বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১   ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৯৮

‘বাবার জন্য রক্ত দিয়েছে, মাকে দিচ্ছে সান্ত্বনা’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০১৯  

কয়েকদিন ধরে বাবার খোঁজ না পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এসে ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্ত দিয়েছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী বৃষ্টি।

বুধবার দুপুরে সংবাদ পেয়েছে চকবাজারের আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়াদের মধ্যে তার বাবা ইব্রাহিমও ছিল। তার মরদেহ শনাক্ত করে সিআইডি। সংবাদ পেয়ে শরীয়তপুর থেকে বৃষ্টি ও তার মা রোকসানা (ইব্রাহীমের স্ত্রী) ঢাকায় পৌঁছান বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) ভোর ৪টায়। লঞ্চে সদরঘাটে নেমেই সরাসরি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে চলে আসেন তারা।

rain

মর্গে সাদা ব্যাগভর্তি বাবার মরদেহ দেখে নড়াচড়া করতে পারছিল না বৃষ্টি। শুধু নির্বাক তাকিয়ে ছিল।

বেলা সোয়া ১১টায় ঢামেক মর্গে ইব্রাহীমের মরদেহ হস্তান্তরের সময় খুব কান্না করছিলেন স্ত্রী রোকসানা। মাকে দেখে নিজের কান্না থামিয়ে বৃষ্টি মায়ের বুক আর পিঠ হাত বুলায়। মাকে ধৈর্য ধরতে সান্ত্বনা দেয়।

rain

নিহত রিকশাচালক ইব্রাহীমের একমাত্র মেয়ে বৃষ্টি। সে কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রামের আরবান স্লাম আনন্দ স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেনি জাগো নিউজ।

বাবা ইব্রাহীমের খুব আদরের ছিল বৃষ্টি। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বাবা বাসায় না ফিরলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে উদ্বিগ্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে থাকে সেও।

rain

ইব্রাহীমের ভায়রা মো. জাকির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, যেদিন থেকে ইব্রাহীম নিখোঁজ হয় অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি থেকেই তার স্ত্রী রোকসানা ও আমরা বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজতে থাকি। বৃষ্টিও বাবার খোঁজে অনেক ঘোরাঘুরি করেছে। আমাদের সঙ্গে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালসহ ঢামেকে এসেছে। মরদেহ না পেয়ে সেদিনই কামরাঙ্গীরচর ও চকবাজার থানায় জিডি করা হয়। যেখানেই গেছি সেখানেই সঙ্গে ছিল বৃষ্টি। পরে ফেসবুকে চকবাজারের একটি সিসিটিভির ফুটেজে রিকশা নিয়ে ইব্রাহীমকে দেখতে পেয়ে ঢামেকে এসে ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্ত দেই।

ডিএনএ টেস্টের জন্য তার যখন রক্ত নেয়া হচ্ছিল তখনও কোনো প্রতিক্রিয়া ছিল না বৃষ্টির।

rain

জাকিরের সঙ্গের কথা বলার সময়ই মর্গের মরদেহ গোসল করানোর ঘর থেকে মুখ দেখানোর জন্য ডাক দেয়া হয় স্ত্রী রোকসানাকে। বৃষ্টি অনেকবার বাবার মরদেহ দেখতে চাইলেও তাকে যেতে দেয়নি পরিবারের অন্য সদস্যরা।

ইব্রাহীমের অঙ্গার মরদেহ দেখে সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারান রোকসানা। সে সময়ও মাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো বৃষ্টি। বাবার মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে মলিন মুখে মায়ের সঙ্গে রওনা হয় সে।

rain

ইব্রাহীমের মরদেহ তার নিজ বাসা কামরাঙ্গীরচরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ সেখানে জানাজা শেষে কবর দেয়া হবে আজিমপুর কবরস্থানে। ইব্রাহীমের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে।

বৃহস্পতিবার সকালে শনাক্ত হওয়া মোট দুটি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। হস্তান্তর হওয়া অন্য মরদেহটি নুরুল হকের।

বুধবার (৬ মার্চ) সিআইডি ডিএনএ টেস্টের পর ১১ মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে। এর আটটিই বুধবার হস্তান্তর করা হয়। আজ দুটি করা হয়েছে।

rain

প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে আগুনের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এতে ঘটনাস্থলেই মোট ৬৭ জন মারা যান। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৪১ জন। তাদের মধ্যে আরও চারজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭১ জনে।

এই বিভাগের আরো খবর