শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৮০

সাকিবের শাস্তি ১ বছর কমালো আইসিসি

আমিনুল ইসলাম শান্ত

প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০১৯  

ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও তা গোপন রাখার অভিযোগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে আইসিসি। তবে ওই অপরাধ এবং প্রদেয় শাস্তি সাকিব স্বীকার করে নেয়ায় তার সে শাস্তি ১ বছর স্থগিত করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) আইসিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে নিজের ওপর আরোপিত ওই শাস্তি মেনে নেন সাকিব। একইসঙ্গে আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে অংশ নেয়ারও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। যার প্রেক্ষিতেই সাকিবের শাস্তি ১ বছর শিথিল করেছে আইসিসি। এর ফলে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর পুনঃরায় সবধরনের ক্রিকেটে ফিরতে পারবেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।

সাকিবের ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা অশনি সংকেত। কেননা, আসন্ন ভারত সফর, এমনকি ২০২০ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও পাওয়া যাবে না বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে। তবে বিসিবি সূত্র বলছে, আইসিসির এই শাস্তির বিরুদ্ধে সাকিবের এখনও আপিল করার সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে শাস্তি কমতেও পারে।

এদিকে আইসিসিকে সাকিব বলেন, ‘আমি সত্যিই খুব মর্মাহত। যেই খেলাটাকে এতো ভালোবাসি সেখানে নিষিদ্ধ হলাম। তবে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব আইসিসিতে না জানানোয়, আমি আমার নিষেধাজ্ঞা মেনে নিচ্ছি। আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিট খেলোয়াড়দের দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রাণপণে লড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি আমার অংশটা ঠিকঠাক পালন করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের সব খেলোয়াড়ের মতো আমিও চাই ক্রিকেট খেলাটা যেন দুর্নীতিমুক্ত থাকে। সামনের দিনগুলো আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে তাদের দুর্নীতিবিরোধী প্রোগ্রামে কাজ করতে আগ্রহী। আমি এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমার মতো ভুল যেন কোনও তরুণ খেলোয়াড় ভবিষ্যতে না করে।’

এ বিষয়ে আইসিসির মহাব্যবস্থাপক অ্যালেক্স মার্শাল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, 'সাকিব আল হাসান একজন অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। আইসিসির করা অনেক দুর্নীতি বিরোধী প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলো সে। সকল নিয়মকানুন ভালোই জানা রয়েছে তার। তবুও সে তিনটি প্রস্তাবের কথা গোপন রেখেছে। এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবেই জানানো উচিৎ ছিল তার।'

আইসিসির মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, 'সাকিব তার নিজের ভুলগুলো মেনে নিয়েছে এবং তদন্তের স্বার্থে সম্পূর্ণ সহায়তা করেছে। এমনকি ভবিষ্যতে অ্যান্টি করাপশন ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে। যাতে করে তরুণ খেলোয়াড়রা এ ভুল করতে না পারে। আমি তার এই প্রস্তাবে খুশি।'

এর আগে আইসিসি তাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সাকিবের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানায়। তিন তিনটি ম্যাচে সাকিবের কাছে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল বলে জানতে পেরেছে আইসিসি এবং সে সব বিষয়ে তারা প্রমাণও সংগ্রহ করেছে।

আকসুর ধারা ২.৪.৪ আর্টিকেলের মধ্যেই তিনটি অপরাধ করেছিলেন সাকিব। যেগুলো হচ্ছে-
১. ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়েকে নিয়ে বাংলাদেশের যে ত্রিদেশীয় সিরিজ হয়েছিল কিংবা ২০১৮ আইপিএলে প্রথম ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পান সাকিব। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি আইসিসির অ্যান্টি করাপশন ইউনিটকে কোনো কিছুই জানাননি।

২. একই ধারার অধীনে অপরাধ : ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ত্রিদেশীয় সিরিজের সময়ই আরো একটি ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসিকে অবহিত করেননি।

৩. ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ এবং কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যকার ম্যাচেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু সে বিষয়েও তিনি আইসিসি কিংবা সংশ্লিষ্ট দুর্নীতি দমন সংস্থাকে কিছুই জানাননি।

বেশ কয়েকদিন ধরেই টালমাটাল বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গণ। ১১ দফা দাবিতে হঠাৎই ধর্মঘট ডেকে বসেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা। খেলোয়াড়দের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন সাকিব। চাপের মুখে ক্রিকেটারদের প্রায় সব দাবি মেনে নেয়ার অঙ্গীকারও করে বোর্ড। স্বাভাবিকভাবেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। এরমধ্যেই সাকিবের ওপর নিষেধাজ্ঞার খবর এলো।

এই বিভাগের আরো খবর