শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭৯

রোজাদারের দিল খোশ ইফতারে

প্রকাশিত: ২০ মে ২০১৯  

‘স্রষ্টার হুকুম পালন করতে/রাখব দিনে রোজা/রোজাদারের জান্নাতে যাওয়া/হবে খুব সোজা। দিনের শেষে ইফতার করে/চাইব আমরা পানা/পরকালে আল্লাহ যেন/দেন জান্নাতি খানা।’


পবিত্র রমজানুল মোবারকে মানুষের জন্য ইফতার আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত। ইফতার রমজানের পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সারা দিন রোজা রেখে ইফতার করাটা শুধু কর্তব্য নয়, আনন্দও বটে। এতে আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।

ইফতারের সময় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন শরিফে বলা হয়েছে, ‘সুবেহ সাদিক হতে রাত অবধি রোজা পূর্ণ করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত-১৮৭) অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রোজা শেষ করে ইফতার করা।

ইফতারের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে স্বয়ং আমাদের পেয়ারে নবীজি মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের সময় রয়েছে- ১. ইফতারের সময় ২. মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

ইফতার শব্দটি আরবি ফুতুর শব্দ থেকে এসেছে। ফুতুর- অর্থ নাস্তা। ইফতারের অর্থ খোলা, উন্মুক্ত করা, ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় সূর্যাস্তের পর খেজুর, পানি বা কোনো খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়।

মহিমান্বিত এ মাসে ইফতারের সময়টা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অদৃশ্য শক্তির আদেশ পালনার্থে ভীষণ ক্ষুধা-তৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও বনি আদম প্রহর গুনতে থাকে সূর্যাস্তের। এ সময় মহান আল্লাহ আদম জাতির ওপর সন্তুষ্ট হয়ে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ শরিফ) আর এ জন্যই হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রহ.) ইফতারের সময় পরিবারের সবাইকে সমবেত করে দোয়া করতেন।

ইফতার মহাপুণ্যের কাজ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ জন্য এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে। রাসুলে পাক (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে। আরশে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না অর্থাৎ রোজাদারের সওয়াব কমবে না।’

এরূপ সওয়াব আল্লাহতায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারাও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউসে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন, যাতে সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বায়হাকি) সাহাবিরা বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের এমন সংস্থান নেই, যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি? রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তাকেও এই সওয়াব দেবেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজা পালনকারীকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার ‘হাউসে কাওছার’ থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে না পৌঁছানো পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (বায়হাকি ও শুয়াবুল ইমান, মেশকাত)

সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেয়াটা উত্তম। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় বান্দা সে, যে ইফতার সঠিক সময়ে করে। (তিরমিজি, মেশকাত) এই হাদিস ছাড়াও আরও অনেক হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, ইফতারের নির্দিষ্ট সময় থেকে দেরি করা মোটেই উচিত নয়। যদি কেউ ইচ্ছা করে ইফতারে দেরি করে, তা হলে সে রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে এবং আল্লাহর নিকট অপ্রিয় হবে। সুতরাং এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।

আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফ (রা.) বলেন, ‘একবার আমরা (রমজানে) আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম (তখন তিনি রোজা অবস্থায় ছিলেন) অতঃপর (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) তিনি একজন সাহাবিকে বললেন, নামো ও আমার জন্য ছাতুগুলো দাও। সাহাবি (সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর) লালিমা দেখে বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)। ওই যে সূর্য (দেখা যায়) তিনি (তার কথায় কান না দিয়ে) আবার বললেন, তুমি নামো এবং আমার জন্য ছাতু গোল। এভাবে তিন বার বললেন। অতঃপর তিনি নামলেন এবং রাসুল (সা.)-এর জন্য ছাতু গুললেন। তিনি তা পান করলেন। তার পর তিনি পূর্ব দিকে ইশারা করে বললেন, যখন তোমরা দেখবে যে, রাত ওই দিক থেকে আসছে তখন বুঝবে সিয়াম পালনকারীর ইফতারের সময় হয়ে গেছে।’ (বোখারি, মুসলিম)

ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়ে থাকে। এ জন্য এ সময় মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে অধিক দোয়া, আহাজারি ও কান্নাকাটি করা উচিত। এ মাসে রহমতের দ্বার উন্মুক্ত থাকে, রহমতের বারি জোরেশোরে বর্ষিত হয়। ক্ষমা ও মাগফিরাতের বাহানা তালাশ করা হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ মাসেই আহ্বান জানানো হতে থাকে, ‘আছে কী কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করে দেব।’

আল্লাহ তো ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, ‘ইফতারের সময় তোমরা আমার কাছ থেকে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। রাতের আঁধারে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। শেষ রাতে চেয়ে নাও, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয়ে যায় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহের দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া।(আহমদ)