শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৬১

৪র্থ স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০১৯  

৪র্থ স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন

৪র্থ স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন


কুমিল্লায় ২য় স্বামীর দেয়া বাড়ীতেই ৪র্থ স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন স্ত্রী নাসিমা আক্তার। সোমবার রাত ৯টায় নগরীর শাকতলা থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।


নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ১৫ বছর পূর্বে নোয়াখালী জেলার চাটখীল উপজেলার জায়েকবাজার এলাকার প্রবাসী আলমগীর হোসেনের সাথে বিয়ে হয় কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের মগের কলমিয়া গ্রামের আলী হোসেনের কন্যা নাসিমা আক্তারের। নাইমুর রহমান অনি নামে এ সংসারে এক ছেলেও হয়। কিছুদিন পর আলমগীর হোসেন কে তালাক দিয়ে তার আপন ছোট ভাই প্রবাসী শহীদ উল্যাহ কে বিয়ে করে নাসিমা। এ সংসারেও নাজিমুর রহমান অমি নামে এক ছেলে আছে। বিয়ের সময় শহীদ উল্যাহ স্ত্রী কে ৩০ ভরি স্বর্ণলংকার উপহার দেয়।

দাম্পত্য সুখের করতে নাসিমা আক্তারের নামে কুমিল্লা শাকতলায় সাড়ে তিন শতক জমি ক্রয় করে একটি টিনসেট বাড়ী নির্মাণ করে দেন এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে দেন। শহীদ উল্যাহ প্রবাসে চলে যাওয়ার সুযোগে লালমাই উপজেলার ভুলইন দক্ষিণ ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়তুলা গ্রামের রব্বন আলীর ছেলে হুমায়ুন কবিরের সাথে নাসিমা অবাধে চলাফেরা শুরু করে। একপর্যায়ে শহীদ উল্যাহ কে তালাক দিয়ে হুমায়ুন কে বিয়ে করে নাসিমা।

অবশ্য হুমায়ুনের অন্য একটি সংসারও ছিল। এরইমধ্যে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নাসিমার সাথে পরিচয় হয় বরুড়া বাজারের মেহেদী ফ্যাশনের মালিক ও বরুড়া উপজেলার আগানগর গ্রামের মেহেদী হাসানের। হুমায়ুনের সহযোগিতায় নাসিমা নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা কাবিনে মেহেদীকে বিয়ে করে।

পরে নাসিমার বহুবিবাহ ও হুমায়ুনের সাথে অবৈধ সম্পের্কের বিষয়টি জানতে পেরে মেহেদী যোগাযোগ বন্ধ দেয়। এর জেরে নাসিমার যৌতুকের মামলায় জেলে যেতে হয় মেহেদীকে। পরে মেহেদীর পরিবারের হস্তক্ষেপে নাসিমা মামলা প্রত্যাহার করে মেহেদী কে জামিনে মুক্ত করে। এরপর নতুন করে দাম্পত্য শুরু করে। সালমান জাহিদ ত্বকী নামে এ সংসারে দেড় বছরের একজন শিশু সন্তানও আছে। অমি নোয়াখালীর পিতার বাড়ীতে থাকে। অনি মায়ের বাসায় থেকে  শাকতলা হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। ত্বকী মা বাবার সাথে থাকত।

২১ জানুয়ারী দুপুর ২টায় স্কুল থেকে ফিরে এসে অনি দেখে বাড়ীর গেইটে তালা ঝুলছে। মা-বাবার মোবাইল বন্ধ পেয়ে সন্ধ্যায় অনি বাড়ীর দেয়াল টপকে খোলা জানালা দিয়ে গেইটের চাবি নেয়। এরপর গেইট খোলে ভিতরে প্রবেশ করে দেখে মায়ের মৃত দেহ কম্বলে মোড়ানো।

মেহেদী হাসান ও  ত্বকী নেই। খবর পেয়ে রাত  ৮টায় কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

রাত সাড়ে ৯টায়  ইপিজেড পুলিশ ফাঁিড়র ইনচার্জ আজিজুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সুরতহাল শেষে লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাসিমার এক প্রতিবেশী বলেন, মূলত ৩য় স্বামী হুমায়ুনের সহযোগিতায় গত কয়েকবছর ধরে নাসিমা অনেক বেপরোয়া হয়ে পড়ে। প্রেমের অভিনয় করে বিভিন্ন বড় লোকের ছেলেদের বিয়ের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত। আদায়কৃত এসব টাকা হুমায়ুনের নিকট জমা রাখত। তেমনি একটি ঘটনায় ৩০ লক্ষ টাকা কাবিনে নাসিমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় মেহেদী।

নিহতের ভাই মনির হোসেন বলেন, বাড়ীর দক্ষিণ-পূর্ব রুমের বক্স খাটে নাসিমা আক্তারের লাশ কম্বল দিয়ে ডেকে রেখেছে খুনিরা। তার মাথা পূর্ব দিকে এবং পা পশ্চিম দিকে ফিরানো। তার গলায় তার দিয়ে পেছানোর চিহৃ রয়েছে। মেহেদীর ছোট ভাই তুগা ফোন করে জানিয়েছে ত্বকীকে কেউ একজন বরুড়ায় পৌছে দিয়েছেন।

নাসিমার বড় বোনের স্বামী  লালমাই উপজেলার আটিটি বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ, নাসিমাকে গল্যায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেছে। আমরাও মেহেদী হাসানের ফাঁসি চাই।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মামুন অর রশিদ পিপিএম বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহতের ৪র্থ স্বামী মেহেদীকে মূল আসামী করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার রুজু হয়েছে।

 

 

এই বিভাগের আরো খবর