শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৯৯

১৭০৪৩ জনের হাসির মাঝে ৩৯৬ শিক্ষার্থীর কান্না

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শতভাগই যে পাস করছে, তা আগে থেকেই জানেন পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। তাই প্রকাশিত ফলে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জিপিএ ৫ প্রাপ্তি। ২০১৯ সালে যেখানে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন, ২০২০ সালে পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। এর মধ্যে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পেয়েও এইচএসসিতে পেয়েছে ১৭ হাজার ৪৩ জন। তবে শতভাগ পাস ও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেলেও হতভাগা পাওয়া গেছে ৩৯৬ জন, তারা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েও এবারের এইচএসসিতে পায়নি।

সাধারণত প্রতিবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে প্রকাশিত হয় উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল। কিন্তু কভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়াই সম্ভব হয়নি। জেএসসির ২৫ শতাংশ এবং এসএসসির ৭৫ শতাংশ গড় নম্বর বিবেচনায় প্রায় ছয় মাস পর গতকাল শনিবার এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করা হয়েছে।
 
জানা যায়, আগের দুই পরীক্ষার ভিত্তিতে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরিতে বিষয় ম্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর জেএসসিতে যেসব বিষয় থাকে, এসএসসিতে গিয়ে বিষয় আরো বাড়ে। তবে এইচএসসিতে আবার ওই দুই পরীক্ষার অনেক বিষয়ের মিল পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে সমগোত্রীয় বিষয়গুলোকে মিল করে এর গড়ের ভিত্তিতে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আর এই গড় করতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যারা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পায়নি তারা এইচএসসিতে পেয়েছে। আবার খুবই সামান্যসংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, যারা জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে কিন্তু এইচএসসিতে পায়নি।

নাম প্রকাশ না করে একজন শিক্ষার্থী জানায়, জেএসসিতে তার জিপিএ ছিল ৪.৮০ আর এসএসসিতে ছিল ৪.৮৩। যেহেতু কভিড-১৯-এর কারণে পড়ালেখা ঠিকমতো হয়নি, তাই তার এইচএসসির ফল আগের মতো ভালো হবে না বলেই ধারণা ছিল তার। তবে সে এবারের এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনা করে এইচএসসিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। জিপিএ উন্নয়ন ও আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য বিষয় ম্যাপিং করায় জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন জিপিএ ৫ পায়নি। যখন বিষয় ম্যাপিং করা হয়েছে, তখন জিপিএ ৫-এর জন্য যে নম্বর দরকার ছিল, তা তারা পায়নি। আবার বিষয়ভিত্তিক ম্যাপিং করায় অনেকে আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পেলেও এবার সেটি অর্জন করেছে। জিপিএ ৫ না পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেশি।

জানা যায়, জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ না পেলেও ২০১৭ সালের এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ছয় হাজার ৯৭৬ জন, ২০১৮ সালে পেয়েছিল চার হাজার ১৫৭ জন এবং ২০১৯ সালে আট হাজার ৫৭০ জন। তবে ২০২০ সালে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪৩ জন।

এ ছাড়া জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেলেও ২০১৭ সালের এইচএসসিতে পায়নি ১৭ হাজার ৩৭১ জন, ২০১৮ সালে পায়নি ৫২ হাজার ৬৩৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৮৬৫ জন। তবে এবার সেই সংখ্যা ৩৯৬ জন।

ঢাকা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর জানান, আগের দুই পরীক্ষায় যারা চতুর্থ বিষয়ের জিপিএ মিলিয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছিল, বিষয় ম্যাপিংয়ের কারণে তাদের কেউ কেউ এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফলে জিপিএ ৫ পায়নি।

জানা যায়, ২০২০ সালের ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল দুই লাখ ৬৬ হাজার ৫০১ জন। এর মধ্যে এক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ এক লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ জন, দুই বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫৪ হাজার ২২৪ জন এবং সব বিষয়ে অনুত্তীর্ণ ৫১ হাজার ৩৪৮ জন। এর বাইরে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী ছিল তিন হাজার ৩৯০ জন। মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ হাজার ৭২৭ জন, যাদের সবাই এবার ভালো জিপিএ নিয়েই উত্তীর্ণ হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর