শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১১২

প্রভাবশালীদের মদদেই বিদ্রোহ সংঘর্ষ

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২১  

এত কিছুর পর কোথাও ব্যর্থ হলে সেখানে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থী। তাদের প্রত্যক্ষ মদদেই দলের নির্দেশনা অমান্য করে মাঠে থাকছেন বিদ্রোহীরা। কেন্দ্রের কঠোর হুঁশিয়ারির পরেও এদের দমানো যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনে একদিকে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন-বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের ছাড় দেওয়া হবে না। চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও একই অবস্থা। দিন দিন প্রকট হচ্ছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এতে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। চলতি বছর অনুষ্ঠিত দুই ধাপের নির্বাচনে অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য। এ অবস্থায় শুক্রবার গণভবনে বসতে যাচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-সাংগঠনিক ও সমসাময়িক রাজনীতির পাশাপাশি চলমান ইউপি নির্বাচনের দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও খুনোখুনি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে দলের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতাদের আলোচনায়। নিজেদের দ্বন্দ্ব কিভাবে কমানো যায় তা গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে- সেসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা আসতে পারে ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা বলার পরও অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী থেকেই যাচ্ছে। এটা দুঃখজনক। এটা নিশ্চয় ভালো কোনো লক্ষণ নয়। তবে আমরা আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ভবিষ্যতে ভালো অবস্থানের জন্য অবশ্যই তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। এখানে বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। যারা এটা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮৩৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩৪১টিতে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩১টি ইউনিয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই ছিলেন না দলের প্রার্থীরা। যদিও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে এবার ইউপি নির্বাচনে নেই। এরপরও দ্বিতীয় ধাপের ভোটের এমন ফল দলের নীতিনির্ধারকদের ভাবাচ্ছে।

এরই মধ্যে সামনে এসেছে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন। ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে ১০০৩ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৫২৮৫ জনের মনোনায়নপত্র জমা পড়েছে। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা দলীয় প্রার্থীর দ্বিগুণ। দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ছিলেন ৮৯৭ জন। তৃতীয় ধাপে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে হাজারের উপরে। প্রথম দুই ধাপে ভোটের সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত প্রাণ গেছে। নিহত ব্যক্তিদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। তৃতীয় ধাপের ভোট ঘিরেও অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধরণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে বা তারা অংশ নিলে আওয়ামী লীগের এত বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকত না। যেহেতু বড় দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই আমাদের দলের অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশী নির্বাচনের মাঠে থেকে গেছে। তিনি বলেন, দল করতে হলে শৃঙ্খলা মানতে হবে। যারা শৃঙ্খলা ভেঙে নির্বাচন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক এলাকায় প্রার্থী মনোনয়নে স্থানীয় এমপি ও জেলার শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। অনেক জায়গায় দুর্নীতিবাজ, বিতর্কিত ব্যক্তিকে ফের চেয়ারম্যান প্রার্থী করা হচ্ছে। এতে স্থানীয়দের চাপে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন অনেকে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এক নেতা বলেন-প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের জন্য তৃণমূল যে রেজুলেশন পাঠিয়েছে তাতে অনেক সমস্যা ছিল। অনেকের নাম পেয়েছি, যারা সংগঠনের দুঃসময়ে ছিল না। সেখানে বিএনপি-জামায়াত থেকে আসা সুবিধাবাদী, রাজাকার পরিবারের সন্তান, দুর্নীতিবাজসহ নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে যুক্তদের নামও ছিল। আর এর পেছনে মদদ দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।

সম্প্রতি কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে সামনে রেখে তৃণমূলের বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের জোরপূর্বক ভোটদানে বাধ্য ও তার বিরোধী নেতাদের কাউন্সিলে উপস্থিত না থাকার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পাঁচথুবী ইউনিয়ন আ. লীগের কার্যনির্বাহী এক সদস্য বিষয়টির প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগও পাঠিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন- আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতা বিপুল অর্থের বিনিময়ে প্রহসনের বর্ধিত সভা আয়োজন করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আদর্শ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আবুল বাশার যুগান্তরকে বলেন, আমরা সবাইকে ডেকে, সবার উপস্থিতিতে ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা তৈরি করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, আমরা সব কিছু যাচাই-বাছাই করেই যোগ্যদের দলীয় মনোনয়ন দিয়ে থাকি। তৃণমূল থেকে ভুল তথ্য পাঠানোর বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হয়েছে। তবে প্রার্থী বাছাইয়ে সময় স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসলে তৃণমূলকেও তো আমরা পর্যাপ্ত— সময় দিতে পারছি না। তারাও আমাদের এ সময় স্বল্পতার কথাটা বলছেন।

এই বিভাগের আরো খবর