শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৮

দখলদারদের কবলে মুন্সিগঞ্জের যাত্রী ছাউনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

মুন্সিগঞ্জের যাত্রী ছাউনিগুলো পুরোপুরি হকার ও দোকানদারদের দখলে। যাত্রীছাউনিগুলোতে শোভা পাচ্ছে  চা, সেলুন, মোবাইল লোডসহ ফুলের দোকান। কোথাও কোথাও তা পরিণত হয়েছে ভাগারে। অথচ জায়গা সংকটের কারণে জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়ে রোদ-বৃষ্টিতে সড়ক ও মহাসড়কের মোড়গুলোতে দাঁড়িয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা

সরেজমিনে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে যানবাহনের জন্য যাত্রীদের তৈরি করা ২২টি যাত্রী ছাউনির মধ্যে ৯টি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে ১৩টি ছাউনি আছে। যার ৬টি দোকানদারদের দখলে চলে গেছে। জরাজীর্ণ ২ থেকে ৩টি কোনমতে চলছে। বসার জায়গা না থাকায় যাত্রীরা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সড়কে বা সড়কের মোড়ে যানবাহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। যানবাহনগুলোও দাঁড়াচ্ছে যত্রতত্র স্থানে। ফলে রাস্তায় নৈরাজ্য ও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলায় তাদের তত্বাবধানে মোট ২২টি যাত্রী ছাউনি ছিল। এর মধ্যে বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩টি, সিরাজদিখান উপজেলায় ২টি, শ্রীনগর উপজেলায় ২টি, লৌহজং উপজেলায় ২টি, টঙ্গিবাড়ি উপজেলায় ২টি এবং গজারিয়া উপজেলায় ২টি সহ ১৩ যাত্রীছাউনি আছে। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে ২০১৪ সালে লৌহজংয়ের ছাউনিটি নদীতে বিলীন ও ২০০০ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে সড়ক প্রসস্থ করার জন্য সড়ক ও জনপদ অধিদফতর কর্তৃক ৮টি যাত্রীছাউনি ভেঙে ফেলা হয়। যা আর পুনঃনির্মাণ বা সংস্কার করা হয়নি। 

সরেজমিনে টংঙ্গীবাড়ি উপজেলার আলদি বাজার যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, ছাউনিটির ভিতরে  মিতালী ইলেকট্রনিক্সের সাউন্ড বক্স, টেলিভিশন, নষ্ট ইলেকট্রিক মলামাল বিভিন্ন যায়গায় ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। ভিতরে জীবন বিশ্বাস নামে এক নরসুন্দর সেলুন ব্যবসা করছেন। ছাউনিটির ঠিক মাঝামাঝি রয়েছে একটি চায়ের দোকান।

শ্রীনগর উপজেলার কেসি ও বালাশুর যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, ভাগ্যকুল পরিবহন ও নগর পরিবহনের ঢাকাগামী দুটি বাস কাউন্টার আছে। ছাউনির ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টার ও দোকানের মালামাল দিয়ে যাত্রীদের বসার যায়গা দখল করে রাখা হয়েছে।

সদর উপজেলার সিপাহিপাড়া গিয়ে দেখা যায়, ছাউনির ভিতর ফুল, সেরোয়ানী, মোবাইলের লোডের দোকান। যাত্রীদের বসার জন্য দুইটা ভাঙা সিট ছিল। কিন্তু তাও দোকানদাররা দোকানের মালামাল দিয়ে দখল করে রেখেছে। সিপাহি পাড়ার যাত্রী ছাউনি দখল করা দোকানদার  মো. নজরুল ইসলাম  বলেন, আমরা যাত্রীদের কোন কষ্ট দেইনা। তাদের মন চাইলে এখানে বসেন।  
সিরাজদিখান উপজেলার যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখা যায়, ছাউনিটির ভিতরে গাড়ির ভাঙা যন্ত্রপাতি, কাঠ, ময়লা স্তুপ আকারে জমাট হয়ে আছে। ছাউনিটির বিভিন্ন স্থান থেকে পলেস্তরা খসে পড়েছে। শৌচাগারটিও নষ্ট হয়ে আছে। এই ছাউনিটি দোকান দারের দখলে না থাকলেও তা যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী।

স্থানীয়রা ছাউনি প্রসঙ্গে বলেন, এ ছাউনিতে স্থানীয় বখাটেরা প্রতিদিন আড্ডা দেয়, সন্ধ্যার পরপর মাদকের আসর বসে। কেউ কিছু বলতে গেলে তাকে মারধর করে। যাত্রী ছাউনিগুলোতে এসব চললেও এ বিষয়ে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা পালন করছে। 
 জেলার লৌহজংয়ের খেতের পাড়া ছাউনিতে  দেখা যায়, ছাউনিটির ভিতরে ২টি ভ্যানগাড়ি, তেলের ড্রাম ও গাড়ির ভাঙা যন্ত্রাংশ পড়ে আছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে যাত্রীরা ছাউনির বিপরীত পাশের চায়ের দোকান এবং সড়কের মোড়ে গাড়ির জন্য সাধারণ যাত্রীরা অপেক্ষা করছে।  

চাকরি হারানোর ভয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা বিভিন্ন মানুষের মুখে শুনেছি ১৩টি ছাউনি দখল করে দোকানপাট করা হচ্ছে। আমরা যখন তদন্ত করতে যাই, দখলদাররা খবর পেয়ে দোকানের মালামাল সরিয়ে রাখে। আমরা  সেখান থেকে চলে আসলেই তারা আবারও দোকান সাজিয়ে বসেন। 

তিনি আরও বলেন, আমরা যাদের কাছে ছাউনির সঙ্গে থাকা দোকান লিজে (ভাড়া) দিয়েছি তাদের সহযোগিতায় ওই ছাউনিগুলোতে দোকানদাররা পসরা নিয়ে বসছে বলে জানতে পেরেছি। আমরা লিজ নেয়া দোকানদারদের সাবধান ও দখল মুক্ত করে দিতে বলেছি। বলেছি হাতেনাতে ধরতে পারলে তাদের লিজ বাতিল করে দেয়া হবে।

জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা অবৈধভাবে যাত্রী ছাউনি গুলোকে দখল করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাত্রী ছাউনি দখলকারী দোষীদের ব্যাপারে দ্রুত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবেতিনি আরও বলেন, আমি নিজেও কয়েকটা ছাউনির দূরাবস্থা দেখেছি। জেলা পরিষদের সভায় আমি ছাউনির সকল অবস্থা তুলে ধরব। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহদয়ের মাধ্যমে দখলমুক্ত করে সকল যাত্রী ছাউনির মেরামতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করব।
২৭-০২-২০১৯
 

এই বিভাগের আরো খবর