শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৬২

প্রাধিকার ছাড়া বিশেষ ট্রাফিক সুবিধা নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক  

প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২২  

এখন থেকে কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রাধিকারের বাইরে বিশেষ ট্রাফিক সুবিধা নিতে পারবেন না। সোমবার সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বলা হয়, কেউ এ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে তার বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এ ধরনের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন করবে। 

রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সোমবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, জননিরাপত্তা সচিব, সুরক্ষা ও সেবা সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, আইজিপি, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান, ডিএমপি কমিশনারসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকসংশ্লিষ্ট একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে জানিয়েছে, উচ্চপর্যায়ের এ সভায় বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে বেশি প্রাধান্য পায় দপ্তর-সংস্থাপ্রধানদের মুভমেন্টের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি।

বলা হয়, উচ্চপদস্থ অনেক কর্মকর্তার চলাফেরার সময় রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থাকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ কারণে চরম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। এভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কর্মকাণ্ড দেখে ভুক্তভোগী কর্মব্যস্ত নগরবাসী ত্যক্তবিরক্ত। 

ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারের ঘটনা আর না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বৈঠক থেকে সংশ্লিষ্টদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে যেসব কর্মকর্তা এই সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে গোপন প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

যারা সিভিল সার্ভিসে আছেন, তাদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে এবং অন্য দপ্তর সংস্থার ক্ষেত্রে দপ্তরপ্রধানদের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।

তবে যেসব দপ্তর-সংস্থার প্রধানরা নিজেরাই এই সিদ্ধান্তের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বিশেষ সুবিধা নেবেন তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট হবে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

মোদ্দাকথা, প্রাধিকারের বাইরে কেউই মুভমেন্টের সময় স্বাভাবিক ট্রাফিকব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো বিশেষ সুবিধা নিতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু ট্রাফিক সুবিধার অপব্যবহার নয়, একশ্রেণির পদস্থ কর্মকর্তারা তাদের মুভমেন্টের সময় প্রাধিকারের বাইরে প্রটোকলের জন্য অতিরিক্ত গাড়িও ব্যবহার করে থাকেন।

এটাও কোনোভাবেই গ্রহণ করা হবে না বলে বৈঠক থেকে সতর্ক করা হয়। বলা হয়, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফর নিয়ে ইতোমধ্যে সরকার কঠোর হয়েছে।

তাই প্রয়োজনে গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও নতুন নির্দেশনা আসতে পারে। কেননা একটি গাড়ির পেছনে জ্বালানি এবং লোকবলসহ অনেক খরচ সরকারকে বহন করতে হয়।

এছাড়া প্রটোকলের নামে যদি কেউ বেশি গাড়ি ব্যবহার করেন, তাহলে সেটিও বড় ধরনের অসদাচরণ হিসাবে গণ্য হবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট, যত্রতত্র পার্কিং নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। ফুটপাতের যথাযথ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে কৃষিমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, বছরের পর বছর এসব সমস্যা চোখের সামনে বিদ্যমান আছে; কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।

এভাবে একটি দেশের রাজধানী চলতে পারে না। অনেকে এটাকে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য মানবিক বিষয় হিসাবে দেখতে বলেন। কিন্তু মানবিকভাবে দেখে তো একটি শহরকে এভাবে অচল করে দেওয়া যায় না।

যারা পথচারী এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ফুটপাত ব্যবহার করতে চান, তাদের কথাও উল্লেখ করেন কৃষিমন্ত্রী। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় বৈঠকে উপস্থিত একজন বলেন, ফুটপাতকে পুঁজি করে যারা অন্য ধরনের সুবিধা তালাশ করেন, তাদের বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। 

জানা যায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এই বৈঠক সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় হচ্ছে। তাই যারা এখান থেকে বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন, তারা এসব সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন। কিন্তু যারা সিদ্ধান্ত মানবেন না, তারা যে পর্যায়েরই হোন না কেন, তাদের বিষয়ে রিপোর্ট হবে। কড়া পদক্ষেপও নেওয়া হবে।

এছাড়া প্রাইভেট সিকিউরিটি নিয়ে ঢাকায় চলাচলকারীদের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়, সরকারি প্রাধিকার এবং ট্রাফিক আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কেউ বিশেষ কোনো সুবিধা নেওয়ার পরিস্থিতি কিংবা পরিবেশ তৈরি করতে পারবেন ন্যা। 

উচ্চপর্যায়ের কয়েকটি সূত্র যুগান্তরকে জানায়, মন্ত্রিসভার সদস্যদের জন্যও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। হাইকোর্ট ও মৎস্যভবন মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় মন্ত্রীদের গাড়ি অনেক সময় সিগন্যালে আটকে থাকে।

কিন্তু তাদের সামনে দিয়ে সাঁই সাঁই করে প্রটোকল নিয়ে পার হয়ে যান একশ্রেণির কর্মকর্তারা। এসব ঘটনায় অনেক সময় মন্ত্রীরা বিব্রত। কেউ কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবারের বৈঠকে এ ধরনের কঠোর নির্দেশনা আসে। 

সূত্র জানায়, সভায় ফুটপাত বেদখল থাকার বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। তবে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন নিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও ফলোআপ বৈঠক হবে। সেখানে প্রয়োজনে দুই মেয়রকেও আমন্ত্রণ জানানো হবে। 

ট্রাফিক প্রটোকলের সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর হাইকোর্ট মোড়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, ‘কিছু কিছু দপ্তর-সংস্থাপ্রধানদের গাড়ি সামান্য সময়ও সিগন্যালে থাকতে চায় না। তাদের প্রটোকলে থাকা গাড়ি থেকে সদস্যরা নেমে এসে তাগিদ দিতে থাকেন। এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। রাজধানীতে সবাই সময় বাঁচিয়ে চলতে চায়। আমাদের দায়িত্ব সবার সুবিধাটা দেখা। কিন্তু এ ধরনের অনেকের কারণে সাধারণ মানুষের গালি শুনতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে।

এই বিভাগের আরো খবর