শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৭০

পত্রিকায় বিজ্ঞাপ‌ন দিয়ে ৭২ বছর বয়সে বিয়ে

প্রকাশিত: ১৩ আগস্ট ২০২০  

অনেকে নানা কুমন্তব্য করেছেন। তবে তার সিদ্ধান্ত বদলাননি। নিঃসঙ্গতা কাটাতে ৭২ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন ভারতের শ্রীরামপুরের বড়বাগানের বাসিন্দা, কলেজশিক্ষক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক মাস আগে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপ‌ন দেন সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ। বিজ্ঞাপ‌নের সূত্রে রিষড়ার বাসিন্দা ইরা রায়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। গত ২৭ জুলাই রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। গত সোমবার সমরেন্দ্রবাবুর ফ্ল্যাটে সামাজিক বিয়ে হয়। পুরুষ পুরোহিত নন, সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ করে বিয়ে দিলেন কবি মীনা রায়।

সমরেন্দ্র ২২ বছর রিষড়ার বিধানচন্দ্র কলেজে বাংলা পড়িয়েছেন। ২০০৮ সালে অবসর নেন। তার পরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বর্তমানে তিনি পূর্ব বর্ধমানের কালনায় বেসরকারি বিএড কলেজের অধ্যক্ষ। স্ত্রী মারা গেছেন। মেয়ে বিদেশে থাকেন। ফলে তাকে একাই থাকতে হতো।

এই বয়সে বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন?

সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনি সঙ্গীর অভাব বোধ করছেন। ছাত্রছাত্রী, পরিচিতেরা তাকে রান্না করে দিতেন। তবে লকডাউনের শুরুতে সমস্যায় পড়েন। দুই দিন কার্যত না খেয়ে কাটাতে হয়। পরে হোম-সার্ভিসের মাধ্যমে খাবার আনাতে হয়। তার কথায়, ‘আমি সুস্থ সবল। তবে ভবিষ্যতে অসুস্থ হলে অথবা বিশেষ পরিস্থতি তৈরি হলে পাশে কেউ থাকলে সুবিধা হবে। এতদিন চাকরি করেছি, আমার অবর্তমানে স্ত্রী আমার পেনশন পাবেন। ফলে তার দিন ভালোভাবেই চলে যাবে।’

কনে ইরা রায়ের বয়স ৩৬ বছর। বাবা মারা গেছেন। মা-মেয়ের অনটনের সংসার। কলকাতায় একটি সংস্থায় কাজ করতেন। বছর খানেক আগে সংস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। ইরা বলেন, ‘ভেবেছিলাম, বিয়ে করব না। এক আত্মীয় কাগজে বিজ্ঞাপনের কথা জানান। সব দেখে মনে হলো সুযোগ এসেছে, দেখি। এমন শিক্ষিত, রুচিশীল, মানুষই চেয়েছিলাম। আমি খুশি।’

সমরেন্দ্রনাথ বলেন, ‘কিছু মানুষ যেমন কুমন্তব্য করেছেন, আমার পরিস্থিতি বুঝে অনেকে আবার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগতও জানাচ্ছেন।’

বয়স্কদের মন, তাদের নিঃসঙ্গতা কাটানো নিয়ে কাজ করছেন অমিতাভ দে সরকার। সমরেন্দ্রনাথের বিয়ের খবর শুনে তিনি উচ্ছ্বসিত। তার কথায়, ‘বয়স্কদের সমস্যা, একাকীত্ব বোঝার মানসিকতা আমাদের নেই। অনেকে এর ভুল ব্যাখ্যা করেন। তবে এই মানসিকতা বদলাচ্ছে। একাকীত্ব কাটাতে বয়স্ক মানুষজন নিজেদের মনের মতো সঙ্গী খুঁজছেন। এভাবে কেউ যদি ভালো থাকেন, জীবনে বাঁচার রসদ পান, তাতে অন্যদের আপত্তি কোথায়! এতে তো খুশি হওয়ারই কথা।’

মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপ ব‌লে‌ন, ‘মানুষ একা থাকতে পছন্দ করে না। ফলে সঙ্গীর চাহিদা থাকে। ওর মধ্যেও একাকীত্ব নিশ্চয়ই কাজ করেছে। তাই আমার মনে হয় উনি ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। একজন বয়স্ক মানুষের সমস্যা বা চাহিদা তার জায়গা থেকেই দেখা উচিত। তার ভাবনাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

অভিনেতা দীপঙ্কর দে পঁচাত্তর বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদাহরণও রয়েছে। মোহিত, অমিতাভরা চাইছেন, সমরেন্দ্রদের হাত ধরে এমন উদাহরণ আরও তৈরি হোক। ভালো থাকু‌ন নিঃসঙ্গ মানুষ।

এই বিভাগের আরো খবর