শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৯৭৮

সল্প ছিলো যার সময়

সাজেদা পারভিন সাজু

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২০  

শাকিল ভাইকে চিনতাম আগে থেকেই কিন্তু কখনো কথা হয়নি । একদিন ধানমন্ডি ৩/এ তে বাইরে দাড়িয়ে কথা বলছি আশরাফুল আলম খোকন ভাই আমি আরো অনেকেই ছিলো । শাকিল ভাই তখন অফিসে ঢুকছেন খোকন ভাইকে দেখে ডাক দিলেন । খোকন ভাই চলে গেলেন । একটু পরে খোকন আমাকে বলছেন এই সাজু এই দিক আসেন । আমি কাছে গেলাম তখন বলছেন উনাকে চিনেন ? আমি বললাম চিনি, উনি শাকিল ভাই । শাকিল ভাই তখন বলছেন ‘ আমি তো নিভৃতচারী আমাকে মানুষ চেনে’! খোকন ভাই তখন বলছেন আপনি কোন কিছু জানতে হলে উনার কাছ থেকে জেনে নিতে পারে । তখন শাকিল ভাই বললেন আমার নাম্বার আছে ? বললাম না । নাম্বারটা বললেন আমি সেভ করে নিলাম । আমাকে একটা কল দেন । দিলাম কল , বললাম আমি সাজু উনি বললেন আমি আপনার নাম জানি বাড়ি কোথায় সেটাও জানি । আমি খুব অবাক হলাম আমার মতো একটা জুনিয়র রিপোর্টারের নাম,বাড়ি সবই জানেন !
এরপর শাকিল ভাই বললেন চা খাবেন ? বললাম খাওয়া যায় । একসাথে বসে চা খেলাম, অনেক বিষয়ে কথা হলো বিশেষ করে তখনকার আন্দোলনের নিয়ে। এরই মধ্যে ব্রিফিং শুরু হবে জলিল ভাই ব্রিফ করবেন তাই এপাশে চলে এলাম ।

বেশীর ভাগ সুধা সদনেই শাকিল ভাইয়ের সাথে বেশী দেখা হতো । একদিন আমাদের নিউজ এডিটর শহিদ ভাই ( মাসখানেক আগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ????)বললেন, সাজু তুমি শাকিলকে চেনো নম্র, ভদ্র ছেলেটা ? আমি বললাম চিনি কেন শহিদ ভাই ? শহিদ ভাই বললেন, আমার কথা শাকিলকে বলো । তখন আমার আমার মাথায় আসছে না শহিদ ভাই তো এ ঘরনার আর শাকিল ভাই এদিকের । দুজনের তো দেখছি ভালো খাতির শহিদ ভাইয়ের কথায় বুঝলাম । একদিন শাকিল ভাইকে বললাম, আপনি শহিদ ভাইকে চিনেন ? কোন শহিদ ভাই ? বললাম আমাদের নিউজ এডিটর । শাকিল ভাই তখন স্বভাব সুলভ মুচকি মুচকি হেসে বললেন, আপনাকে কি বলছে ? বললাম অনেক কিছু বলছে । শাকিল ভাইও শহিদ ভাইয়ের অনেক প্রশংসা করলেন । আমি বললাম আওয়ামী লীগ, বিএনপি তো ভালো বন্ধুত্ব ! তখন শাকিল ভাই বললেন, এ্যানি আমার ভালো বন্ধু, আমরা রাতে অনেক দিন একসাথেও থাকি কিন্তু ক্যাম্পাসে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করি । এটাই তো রাজনীতির সৌন্দর্য । বঙ্গবন্ধু যেমনটি করতেন । মতের ভিন্নতা থাকবে তবে স্বদভাবও থাকতে হবে ।

