শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৪৪

ধানের বাম্পার ফলনেও দিশেহারা চাষিরা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০১৯  

হাওরজুড়ে চলছে শেষ পর্যায়ের ধান কাটার মহোৎসব। আগামী ৫/৬ দিনের মধ্যে ধান কাটা প্রায় শেষ হয়ে যাবে বলে জানান কৃষকেরা। কিন্তু দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না চাষিদের। একদিকে ধানের চিটা রোগে ক্ষতিগ্রস্ত, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, অন্যদিকে শ্রমিকের উচ্চ মজুরিতে দিশেহারা কৃষক।

ধানের বাজার দর কম থাকায় ভাগেও ধান কাটতে রাজি হয় না শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে ক্ষেতে রেখেই অগ্রিম ধান বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে এবার বোরো চাষে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাওরের কৃষক।

হাওরের কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এবার বোরো মৌসুমে সম্পূর্ণ অনুকূলে ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশ, সময়মতো সার-বীজ-কীটনাশক ও সেচ সুবিধা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

কিছু কিছু এলাকায় বিআর-২৮ জমিতেই চিটা দেখা দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক কৃষক। তাই দামের ব্যাপারে সরকারি কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাম্পার ফলনের প্রকৃত লাভ ঘরে উঠবে না বলে অভিযোগ কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩টি উপজেলায় সরকারিভাবে ১ লাখ ৬৪ হাজার ২১৭ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ থেকে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৪৯৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সিংহভাগ সহায়ক হয়ে থাকে হাওরবেষ্টিত উপজেলাগুলোর এলাকা হতে। হাওরে আগাম জাতের বিআর-২৮ ধানের আবাদ বেশি করা হয়েছিল বেশ কিছু এলাকায়। আর বিআর-২৮ জমিতেই বেশি মাত্রায় চিটা দেখা দেয়। যার ফলে কৃষকেরা আগাম ধান ঘরে তুলতে পারেনি।


কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রামসহ কয়েকটি হাওর উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা এখন ধানকাটার পাশাপাশি ব্যস্ত সময় পার করছেন ধান বাড়িতে আনা, মাড়াই ও বিক্রির কাজে। কৃষাণীরাও ব্যস্ত বছরের একমাত্র ফসলটি ঘরে তুলতে। কারো যেন দম ফেলবার ফুরসত নেই।

হাওরের চারদিক যেন ধান কাটাকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

ইটনা উপজেলার ধনপুর গ্রামের স্থানীয় কৃষক লাল মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে মণপ্রতি ধান চাষে খরচ পড়েছে সাত’শ টাকার মতো। কিন্তু বর্তমান বাজার মূল্য মণপ্রতি পাঁচশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। তবে এই ধান কয়েকদিন ধরে রাখা গেলে হয়তো দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু হাওরাঞ্চলে সেই ধরনের কৃষকের সংখ্যা একেবারেই কম।

একই এলাকার কৃষক মুকুল বলেন, আমি দুই একর জমিতে বিআর-২৮ ধান রোপণ করেছিলাম। এ তিন একর জমিতে চিটা রোগে ধানে মার খেয়েছি। আর আমরা ধার-দেনা করে চাষাবাদ করেছি। পাওনাদার ধান কাটার আগেই বাড়ি এসে বসে থাকে টাকা নিতে। ফলে ক্ষেত থেকে ধান কাটার পরই তা বিক্রি করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না অধিকাংশ কৃষকের।

পুরো মৌসুমে শ্রম দিয়েও ধানের প্রকৃত দাম না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন অষ্টগ্রাম উপজেলার আব্দুল্লাহপুর গ্রামের কৃষক জমসেদ ব্যাপারী।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “এক মণ ধানের দরের চেয়েও বেশি একজন কৃষি শ্রমিকের মূল্য। তাই ঋণ করে শ্রমিকের মজুরি দিতে হয়েছে। আর এখন যদি ধানের ন্যায্য দাম না পাই তাহলে অন্য পেশায় চলে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।”

নতুন ধান উঠতে শুরু করার পর থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় মুখর হাওর এলাকায় ধান কেনা-বেচার প্রধান হাট চামড়া বন্দর। সেখানের আড়তদাররাও ধানের বাজার মূল্য কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

চামড়া বন্দরের আড়তদার এম এ হক বলেন, “চালের বাজার নিম্নমুখী। চালকল মালিকেরা বেশি দামে ধান কিনতে চাচ্ছেন না। ফলে অভাবী কৃষকেরা কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি বলেন, ধানের বর্তমান বাজার মূল্য, কাঁচা ধানের ক্ষেত্রে পাঁচশ টাকা, শুকানো হলে দাম পাঁচশ পঞ্চাশ টাকা।

কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো সার-বীজ-কীটনাশক ও সেচ সুবিধা পাওয়ায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু দামের ব্যাপারে সরকারি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। নয়তো কৃষকেরা বোরো চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

এই বিভাগের আরো খবর