শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৪৯

ফণী’র পূর্বাভাস নিয়ে এত সমালোচনা কেন

প্রকাশিত: ৪ মে ২০১৯  

আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। যাদের উদ্দেশে এই পূর্বাভাস তারা নিরাপদে থাকুক, এটাই পূর্বাভাসের উদ্দেশ্য। তারা সতর্ক হতে পেরেছেন কিনা, সেটাই জরুরি। ঘূর্ণিঝড়সহ যেকোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে আগে থেকে কিছু তথ্য দেওয়া সম্ভব। তবে সেসব তথ্যের বিষয়ে শত ভাগ নিশ্চিয়তা দেওয়া অসম্ভব।
এমন কথাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা আরও বলছেন, ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে— এ ধরনের পূর্বাভাসের কারণে অনেকে হয়তো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেই চাইবেন না। সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। কোনও কারণে ঝড়টি যদি শক্তি সঞ্চয় করে শক্তিশালী হয়ে আসে তাহলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। এর দায় কে নেবে?
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নিয়ে গত সাত দিনের পূর্বাভাসের তারতম্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
গত ২৭ এপ্রিল সাগরে সৃষ্টি হয় ‘ফণী’। টানা পাঁচ দিন সাগরে অবস্থানের ফলে শক্তি সঞ্চয় করে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এটি। এর প্রায় সাত দিন পর শনিবার (৪ মে) সকালে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আঘাত হানে ‘ফণী’। গতকাল সকালে ভারতের পুরীতে আছড়ে পড়ে শক্তিশালী এই ঝড়। তখন এর গতিবেগ ছিল ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার। এরপর প্রায় ২৪ ঘণ্টা ভারতে তাণ্ডব চালিয়েছে। সকালের দিকে দুর্বল হয়ে এর গতিবেগ যখন ১০০ থেকে ৮০ কিলোমিটার তখন সেটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। গতি কমে যায় ৬২ থেকে ৮০ কিলোমিটারে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আইনুন নিশাত বলেন, ‘আবহাওয়া অধিদফতর এবার ঝড়ের সময় যে পূর্বাভাস দিয়েছে তা প্রশংসার যোগ্য। এমন পূর্বাভাস না দিলে মানুষ সতর্ক হতে পারতো না। তারা তাদের ১০০ শতাংশ কাজ দেখিয়েছে।’ তবে তাদের এই পূর্বাভাসের ভাষা আরও বোধগম্য করা জরুরি বলে মত দেন তিনি। সেক্ষেত্রে আবহাওয়া অধিদফতরের কোনও ভূমিকা অবশ্য নেই মন্তব্য করে আইনুন নিশাত বলেন, ‘এই কাজটি করতে হবে উপর থেকে। ভাষা বোধগম্য করা গেলে সর্তকবার্তার সংকেত বোঝা, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া সাধারণ মানুষের জন্য সহজ হতো।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের লেকচারার বি এম রাব্বি হোসেইন বলেন, ‘আগে থেকে কোনও পূর্বাভাসই ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, মোটামুটি বলা সম্ভব।’
সমালোচনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা হবেই। আবহাওয়া যে পূর্বাভাস দিয়েছে তা একেবারেই ঠিক ছিল। কিন্তু ঝড়টি ভারতে আঘাত হানায় এর গতি কমে গেছে। ঝড়ের গতি প্রতিমুহূর্তে বদলায়। কোনও কারণে যদি ঝড়টি সরাসরি বাংলাদেশে আসতো তাহলে কী হতো— সেই চিন্তা থেকেই পূর্বাভাসগুলো দিয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হয়। আগে থেকেই যদি বলা হতো ঝড়ের গতি কমে যাবে তাহলে অনেকেই হয়তো শেল্টার সেন্টারে যেতেন না। আর ওই সময় যদি সত্যিই ২০০ কিলোমিটার বেগে বাংলাদেশে আঘাত হানতো তাহলে তার দায় কে নিতো? ভারতে যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে সে পরিমাণ ক্ষতি বাংলাদেশেও হতে পারতো। ফলে এই ধরনের পূর্বাভাসের প্রয়োজন আছে। মানুষকে নিরাপদ রাখার জন্যই সর্তক করা হয়।’
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমার যেভাবে ওয়ার্নিং দিয়েছি সেভাবে সবাই প্রস্তুতি নিয়ে শেল্টারে গিয়েছে। যারা ওয়ার্নিং ব্যবহার করেছেন তাদের সুবিধা হয়েছে। কিন্তু যারা দূরে ছিলেন তাদের জন্য এই ওয়ার্নিংয়ের কোনও মূল্য নেই।’
তিনি বলেন, ‘আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়ে সমালোচনার কিছু নেই। যারা সমালোচনা করছেন তাদের হয়তো এই পূর্বাভাস কোনও কাজে লাগেনি। সাংবাদিকদের অনেকেই আমাদের পূর্বাভাসগুলো ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করায় সাধারণ মানুষ দ্রুত ঝড়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। ঝড়টি কোথায় কী অবস্থায় আছে, কখন আঘাত হানতে পারে, তারও একটি পূর্বাভাস আমরা দিয়েছি।’
সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই পূর্বাভাসগুলো দিয়েছি। এর চেয়ে নতুন কোনও প্রযুক্তি এখনও আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘ঝড় যে দুর্বল হয়ে যাবে সেটা আমরা জানলেও অনেক সময় কৌশলগত কারণে বলি না। এতে মানুষ অসতর্ক হয়ে পড়তে পারে। আগে থেকে বলে দিলে অনেক সময় ক্ষতিও হয়। এছাড়া একেবারে নিশ্চিত করে তো বলা সম্ভব না যে ঝড়ের গতি কমে যাবে, কারণ বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।’
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সবাই যেন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। খাটো করে ঝড়কে যেন না দেখে সেইভাবেই তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে। মানুষের যাতে ক্ষতি না হয়, তারা যেন নিরাপদে থাকে।’

এই বিভাগের আরো খবর