বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪১০

শিক্ষকের অসচেতনায় গুচ্ছের স্বপ্ন ভঙ্গ হলো মেহেরুন-নেসার

আহমেদ সানি, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ মে ২০২৩  

সমন্বিত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে  জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসে হেনস্তার শিকার এক ভর্তি পরীক্ষার্থী। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন প্রায় ১২টা বেজে ২০ মিনিট। সাভার থেকে পরীক্ষা দিতে আসা মেহেরুন নেসা দায়িত্বরত এক স্বেচ্ছাসেবকের সঙ্গে দৌঁড়াতে থাকে ভাষাশহিদ রফিক ভবনের দিকে। দেরিতে আসায় দায়িত্বরত শিক্ষকরা একবার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র দিয়ে পরবর্তীতে আবারও ফেরত নিয়ে পরীক্ষা কক্ষ থেকে বের করে দেন। বের হয়ে এসে শান্ত চত্ত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেহেরুন নেসা নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা দিতে সাভার থেকে বাসে করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছে মেহেরুন নেসা। গুলিস্তান থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক রাস্তায় তীব্র জ্যামে আটকা পড়ে মেহেরুন ও তার বোন। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রথম দিনে দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শুরু হলেও যানজটের কারণে পরীক্ষাকেন্দ্রে মেহেরুন প্রবেশ করে প্রায় ১২টা ২০ মিনিটে। এক স্বেচ্ছাসেবক তাকে ভাষাশহিদ রফিক ভবনের চতুর্থ তলার ইতিহাস বিভাগে নিয়ে যায়। ২০ মিনিট দেরিতে আসায় পরীক্ষা রুমে দায়িত্বরত শিক্ষক বলে ওএমআর শিট নাই। এখন আর পরীক্ষা নেয়া যাবে না। এরপর তাকে চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে বলে। চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি নিয়ে আসে। পরবর্তীতে দেখা যায় মেহেরুনের আসন তৃতীয় তলায় না, চতুর্থ তলায়। পরবর্তীতে মেহেরুনকে চতুর্থ তলায় নিয়ে যেতে যেতে ১২টা ৪০ বেজে যায়। চতুর্থ তলার ৪০১ নম্বর রুমে গেলে সেই রুমের দায়িত্বরত শিক্ষক মেহেরুনকে পরীক্ষা দিতে না দিয়ে বের করে দেয়।

মেহেরুন নেসা বলেন, যানজটের কারণে আমি ২০ মিনিট দেরি করে পরীক্ষা দিতে আসি, পরে এক স্বেচ্ছাসেবী আপু আমাকে রফিক ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যায়। পরে আমাকে একজন স্যার বলেন, ওএমআর শিট নাই, পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। এভাবে হয়রানির মাধ্যমে আরও কিছুটা সময় ক্ষেপণ করে। পরবর্তীতে স্যার বলেন চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হবে। চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে নিতে ১২টা ৪০ বেজে যায়। অনুমতি নিয়ে আমাকে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে সেটি আমার নির্ধারিত কক্ষ নয়, এমন কারণ দেখিয়ে তা প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে আমার নির্দিষ্ট কক্ষে (৪০১) উপস্থিত হলেও আমাকে পরীক্ষার দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

কান্নারত অবস্থায় মেহেরুন সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে যখন পরীক্ষা দিতে দিবে না তাহলে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটেই আটকাতো। কেন আমাকে ভিতরে আসতে দিয়ে একজন শিক্ষকের কাছে হেনেস্তার শিকার হতে হলো? 

তিনি আরও জানান, আমার মতো অনেকই দেরিতে এসেও অন্যান্য রুমে পরীক্ষা দিতে পেরেছে। শুধুমাত্র আমাকেই কেন পরীক্ষা দিতে দিলো না। মানবিক দিক বিবেচনা করে অন্যদের পরীক্ষা দিতে দিলো, কিন্তু আমাকে দিলো না কেন? 

এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীর উচিত ছিল আমাদের কাছে রিপোর্ট করা। যেহেতু পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে এখন আর কিছু করার নেই। 

এখানে দায়িত্বরত শিক্ষকদের দায়িত্ব কোনো অবহেলা দেখছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্বের কোনো অবহেলা ছিল না। পরীক্ষা কক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক আমাদের শুরুতেই জানালে কিছু করা যেত।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে ২০-৩০ মিনিট দেরি করে আসলেও পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিয়েছি। তবে এটা মানবিক দিক বিবেচনা করেই। পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকরাই এটি দেখবে। আজকে উপকেন্দ্র নটরডেম কলেজের একজন পরীক্ষার্থী ভুল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলে এসেছে, আমি জানার পর তারও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমাকে যদি আগে বিষয়টি জানানো হতো তাহলে কোনো কিছু করা যেতো। যেহেতু আমাকে পরে জানানো হয়েছে, সেহেতু এখন আর দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার নাই। 

শিক্ষকের হেনেস্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য বলেন, আমাকে যদি লিখিত অভিযোগ দিয়ে যায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরবর্তীতে মেহেরুন নেসা উপাচার্য বরাবর পরীক্ষাকেন্দ্রে শিক্ষকের হয়রানির প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

এই বিভাগের আরো খবর