শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৮২

নফল রোজার মাস শাবান

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০১৯  

মাহে রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে আসে শাবান মাস। রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে শাবান মাস। ইসলামের দৃষ্টিতে শাবান মাস বিভিন্ন কারণে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসকেই মহানবী (সা.) ‘শাবানু শাহরি’ (শাবান আমার মাস) বলে অভিহিত করেছিলেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব ও শাবানজুড়েই তিনি রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। এর ধারাবাহিকতায় রজবের শুরু থেকেই রাসুল (সা.) দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রমাজান।’ (শুআবুল ইমান, হাদিস : ৩৫৩৪)

দোয়াটির অর্থ—হে আল্লাহ, আপনি আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দিন এবং আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন (রমজান পর্যন্ত আমাদের আয়ু বৃদ্ধি করে দিন, যাতে আমরা রমজানে যথাযথ আমল করতে পারি)।

রমজানের আগমনের জন্য মহানবী (সা.) দিনক্ষণ গণনা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের (দিন-তারিখের হিসাবের) প্রতি এত  বেশি লক্ষ রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩২৫)

মহানবী (সা.) শাবান মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখতেন। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৩৬)

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত বেশি (নফল) রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের সামান্য কয়েক দিন ছাড়া সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রমজানের পর কোন মাসের রোজা সবচেয়ে বেশি ফজিলতপূর্ণ? উত্তরে তিনি বলেন, শাবানের রোজা রমজানের সম্মানার্থে। (তিরমিজি, হাদিস : ৬৬৩)

মুসলিম মনীষীদের সম্পর্কে ইতিহাসে উল্লেখ আছে, তাঁরা বছরের ছয় মাস আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন, আল্লাহ যেন তাঁদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দেন। আর ছয় মাস দোয়া করতেন, আল্লাহ তাআলা যেন তাঁদের রমজান মাসের আমলগুলো কবুল করে নেন।

আর রাসুল (সা.) এ মাসের বেশির ভাগ দিন রোজা রাখতেন। উসামা বিন জায়েদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছি, হে আল্লাহর রাসুল, শাবান মাসে আপনি যেভাবে রোজা রাখেন, সেভাবে অন্য কোনো মাসে রোজা রাখতে আমি আপনাকে দেখিনি। রাসুল (সা.) বলেন, রমজান ও রজবের মধ্যবর্তী এ মাসের ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। এটা এমন এক মাস, যে মাসে বান্দার আমলকে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। আমি চাই, আল্লাহর কাছে আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোজাদার।’ (নাসাঈ)

এই হাদিস থেকে তিনটি বিষয় জানা যায়। এক. শাবান মাসের বেশির ভাগ দিন রাসুল (সা.) রোজা রাখতেন। দুই. এ মাসের ব্যাপারে সাধারণত মানুষ উদাসীন ও নির্লিপ্ত থাকে। তিন. এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হয়।

লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল মদিনা, নবাবপুর, ঢাকা