শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৮৯

সমিতির নামে প্রতারণা, টার্গেট নিম্নবিত্তরা

তরুণ কন্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২১  

আর এভাবেই সমিতির নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শাকিল আহম্মেদসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন- মো. চাঁন মিয়া (৩৮), এ কে আজাদ (৩৫), মো. রেজাউল (২২), মো. তাজুল ইসলাম (৩১), মো. শাহাবুদ্দিন খাঁন (২৮), আব্দুস ছাত্তার (৩৭), মো. মাসুম বিল্লা (২৯), মো. টিটু মিয়া (২৮) ও মো. আতিকুর রহমান (২৮)।

সোমবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রাজধানীর পল্লবীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, বেশকিছু ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ এর একটি দল মিরপুরে নান্নু সুপার মার্কেটে অভিযান চালায়। অভিযানে গ্রেফতার করা হয় ১০ জনকে। তবে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার জসীম উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি।


প্রতিষ্ঠানটির অফিস থেকে জব্দ করা হয় নগদ চার লাখ ২২ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাবের বই, চেক, ডিপোজিট বই, সিল, ডিপিএসের বই ও পাসপোর্টসহ আরও বেশ কিছু জিনিস জব্দ করা হয়।

ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, আমার স্ত্রী গার্মেন্টসে চাকরি করতো। সে সেখানে দুইটি ডিপিএস করে। একটি ২৫০০ টাকা অপরটি ১২০০ টাকার। এসব টাকার লভ্যাংশ প্রতিমাসে দেওয়ার কথা থাকলে প্রথম দুই তিন মাস দেওয়া হয়। কিন্তু পরে আর দেওয়া হয়নি।

প্রতিষ্ঠানটিতে টাকা জামা রাখা মিরপুরের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, একবছর আগে তিনি তিন লাখ টাকা রাখেন। কিন্তু তাকে প্রতিমাসের লভ্যাংশ তো দূরে থাক, আসল টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।

আরেক ব্যবসায়ী শুক্কুর আলী বলেন, আমি প্রলুব্ধ হয়ে প্রায় আট লাখ টাকা রাখি প্রতিষ্ঠানটিতে। আমাকে এক-দুই মাস টাকা দিলেও পরবর্তীতে আর দেওয়া হয়নি। আমার মাধ্যমে আমার শ্যালক-শ্যালিকা এখানে টাকা রেখেছিল।

যেভাবে সমিতির সদস্য সংগ্রহ করা হয় 

এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর‍্যায়ে কর্মী ও সদস্য রয়েছে। তারা মিরপুরে বিভিন্ন বস্তিতে নিম্নআয়ের মানুষকে টার্গেট করে। এরপর এসব অসহায় মানুষকে নান কৌশলে নিয়ে আসা হয় ওই অফিসে। এরপর তাদের গ্রাহক ও টার্গেট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হতো।

র‍্যাব জানায়, প্রতিষ্ঠানটিতে কেউ যদি মাসে ১ হাজার টাকা করে একটি ডিপিএস করে, তাহলে বছরে ১২ হাজার টাকা, আর পাঁচ বছরের ৬০ হাজার টাকা জমার কথা বলা হতো। মেয়াদ শেষে তাকে লোভ দেখানো হতো ৯০ হাজার টাকার।

টার্গেট সংগ্রহকারী ব্যক্তি প্রথম এক বছর প্রতিমাসে ২০০ টাকা ও পরবর্তী তিন বছর প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে লভ্যাংশের লোভ দেওয়া হতো। আবার কোম্পানির কোনো সদস্য যদি নতুন কোনো সদস্যকে এক লাখ টাকার এফডিআর করাতে পারে তাহলে তাকে মাসে ১ হাজার টাকা, আর  এফডিআরকারীকে মাসে ২ হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়।

আর এভাবে প্রলুব্ধ হয়ে নিম্নআয়ের মানুষ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লভ্যাংশ প্রদান করা হতো না তাদের। ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হলেও পরিশোধ করা হতো না পাওনা টাকা।

যেভাবে টাকা সংগ্রহ

প্রতিষ্ঠানটির কিছু সদস্য মাসিক ও পাক্ষিক ভিত্তিতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ডিপিএসের টাকা সংগ্রহ করতেন। ভুক্তভোগীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো। তারা যদি সময়মত ডিপিএসের টাকা পরিশোধ না করেন, তাহলে মেয়াদ শেষে মুনাফা কম পাবেন। এছাড়া নিয়মিত টাকা না দিলে জরিমানাও করা হতো। অধিক মুনাফার লোভে ভুক্তভোগীরা সঠিক সময়ে ডিপিএসের টাকা জমা করতেন।

এরপর ভুক্তভোগীরা লাভের টাকা চাইতে গেলে হুমকি দেওয়া হতো। অভিযান পরিচালনাকালে শাকিলের অফিসের টর্চারশেল থেকে মারধরের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয় বলে জানান র‍্যাবের ওই কর্মকর্তা।

মূল অভিযুক্ত কে এই পলাতক জসিম

পলাতক জসিম উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেন। আগে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে রিপ্রেজেন্টিটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে ‘কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি’ প্রতিষ্ঠা করেন। যা ২০০৬ সালে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন লাভ করে। সমিতিটির পূনর্নিবন্ধন হয় ২০১৩ সালে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-২০১৯ সালের সমিতিটির মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৭ জন। কিন্তু নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২৫-৩০ হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করে তারা। এসব গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় শত কোটির ওপরে বিনিয়োগ করে। জসিমের নামে আটটি নামসর্বস্ব কোম্পানি রয়েছে বলে জানায় র‍্যাব।

র‍্যাব-৪ এর সিও বলেন, জসিম অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির। অধিকাংশ সময় সমিতির অফিসে আসতেন না। সমিতির ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উত্তোলন করে অন্যত্র স্থানান্তর বা জমি ও ফ্ল্যাট কিনে টাকা লেয়ারিং করতেন। প্রতারণার মাধ্যামে অর্জিত টাকায় তার নামে জমি-ফ্ল্যাট, গাড়ি-বাড়িসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে।

মূল অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতারের বিষয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, অভিযানের পর থেকে জসিম পলাতক। রাজধানীর বসুন্ধরা ও গ্রিন রোডে তার বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। আমরা শিগগির তাকে গ্রেফতার করবো।

গ্রাহকদের টাকা ফেরতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং মামলার পর গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাওয়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর