শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪৫১

মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক খোলা তালাকে দস্তখত নিলেন স্বামী

নুরুজ্জামান শেখ, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

স্ত্রী উপার্জিত টাকা আত্মসাতের পর দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে খোলা তালাকে জোরপূর্বক দস্তখত নিলেন স্বামী আবু কালাম ও তার সঙ্গীরা। এই ঘটনায় জাজিরা থানায় অভিযোগ করেছেন স্ত্রী পারভিন আক্তার।


ঘটনায় জানা যায়, পারভিন আক্তারের প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর  দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে অত্যান্ত দুঃখ কষ্টে জীবনযাপন করছিলেন। ওই সময় দুই ছেলে দুই মেয়েসহ পারভীন আক্তারকে তার স্বামীর ভিটা থেকে তারই দেবর কামাল ও জামাল মাদবর বের করে দেয়। ওই মুহূর্তে নিরুপায় হয়ে পারভীন আক্তার ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাবার বাড়িতে যেতে বাধ্য হন। পারভিন আক্তারের বাবা মেয়ে সহ ৫ জনের তিন বেলা খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখন পারভিন আক্তার ছেলে মেয়ের কথা চিন্তা করে ঢাকায় পাড়ি জমান এবং গাজীপুরের বিদেশি একটি সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন। কিন্তু সোয়েটার ফ্যাক্টরির সীমিত বেতনে  ছেলেমেয়েদের খাবার, পোশাক, লেখাপড়ার চাহিদা মেটাতে পারছিলেন না। তখন নিরুপায় হয়ে ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা  করে অসহায় পারভিন আক্তার দেশের মায়া ত্যাগ করে জীবন সংগ্রামে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাই চলে যান। অসহায় স্বামীহারা পারভিন আক্তার দুবাইতে তিন বছর, বাহারাইন আড়াই বছর, লেবানন তিন বছর, সর্বশেষ ওমানে তিন বছর কাজ করে দেশে চলে আসেন। ওমান থেকে দেশে আসার পর পারভিন আক্তারের রূপ ও উপার্জিত টাকার লোভে ছলচাতুরি আশ্রয় নেয় জাজিরা উপজেলার বড়কান্দি ইউনিয়নের মনাই ছৈয়াল কান্দির মোহাম্মদ তোতা হাওলদারের ছেলে মোঃ আবু কালাম হাওলাদার। দীর্ঘদিন মোবাইল ফোনে কথা বলে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয় পারভিন আক্তারকে। চতুর আবু কালামের ছলচাতুরি বুঝতে না পেরে পারভিন আক্তার বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হন। তখন ঢাকার যাত্রাবাড়ী কাজী অফিসে সাক্ষীগণের উপস্থিতিতে মুসলিম পারিবারিক আইনে গত ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি বিলম্বিত তিন লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু কালাম হাওলাদার (৩৫) সিঙ্গাপুরে পতিতা নারীর দালালি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জেল খেটে দেশের চলে আসে। কিন্তু দেশে এসেও আবু কালাম হাওলাদার তার অপকর্ম চালিয়ে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আবু কালাম হাওলাদার মাদকদ্রব্য ইয়াবাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং মাদকদ্রব্য ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার কারণে জেল খাটেন।

পারভিন আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, আমার তিন বছর সংসার জীবনে আমার স্বামী আবুল কালাম এক টাকার লাল সুতো কিনে দিতে পারেনি। এই তিন বছরে উল্টো প্রতিমাসে আমার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা নিয়ে ওর বাবার কাছে পাঠাতো আর বাবা কে বলতো আমার কাজের বেতন পাঠালাম। আবু কালাম ব্যবসা করার কথা বলে নিজে জামিনদার হয়ে আমাকে দিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে এবং পরে তা আত্মসাৎ করে। এ টাকা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে এই পর্যন্ত তিন লক্ষ টাকা নেয়। সে টাকা নিয়ে প্রায় সময় সংসারে ঝামেলা করত। ব্র্যাক ব্যাংকের কিস্তির টাকা সহ সংসার খরচ চাইলে সে আমার উপর নানান ভাবে নির্যাতন করতো।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর আমার স্বামী আবু কালাম বাড়িতে আসার কথা বলে আমাকে জাজিরা সাত্তার মিয়ার কাজী অফিসে নিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভিতর আমার স্বামী আবু কালাম তার ভাড়াটিয়া লোকদেরকে নিয়ে এবং সাত্তার কাজীর সহকারি কাজী শামসুল হকের মাধ্যমে দেশীয় ধারালো অস্ত্রের মুখে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক সাদা কাগজে দস্তখত নেয়। পরে আমাকে একা রেখে ওখান থেকে দলবল নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন জানতে পারি আবু কালাম আমার কাছ থেকে খোলা তালাক নামা কাগজে দস্তখত রাখে। একথা জানার পর আমি সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য জাজিরা থান এবং শরীয়তপুর আদালতের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হই।

জাজিরা কাজী অফিসের সাত্তার কাজী গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা আমি ওই সময় ঢাকা ছিলাম। আমার সহকারি কাজী শামসুল হক এ কাজ করেছেন। পারভিন আক্তার আমার ভাতিজি হয় আমি থাকলে এ কাজ কখনোই হতে দিতাম না।

এই বিভাগের আরো খবর