শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২১৮

রংপুর-৩ উপনির্বাচনে নৌকা পেলেন রাজু

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

রংপুর-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বড় তিন রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। নৌকা নিয়ে লড়বেন মো. রেজাউল করিম রাজু। তিনি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ধানের শীষে লড়বেন রিটা রহমান। মনোনয়ন পাওয়ার পর তিনি তার দল পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ বিলুপ্ত করে বিএনপিতে একীভূত হয়েছেন।

জাতীয় পার্টির এই ঘাঁটিতে লাঙ্গল নিয়ে লড়বেন দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ। মনোনয়ন পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করছেন প্রার্থীরা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুতে আসনটি শূণ্য হয়। আগামী ৫ অক্টোবর ভোটগ্রহন হবে। মনোনয়নপত্র জমা ৯ সেপ্টেম্বর, বাছাই ১১ সেপ্টেম্বর, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর।

শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় মো. রেজাউল করিম রাজুকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৬ জন। রাজুকে মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক সমঝোতায় তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে মাঠে থাকবেন না বলে গুঞ্জন রয়েছে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে তিনি জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিতে পারেন- এরকম আভাস দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের রংপুর মহানগর কমিটির এক শীর্ষ নেতা।

রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি সাফিউর রহমান সফি এধরনের বক্তব্যকে গুজব বলে অখ্যায়িত করে বলেছেন, এখন পর্যন্ত দলের প্রার্থী রাজু। আমরা এখন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সব কিছুই নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ওপর। আগে বলা মুশকিল। রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। সেটা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত হবে।

এদিকে নানা আলোচনার পর জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রবিবার প্রার্থী হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদের নাম ঘোষণা করেন।

জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিতি রংপুর-৩ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে দলটির মধ্যে আলোচনা চলছিল।এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদসহ ৫জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন।

বাকি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন- এরশাদের ভাগনি (মেরিনা রহমানের মেয়ে) মেহেজেবুন নেছা টুম্পা, রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফখর-উজ-জামান ও রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক। তবে শনিবার রাতে রওশন ও কাদেরপন্থীরা একত্রিত হয়ে সুরাহা করেন। সমাধান সূত্র হল- জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যান থাকবেন আর রওশন এরশাদ হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এ ঘোষণা দেন। এরপরই তিনি রংপুর-৩ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।

এ আসনে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। রোববার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কথা জানান। রিটা রহমান পিপলস পার্টি অব বাংলাদেশ (পিপিবি) এর প্রধান ছিলেন। এ দলটি ২০ দলীয় জোটের শরিকও ছিল। জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর রোববারই নিজ দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে একীভূত হয়েছে রিটার পিপিবি। বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই রংপুর-৩ আাসনে উপনির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের পক্ষ থেকে এ আসনে রিটাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। রিটা বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার মেয়ে।

রোববার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিবৃতিতে বলেছেন, রিটা রহমানের নেতৃত্বে পিপিবি বিলুপ্ত করে বিএনপি‘র সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি। রিটা রহমানের নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতাকর্মীরা বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলকে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করবে বলে বিএনপি প্রত্যাশা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটা রহমান বলেন, রোববার সকালে আমরা দলীয় নেতারা বৈঠক করেছি। সেখানে সবাই বিএনপিতে একীভূত হওয়ার পক্ষে ঐক্যমতে পৌছেন। দলীয় সিদ্ধান্তেই আমরা বিএনপিতে একীভ‚ত হয়েছি। এখন বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই আমি রংপুরে ধানের শীষ নিয়ে লড়াই করব।

এদিকে গুলশান কার্যালয়ে শনিবার রাতে দলের মনোনয়ন বোর্ড সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়। প্রার্থী হিসেবে সদ্য প্রয়াত মহানগর সভাপতি মোজাফফর হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া হোসেন, রংপুর মহানগর সহসভাপতি কাওসার জামান বাবলা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু, জেলা সাধারণ সম্পাদক রইসউদ্দিন ও পিপিবি চেয়ারম্যান রিটা রহমান সাক্ষাৎকার দেন। বৈঠকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে নেতাদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা যায়। কয়েক নেতা রিটা রহমানকে প্রার্থী না দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তবে কেউ কেউ তার পক্ষ নিয়ে কথা বলেন, রিটা রহমান স্থানীয়ভাবে ততটা সক্রিয় না হলেও জাতীয়ভাবে তার পরিবারের পরিচিতি আছে। তাছাড়া গত নির্বাচনে নানা অনিয়মের পরও তিনি ভালো ভোট পেয়েছেন। বিএনপিপন্থী কয়েকজন বুদ্ধিজীবীও রিটা রহমানের পক্ষে অবস্থান নেন বলে জানা গেছে।

রিটাকে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রংপুর মহানগর কমটির সাধারন সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, আমরা যারা তৃণমূলে রাজনীতি করি তারা বর্তমান সরকারের আমলে জেল-জুলুম ভোগ করে দলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছি। তাদের মধ্যে আমিসহ অন্ততঃ ৫ জন ছিলাম মনোনয়ন প্রত্যাশী। তা উপেক্ষা করে রিটা রহমানকে মনোনয়ন দেয়ায় আমরা হতাশ-ক্ষুব্ধ। ভোটের বাক্সে এর প্রভাব পড়বে। রিটা রহমানের পারিবারিক অতীত নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন নেতাকর্মীরা। তার স্বামী পলাতক মেজর (অব) খায়রুজ্জামান ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু এবং ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার আসামি। যা নির্বাচনে প্রভাব পড়তে পারে।

এই বিভাগের আরো খবর