শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৮৯

মৎস্য ভবনে পাহাড়সম দুর্নীতি

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০১৯  

নানারকম অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জর্জরিত  রাজশাহী মৎস্য ভবন। প্রকাশ্যে চলছে পোনা বাণিজ্য। সরকারীভাবে বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করা থাকলেও সেটার তোয়াক্কা না করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছের পোনা। 

ভবনের প্রধান কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খামারের পাম্প ম্যানেজার আফজাল হোসেন পর্যন্ত এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত। আর অনিয়মগুলো হচ্ছে স্থানীয় কিছু মাস্তানদের যোগসাজশে। অতিরিক্ত টাকাগুলো তাদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা হয় বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। 

গত রবিবার রাতে নগরীর বর্ণালি মোড়ের বিভাগীয় মৎস্য ভবন ক্যাম্পাসের ভেতর মৎস্য খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তারা গভীর রাতে মৎস্য চাষীদের কার কোন মাছের পোনা কতটুকু লাগবে সেটা একটা সাদা কাগজে লিখে টাকা জমা নিচ্ছেন। 

তবে তাদের অফিসিয়াল কোনো রশিদ না দিয়ে শুধু টোকেন ধরিয়ে দিচ্ছেন। আর পরদিন ভোররাতে অর্থাৎ ফজরের নামাজের সময় থেকে সকাল ৭ টা পর্যন্ত মাছ বিতরণ করছেন। সরেজমিনে গিয়ে ভবনের তালা বন্ধ চিংড়ি হ্যাচারীর উল্টোদিকের গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেন্সিডিলের বোতলও চোখে পড়েছে!  

অফিসিয়াল রশিদ না দিয়ে শুধু টোকেনে লেনদেনে বেশ শঙ্কিত মাছচাষীরা। ঘটনাস্থলে মাছচাষীরা এই প্রতিবেদককে বলেন, কোন কোন মাছের পোনা কতটুকু কিনব তা আগের রাতেই  তালিকা করে টাকা জমা নিচ্ছে। 

অথচ লেনদেনের অফিসিয়াল রশিদ না দিয়ে সাদা টোকেন হাতে ধরিয়ে দেয়। এটাতে সংশয় থেকেই যায়। কর্মকর্তারা প্রতারণা করলে তখন তো কিছুই করার থাকবেনা বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন তারা। ছয়জন মৎস্য চাষীর সাথে কথা বলা  হলে তাদের কাউকেই কোনো রশিদ দেয়নি বলে তারা জানিয়েছেন।

আর কেমন দামে কিনছেন এমন প্রশ্নে মাছচাষীরা জানান, বাটা মাছের রেণু পোনা প্রতি কেজি ৪০০০ টাকা। রুই-কাতলা-মৃগেল মাছ প্রতি কেজি ৩০০ টাকা। যেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্যে  সবধরনের মাছ ১৬০০ টাকা নেবার কথা। তবুও পুকুর বাঁচাতে বাধ্য হয়ে  কেজিপ্রতি ২৪০০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে এসব মাছচাষীদের।

এদিকে ভবনের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতির আরো কিছু তথ্য। নাম গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, চুরিদারির সব টাকা রাজশাহীতে অবস্থানরত সর্বোচ্চ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে খামারের সব কর্মচারীরাও ভাগ পায়। 

গলদা চিংড়ির হ্যাচারীর কথা বলে সরকারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ডিডি, ডিপিডি, ডিএফও ও খামার ব্যবস্থাপক নাটক সাজিয়ে  ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ চিংড়ি হ্যাচারীতে এখনো তালা ঝুলছে!

এতসব অনিয়মের বিষয়ে খামার ব্যবস্থাপক আবু বকর সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনিও তাদেরই সাফাই গাইলেন। তিনি বলেন, অনেক ভীড় থাকার কারণে রশিদ দেয়া সম্ভব হয় না। 

তবে কেউ চাইলে তাকে দেয়া হয়। অনেক ভীড় মানে অনেক বিক্রিও  হয় নিশ্চয় ? তো আজকে কত কেজি বিক্রি করলেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন,  ৭ কেজি বিক্রি হয়েছে।

আর অতিরিক্ত দামে বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ভুল করে দু'একজনের কাছে বেশি নেয়া হতে পারে।

অনিয়ম বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর হাসান ফেরদৌস সরকার এই প্রতিবেদকের কাছে জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানালেও এক সপ্তাহ পরও একই অনিয়ম চলমান রয়েছে।

আর রাজশাহী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

এদিকে অনুসন্ধানে দুই মৎস্য কর্মকর্তার থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। মুল ভবনে একটি তিন রুমের এসি গেষ্ট হাউজ আছে যেখানে বাসা ভাড়া না নিয়ে বিনা পয়সায় মাসের পর মাস বিভাগের বড় দুই কর্মকর্তা বসবাস করছেন। তারা হলেন, ডিডি মো: হাসান ফেরদৌস সরকার ও ইউনিয়ন প্রকল্পের ডিপিডি আবুল কালাম আজাদ। সবমিলিয়ে নানারকম অনিয়মে জর্জরিত হয়ে আছে রাজশাহী মৎস্য ভবন।

এই বিভাগের আরো খবর