বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৫৮২

শীষকাটা লেদা পোকায় কেড়ে নিল শাল্লার কৃষকের স্বপ্ন

বকুল আহমেদ তালুকদার: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০২১  

এবছর চৈত্রের শুরুতেই কৃষকের বাঁচার একমাত্র অবলম্বন বোরো ধানে আঘাত আনে শিলা বৃষ্টি।নষ্ট করে দেয় অনেক জমির ধান।তারপর টানা রোদের কারনে ধানের চারাগুলো আবার কিছুটা সোজা হয়ে দাঁড়ায়।শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ার পর যেটুকু ছিল তা নিয়ে কৃষক আবার নতুন আশায় বুকবাঁধে।কিন্তু সে আসাও উড়িয়ে দেয় ধমকা গরম বাতাস।

গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় হঠাৎ ধমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার পরই নষ্ট হয়ে যায় জমির ধান।হাওরের কৃষক বলছেন গরম বাতাস তাদের সব জমির ধান নষ্ট করে দিয়েছে।ঐ দিন সকালেও সারা হাওরে সবুজের সমারহ ছিল। কিন্তু বিকেলে গরম বাসাত বয়ে যাওয়ার পর থেকেই সব জমি ধূসর হয়ে যায়।হাওরের কৃষকের মুখে এখন কান্নার ছাপ।একধরনের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে হাওরপাড়ের কৃষকের মাঝে।

শাল্লা উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, গরমের কারনে ধানের জমিতে একধরনের ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়।পরে বাতাস দেওয়ার কারনে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো ধানের জমিতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।তবে ক্ষতির পরিমান এখনও নির্নয় করা যায়নি বলে জানিয়েছেন শাল্লা ঊপজেলা অফিস বিভাগ।        

জানা যায় বেশ কিছু দিন থেকেই সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বোরো ধানের জমিগুলোতে পোকার আক্রমণ ছিল।পোকাগুলো ধান গাছের গুড়া কেটে দিচ্ছে।কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে জমিতে কীটনাশক ব্যাবহারের পরামর্শ দিলেও প্রয়োজনীয় ঔষধ নেই উপজেলার ডিলারদের কাছে।এরই মাঝে ধমকা গরম হাওয়ার কারনে নষ্ট হয়ে গেছে জমির ধান।সব মিলিয়ে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার কৃষক।কি করবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না তারা।          
সবে মাত্র ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু দিন পরেই সোনালী ধান গোলায় তোলার স্বপ্ন দেখছিল কৃষক।কিন্তু এরই মাঝে পোকার আক্রমণ আর গরম বাতাসের কারনে ধানের জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষক বলছে এখন আমাদের বাঁচা মরা সমান।

শাল্লা উপজেলার ছায়ার হাওরের মনুয়া গ্রামের কৃষক আমির উদ্দিন বলেন, ধার দেনা করে ১২ কেয়ার জমি চাষ করেছিলাম।ধান কাটার জন্য শ্রমিকও ঠিক করে রেখেছি।কিন্তু গত তিনদিন আগের গরম হাওয়ায় সব ধান নষ্ট করে দিয়ে গেল।ছেলে মেয়ে নিয়ে সারা বছর কি খাব সে চিন্তাই করছি।

ইয়ারাবাদ গ্রামের কৃষক সাইফুর রহমান বলেন,জমিতে পোকার আক্রমণ ছিল ঔষধ দিয়েছি কিন্তু গরম হাওয়া সব শেষ করে দিয়েছে।এই ধানের খড় এখন গরুও খাবে না।গরুর খাবারেরও সংকট দেখা দিবে।

কৃষক মমিনুল হক বলেন,৩০ কেয়ার জমি করেছিলাম, প্রথমে শিলায় ক্ষতি করল। ভাবছিলাম বাকি যা ছিল এই গুলো দিয়েই কষ্ট করে বছর কাটিয়ে দিব। সকালেও জমি ভালো দেখে আসছি কিন্তু বিকেলে গরম হাওয়ার পরই সব জমি দূসর হয়ে গেছে।

শাল্লা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত দাশ বললেন, শীষকাটা লেদা পোকা এবং গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে এই উপজেলার বিভিন্ন হাওরের ধানি জমিতে। গত তিন দিন সরেজমিনে উপজেলার কলাপাড়া, পুটকা, নারাইনপুর ও আগুয়াই গ্রামে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি, তারা যেন শীষকাটা লেদা পোকার জন্য কীটনাশক সেতারা এবং নাইট্রো এবং গোড়া পচার জন্য টিল্ট অথবা স্কোর ব্যবহার করেন। তিনি জানালেন, এগুলো ছাড়া আরও ভাল ওষুধ আছে, অন্যগুলো শাল্লায় পাওয়া যাচ্ছে না। পোকা দমনের জন্য আলোকপাত বা নাইটসেড করার জন্যও বলা হচ্ছে। রাতে নাইটসেডের নীচে সাবান পানি রেখে পোকা নিধন করা সম্ভব। কৃষকদের এভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শাল্লা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, এটা এক ধরনের প্রকৃতিক দুর্যোগ বলা যেতে পারে।গরম আবহাওয়ার কারনে ব্যাকটেরিয়া বেড়ে এইগুলো বাসাতের মাধ্যম ছড়িয়ে পড়ে ধানের জমির ক্ষতি করেছে।তাছাড়া বিপিএইচ পোকার আক্রমণের  কারনে বোরো ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে।শাল্লা উপজেলার নির্ধারিত ডিলারদের কাছে সব ঔষধ না থাকায় আমরা আশেপাশের উপজেলা গুলো থেকে ঔষধ আনার ব্যাবস্থা করছি।
 

এই বিভাগের আরো খবর