাসেজ শেখানো হয়েছে! আমরা আকাশ, পাখি,শিশির, নদী হতে সুখ নেয়া ভুলে গেছি।ফলে মানুষের পুরস্কার আর তিরস্কার আমাদের সংবেদনশীল মনকে আনন্দিত করে আবার ভেংগে চুরমার করে তোলে!হয় আমরা চরম! না হয় পরম! কিন্তু আমাদের মাঝখানে থাকতে বলা হয়েছে চলাফেরায়!
আমি পাবনা মানসিক হাসপাতালে গিয়েছিলাম।আমার রুমমেইট! তার উসিলায় আল্লাহ সেই জায়গা আমাকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন! উহ! কী বিষন্ন সেই চিত্র! আমি অনেক বছর তাদের প্রতি সেই অত্যাচার চোখ হতে মুছে ফেলতে পারিনাই! কেউ তাদের দেখতে যায়না! খাবারের মান! তাদের সেবার মান! কী কস্টকর সেই বেচেঁ থাকা! আমার সংবেদনশীল মনে আজো কস্ট দেয়! কয়েকজন রোগীর মুখ এখনো চোখ বন্ধ করলে স্পষ্ট চোখে ভেসে উঠে।
আমার এক দাদা হজ্ব করে আসার পর! সবাই তাকে একা ঘরে রেখে দিল!ভাবটা এমন! উনি সারাদিন অই ঘরে বসে থাকলে সবার জান্নাত কনফার্ম! আসলে রিলিজিয়ন নিয়ে গভীর পড়াশোনার অভাবে এই সমস্যা! সব মানুষকে এক রকম মানসিকভাবে বানানো হয়নি! কাউকে বোঝাতে হয়! আবার কাউকে বুঝতে হয়! এইটা হারাম! অইটা হারাম! বলতে বলতে আমরা আল্লাহ দয়ালু! আল্লাহ তাওবা কবুলকারী! আল্লাহ স্নেহময়! আল্লাহ আমাদের জন্য প্রতিপালক! এগুলো বলতে ভুলে যাই! আমরা ফতোয়া দিতে দিতে এতো রাগী আর কঠোর হয়ে যাই! হাসি যে ইসলামে একটা চ্যারিটি পুন্য! সেটা বলতে ভুলে যাই! আমাদের চারিপাশে এমনিতেই কতো সমস্যা! কতো কাঠিন্য! সম্পর্কের জটিলতা! তার মধ্যে হারাম! হারাম! বলতে বলতে অন্যকে সুযোগ না দিয়ে! তাকে বোঝার চেস্টা না করে পাগল বানিয়ে ফেলি! লেবাসধারী হলেই জান্নাতে চলে যাবেন, এই গ্যারান্টি কে দিলো! সৌদি জেলে চোর ডাকাত যা দেখবেন, সবার লেবাসী মাশাল্লাহ , তাই বলে তারা পবিত্র! মোটেও না! কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেবাস ম্যান্ডাটরি নয়!
আমরা উপাসনালয়ে নিজের যে চেহারা শো করি, ঘরে এসে স্ত্রী আর পরিবারের সাথে প্রকৃত সুন্নত পালনে সম্পুর্ণ অসফল হই! খাচার পাখি সংবেদনশীল নরম মনটারে আমরা উড়তে দেইনা! যেকোনো মেধাবী মানুষ! কিছু সময় নিজের মতো থাকবেন! চুপ থাকবেন! এটা খুবই স্বাভাবিক! সারাক্ষণ উড়ে বেড়ায় যে পাখি! সেও কিছু সময় সবার হতে আলাদা গাছের কোনে বসে থাকবে! এইটা খুবই স্বাভাবিক! মানুষের ক্বালব সম্পর্কে বলা হয়েছে,এটি প্রতি ২৪ ঘন্টায় মুহুর্তে মুহুর্তে পরিবর্তন হতে থাকে! সকালে যদি কেউ বিলিবার হয় রাতে নন বিলিবার হতে পারে! আল্লাহ তাকে চালনা করেন! এই জন্য নিয়ন্ত্রণ আল্লাহর হাতে! আমরা শুধু চেস্টা করে যেতে পারি! আমাদের স্বকীয়তার পরিবর্তন ঘটানো সবার ক্ষেত্রে সব সময় খুব ভালো কাজ না!
আমরা সিক্স প্যাকে মনোযোগী হয়েছি ঠিক আছে কিন্তু সিক্স ইন্দ্রিয় যেনো অবহেলায় পড়ে না থাকে! আপনি ফুল প্যান্ট পড়ছেন ঠিক আছে!কিন্তু যে হাফ প্যান্ট পড়ে তাকে নিয়ে কটু করার, আপনি কে? হেকমত এর সাথে কথা বলুন! উপদেশ মাতাব্বরি পরিহার করে সংবেদনশীল মন গুলিকে বোঝার চেস্টা করি! সব মানুষের আত্না একটা পবিত্র আত্না! তাকে সম্মান করি! শ্রদ্ধা করি! যে যেই বিশ্বাস এর অধিকারী হইনা কেনো! রুহ একজনের সৃস্টি! সব রুহের যত্নে সহযোগিতা করি!
সব রুহ এক নয়! কেউ বনের! কেউ ধনের।কেউ মনের! কেউ উড়ে! কেউ ঘুরে!কেউ পুড়ে! কেউ বসে বসে ভাবে! সব রুহের দুনিয়ায় সমানভাবে উড়িবার শক্তি থাকেনা! সে উড়িতে চাহেনা!