চ্যানেল ‘ওয়ান’ তখন আসবে আসবে । আমি ডাক পেযেছিলাম । মাহাথির ততদিনে চ্যানেল ‘এস’ ছেড়ে বাংলাভিশনে । ‘ওয়ান’ মাহাথিরও ডাক পেয়েছে আমাকে বললো তুই যদি যাস তাহলে আমিও যাবো । আমি বললাম দেখি ! শাকিল ভাইকে বললাম । শুনে উনি বললেন, খোকনকে  ‘বাংলাভিশন’ ছাড়তে হলো ( চ্যানেল আই ছেড়ে বাংলাভিশন এ যোগ দেন)। নেত্রীর অফিসে ঢুকতে পারে না, এখন আপনারও তো একই অবস্থা হবে । এসব বাদ দেন আর একটু ধৈর্য ধরেন সামনে নির্বাচন। ক্ষমতায় আসলে ভালো কোথাও কাজ পাবেন । অতপর বাদ দিলাম । এরই মধ্যে মাহাথির ‘বাংলাভিশন’ ছেড়ে ‘ওয়ান’ যোগ দিয়েছে ।আমারে একদিন ‘ওয়ান’ এর অফিস থেকে ফোন দিয়ে জানতে চান, আমি কবে জয়েন করবো ? আমি বললাম, আমার ডেঙ্গু হয়েছে সুস্থ্য হই । মাহাথির আমাকে প্রতিদিন ভয় দেখাতো তোকে জোর করে নিয়ে আসবে । আরো অনেক কথা এ বিষয় আজ থাক । ছিলাম শাকিল ভাইয়ের প্রসঙ্গ । আসলো ওয়ান ইলেভেন । কিছুদিনের মধ্যে চ্যানেল’এস’ বন্ধ হয়ে গেলো । একদিন হঠ্যাৎ রেডিও ট্যুডের রাশেদ ভাই ফোন দিয়ে বললেন, কি করেন ? তখন বিকেল বললাম, বাসায় চা খাচ্ছি ।শুনে একটু গম্ভীর গলায় বললেন, একটা সিভি নিয়ে আজই আমার অফিসে আসন। ওখানে যা বেতন পান তার তিনগুন দেব সাথে আওয়ামী লীগ বিটে পাবেন । শাকিল ভাইকে ফোন করলাম । বললাম সব শুনে বললেন টিভিতে কাজ করে রেডিওতে কাজ করতে যাওয়াটা কেমন জানি । দরকার নেই আর একটু ধৈর্য ধরেন । এভাবে ধৈর্য ধারন করতে থাকলাম ..... এরই মধ্যে আবার মাহাথির ‘একুশে টেলিভিশন ‘ যোগ দিয়েছে । আমাকে একদিন ফোন করে বললো, একটা সিভি নিয়ে আয়,গেলাম । চাকরিটা হয়ে গেল । শাকিল ভাইকে ফোন করলাম । শুনে বললেন, ধৈর্যের ফল মিষ্টি হয় । তখনকার পরিস্থিতি রাজনীতি বন্ধ, নেত্রী জেলে । একদিন শাকিল ভাই ফোন করে বললেন, ক্যামেরা নিয়ে সংসদের সামনে আসতে । নেত্রীর মুক্তির দাবিতে একটা মিছিল বের করা হবে । আমি আসলাম দেখি অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে । নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেদিন মিছিল হয় । আসলো নির্বাচন । জিতলো আওয়ামী লীগ । সারারাত অফিসে ছিলাম । ভোরে বাসায় যাই । ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে অফিসে আসি গাড়ি থেকে নামবো এমন সময় শাকিল এর ভাই ফোন । বললেন, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাদের সহযোগিতা করার জন্য ।.আমরা এটা মনে রাখবো । এরপর ফোনটা প্রেসসেক্রেটারি আজাদ ভাইকে দিলেন । আজাদ ভাইও একই কথা বললেন । শাকিল ভাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিপিএস হলেন । একদিন তার রুমে বসে আছি এমন সময় বিপু ভাই( নসরুল হামিদ বিপু, বর্তমান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ) শাকিল ভাইয়ের রুমে ঢুকলেন । শাকিল ভাই চেয়ার ছেড়ে উঠে বিপু ভাইকে জড়িয়ে ধরলেন ( শাকিল ভাই চাকরী পাওয়ার পর বিপু ভাই প্রথম দিন আসছিলেন) । আমাকে বললেন চিনেন উনাকে বললাম চিনি বিপু ভাই । তখন বিপু ভাই ছিলেন রিহ্যাবের প্রসিডেন্ট । বলছিলেন আমার ভাই, বন্ধু এক কথায় সব কিছু ( খোকন ভাইয়ের কাছ থেকে আগেই শুনেছি বিপু ভাই, শাকিল ও খোকন ভাইয়ের সম্পর্কের কথা )। দেখলাম তাদের আন্তরিকতা । বিপু ভাইয়ের নাম্বারটা আমি সেদিই নিয়েছিলাম । আরো অনেক কথা অনেক স্মৃতি জমা আছে । কয়টা লিখবো ? শেষ হবে না......

সেদিন একনেক সভা শেষে ব্রিফিং চলছিল । হঠ্যাৎ ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস’ শাকিল ভাই নেই’ । বুকের মধ্যে কেমন জানি কর উঠলো । ফোন দিলাম খোকন ভাইকে । বিজি বিজি... বিটুকে তারও ফোন বিজি... মামুনকে দিলাম । কাঁদছে আর বলছে আপা, ভাই নাই ..... আমি বললাম সত্যি ???? ব্রিফিং এর সবাই তখন আমার দিকে চেয়ে আছে ! পরিকল্পনামন্ত্রী তখন আ ফ ম মোস্তফা কামাল বলছেন কি হয়েছে ? বললাম শাকিল ভাই !!! উনি বলছেন আমাদের শাকিল ? এরপর ব্রিফিং তখন শেষ করে দিলেন........ অফিসে জানিয়ে চলে গেলাম সামদানী !!!

এই বিভাগের আরো খবর