শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২৯

সরকারকে ভয় দেখাতে মার্কিন ঘোষণা: আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২৩  

সরকারকে ভয় দেখানোর জন্যই জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের মতে, নতুন ভিসা নীতির কারণে বিএনপি চাপে পড়বে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের দুই শরিক মনে করে, বাংলাদেশকে চাপে রাখার জন্য এই ভিসা নীতি। অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ।

বাংলাদেশ সময় গত বুধবার রাতে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, ভোটের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দেবে না দেশটি। গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে দায়ী বা জড়িত মনে করলে ওই ব্যক্তির ভিসা দেওয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করবে। বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা এর অন্তর্ভুক্ত থাকবেন

নতুন ভিসা নীতিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘নিজস্ব বিষয়’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে করব। সুষ্ঠু নির্বাচন করার পরেও হয়তো তারা একই অভিযোগ করতে পারে। এর মাধ্যমে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে আমেরিকা।’

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের প্রতি প্রভাবশালী দেশগুলোর আগ্রহ আছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি বড় হওয়ায় বিভিন্ন দেশ কার্যক্রমও বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে চীনের বড় অংশীদারত্ব রয়েছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তাদের পক্ষ নিতে নানা কর্মকাণ্ড করছে। তাঁরা বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের তৎপরতা বেড়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে একটি বিদেশি গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তাঁকে ক্ষমতায় চায় না বলেই বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পরে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে, সেসব দেশ থেকে কোনো রকম কেনাকাটা করবে না বাংলাদেশ। অর্থ মন্ত্রণালয়কে তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন।

শাজাহান খান গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ‘বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের মানসিকতার কারণে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আগে থেকে সতর্ক করেছেন, কী হতে পারে না-পারে। আমি মনে করি দেশের সুষ্ঠু, সুন্দর, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা যা করার দরকার, তা তিনি করবেন।’ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ যেকোনো পরিস্থিতি শক্তি ও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা হবে বলে জানান শাজাহান খান।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, মার্কিন ভিসা নীতিতে ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার কথাও বলা আছে। তাঁরা সেটাকেই সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণা চালাবেন। যুক্তরাষ্ট্র অনিয়মের পাশাপাশি ভোটকে ঘিরে সহিংসতার কথা বলেছে। এ জন্য তাঁরা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভোট প্রদানে বাধা দিতে বিএনপি যে সহিংসতা করেছে, সেটাকে সামনে আনবেন।

মার্কিন নতুন ভিসা নীতিতে বিএনপিতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভোটে কোনো বিশৃঙ্খলা, জ্বালাও-পোড়াও করলে তাদের ভিসা দেওয়া হবে না বলেছে আমেরিকা। আমরা তো অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পক্ষে।’

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নির্বাচনে অনিয়মকারীদের ভিসা দেবে না, এটাকে কীভাবে দেখছেন–এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা চায় নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। সেই বার্তাই দিয়েছে নতুন ভিসা নীতির মাধ্যমে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল মার্কিন ভিসা নীতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) বলেছে নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা নয়। আমাদেরও এটা কথা। এই নির্বাচনে যারা বাধা দেবে, তাদের আমরা অবশ্যই প্রতিহত করব।’

নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চায় বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, এখানে নির্বাচন কোনো বিষয় নয়। আসল হচ্ছে, ভূরাজনৈতিক বিষয়ে বাংলাদেশকে তাদের পক্ষ নিতে যুক্তরাষ্ট্র এসব চাপ প্রয়োগ করছে। নির্বাচন একটা অছিলা। এতে ভোটে প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি।

১৪ দলের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়ার মতে, নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সংকট আরও প্রলম্বিত হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করুক তা চায় না বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘আমরা একটা শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু আমেরিকার মতো গণবিরোধী শক্তি আমাদের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করুক, আমরা চাই না। এটা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। আমেরিকা সম্পর্কে সবাই জানে, তাদের সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই।’

এই বিভাগের আরো খবর