মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৪ ১৪৩০   ০৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭১

৭ বছর আগের লোভ ও ভুলের মাশুল গুনতে হল বৈরুতকে!

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২০  

৭ বছর আগের একটা ভুলের ভয়াবহ মাসুল গুনতে হল লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে। ২০১৩ সালে যদি রাসায়নিক বোঝাই রাশিয়ান কার্গো জাহাজ বৈরুত বন্দরে অনাকাঙ্খিত ভাবে এসে না ভিড়ত, তাহলে আজ এই চরম বিপর্যয় ঘটত না। বৈরুত বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে এমনই বিস্ময়কর তথ্য উঠে আসছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।

২০১৩ সালে বৈরুত বন্দরে ভেড়া ওই জাহাজটির নাম রোসাস। তার ক্যাপ্টেন বরিস প্রোকোশেভ জানিয়েছেন, 'সেদিনের লোভের জন্যই আজ এমন ঘটনা ঘটল।' তার দাবি, অতিরিক্ত মাল সংগ্রহ করার জন্য লেবাননে থামার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল তাদের। ২৭৫০ টন বিস্ফোরক রাসায়নিক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিক যাচ্ছিল রোসাস। আচমকাই নির্দেশ আসে, জাহাজের মুখ ঘুরিয়ে বৈরুত বন্দরে ভেড়াতে হবে। কারণ সেখান থেকে কিছু রাস্তা নির্মাণের সামগ্রী সংগ্রহ করে, মোজাম্বিক যাওয়ার পথে জর্ডনের আকাবা বন্দরে নামাতে হবে তাদের। মোজাম্বিকে পৌঁছনোর কথা ছিল ওই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।

অপরিকল্পিত ভাবে জাহাজ ভিড়িয়ে সমস্যা তৈরি করে বৈরুত বন্দর। কারণ সেখান থেকে সামগ্রী সংগ্রহ করা নিয়ে আইনি জটিলতার মুখে পড়ে জাহাজটি। শেষমেশ বৈরুত বন্দরেই আটকা পড়ে যায় রোসাস! ৭০ বছরের প্রোকোশেভ বলছিলেন,'অসম্ভব একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়। গোটা জাহাজ আটকা পড়ে যায় বন্দরে। আমি কিছুতেই রাজি হইনি জাহাজ ছেড়ে চলে আসতে।'

কিন্তু শেষমেশ লেবাবন কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে আটকেই রেখে দেয়। পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হয় জাহাজে ভর্তি সেই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। ১১ মাস এভাবেই কাটে। সমাধান হয়নি পরিস্থিতির। ফলে বাধ্য হয়ে ওই জাহাজটিকে বৈরুত বন্দরে রেখেই চলে যান ক্যাপ্টেন ও নাবিকেরা। নইলে, তাদের গ্রেপ্তার করা হতো।

পরে জানা যায়, জাহাজ থেকে ওই বিপুল পরিমাণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নামানো হয়। রাখা হয় বন্দরের ১২ নম্বর হ্যাঙ্গারে। সেই হ্যাঙ্গারটি মূল শহরে ঢোকার জন্য ব্যস্ততম সড়কের ঠিক ধারেই অবস্থিত। সমস্ত মাল নামানোর পরে ফিরিয়ে দেওয়া হয় জাহাজটি।

এর পরের বছর, ২০১৪ সালের ২৭ জুন লেবানন কাস্টমসের পরিচালক শাফিক মেরহি এই বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য রাশিয়ার কার্গো কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি পাঠান। এর পরের তিন বছরে আরো পাঁচটি চিঠি দেওয়া হয়। মূলত তিনটি প্রস্তাব দেওয়া হয় এই কার্গো জাহাজের মালিকের কাছে। প্রস্তাবগুলো হল, ১. নাইট্রেট সরিয়ে নেওয়া, ২. লেবাননের সেনাবাহিনীর কাছে পুরোটা হস্তান্তর করা, ৩. লেবাননের বেসরকারি বিস্ফোরক কম্পানির কাছে বিক্রি করে দেওয়া।

অভিযোগ, এই চিঠিগুলোর কোনো জবাব আসেনি কখনো। শেষমেশ ওই হ্যাঙ্গারেই থেকে যায় পুরো রাসায়নিকের স্তূপ। ৬ মাস আগেও বন্দরের গুদামের সেই ১২ নম্বর হ্যাঙ্গার পরিদর্শন করে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, কার্যত ‘ভাসমান বোমা’ মজুত করা রয়েছে বৈরুতে। এটা যদি সরিয়ে না নেওয়া হলে পুরো বৈরুত শহর উড়ে যেতে পারে।

শেষমেশ সেটাই হল। গত মঙ্গলবার, সেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ হওয়ার সাত বছর পরে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। আগুন লেগে গেল বিপুল পরিমাণ ‘ভাসমান বোমা’য়। ফলস্বরূপ ছারখার হয়ে গেল গোটা এলাকা। অন্তত ১৫০ জন প্রাণ হারালেন, আহত হলেন ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। কমপক্ষে ৩ লাখ মানুষ গৃহহারা। ধসে পড়েছে বড় বড় বহুতল ভবন। বৈরুতের বন্দর এলাকা ছিন্নভিন্ন করে দিল সাত বছর আগের একটি ভুল পদক্ষেপ।

গোটা ঘটনা সামনে আসার পরে কার্যত ক্ষোভে ফুঁসছে বৈরুতবাসী। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, কোন বিদেশী হামলাও নয়। শুধুমাত্র প্রশাসনের চূড়ান্ত একটা গাফিলতির কারণে বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে গেল বৈরুতে। এর ফলে সরকারের ওপরে ক্ষোভ বাড়ছে লেবানিজদের। রক্তের দাগ না শুকাতেই সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে তারা।

এই বিভাগের আরো খবর