বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭৫

ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় মিলেছে

তরুণ কণ্ঠ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০১৯  


ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় মিলেছে। নিহতদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়, পাঁচজনের বাড়ি চাঁদপুরে। বাকি তিনজনের বাড়ি সিলেট, মৌলভীবাজার ও নোয়াখালী জেলায়।    

নিহত ব্যক্তিরা হলেন হবিগঞ্জ শহরতলীর বড় বহুলা গ্রামের আলমগীর আলমের ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (১২), আনোয়ারপুর এলাকার বাসিন্দা ও জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি আলী মোহাম্মদ ইউসুফ (৩২), বানিয়াচং উপজেলার তাম্বুলিটুলা গ্রামের সোহেল মিয়ার আড়াই বছরের মেয়ে আদিবা আক্তার সোহা ওরফে ছোঁয়ামণি ও মদনমুরত গ্রামের আল-আমিন (৩০), চুনারুঘাট উপজেলার উবাহাটা গ্রামের পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ফটিক মিয়া তালুকদারের ছেলে রুবেল মিয়া তালুকদার (২৫), মিরাশী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের আবুল হাসিম মিয়ার ছেলে সুজন মিয়া (৩০) ও একই উপজেলার আহমদাবাদ গ্রামের পিয়ারা বেগম (৩২)।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম রাজারগাঁও গ্রামের মজিবুর রহমান (৫০) ও তাঁর স্ত্রী কুলসুমা বেগম (৪২), সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের উত্তর বালিয়া গ্রামের প্রবাসী বিল্লাল বেপারীর মেয়ে ও শহরের নাজিরপাড়া দেওয়ান বাড়ীর মোহন দেওয়ানের স্ত্রী ফারজানা (১৮), হাইমচর উপজেলার কাকলী (২০) ও মরিয়ম (৪), সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রিপন মিয়া (২৫), নোয়াখালীর মাইজদির রবি হরিজন (২৩) ও মৌলভীবাজারের জাহেদা খাতুন (৩০)।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় কসবার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা এবং সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম অভিমুখী উদয়ন এক্সপ্রেসের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক যাত্রী। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। আহতদের কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল, আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছান রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এর আগে ঘটনাস্থলে আসেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন।

রেলপথমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এরই মধ্যে দুর্ঘটনার তদন্তে রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর থেকে চারটি এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটিসহ মোট পাঁচটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

দুর্ঘটনার নিহতদের শনাক্ত করে তাদের পরিবারের সদস্যদের রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকা করে অর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী। এ ছাড়া আহতরা চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা করে পাবেন। এর আগে জেলা প্রশাসন লাশ পরিবহন ও দাফনের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়।

ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালকসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা শরিফুল আলম জানান, তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক (লোকো মাস্টার) তাসের উদ্দিন, সহকারী চালক (সহকারী লোকো মাস্টার) অপু দে ও গার্ড আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল—জানতে চাইলে মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যালম্যান মোহাম্মদ সারোয়ার জামাল বলেন, ‘উদয়ন এক্সপ্রেস ও তূর্ণ নিশীথা ট্রেন দুটির এই স্টেশনে ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন এক্সপ্রেস চট্টগ্রামের অভিমুখে প্রধান লাইন থেকে ১ নম্বর লাইনে তখন প্রবেশ করছিল। আর ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথাকে মন্দবাগ রেলস্টেশনে থামার জন্য সিগন্যাল  দেওয়া হয়েছিল।’

‘উদয়নের অনেকগুলো বগিই তখন ১ নম্বর লাইনে চলে এসেছিল। এ সময় সিগন্যাল অমান্য করে তূর্ণা নিশীথা স্টেশনে না থেমে প্রধান লাইন বরাবর এগোতে থাকে। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের শেষদিকের কয়েকটি বগির ওপর তূর্ণা নিশীথার কয়েকটি বগি উঠে যায়। এতে উদয়ন এক্সপ্রেসের অন্তত তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়,’ যোগ করেন সিগন্যালম্যান সারোয়ার জামাল।

ঘটনার পর পরই মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশের এলাকার শত শত মানুষ ছুটে আসেন। তাঁরা প্রথমে উদ্ধারকাজ শুরু করেন। যদিও সকালের দিকে স্টেশন এলাকায় হাজার হাজার মানুষের জটলা তৈরি হয়। এতে উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে এলাকাবাসী এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন, ‘গতকাল গভীর রাত থেকে এই এলাকায় ঘন কুয়াশা তৈরি হয়। খুব দূরের জিনিস দেখা যাচ্ছিল না। হয়তো এমনও হতে পারে, তূর্ণা নিশীথার চালক সেই সিগন্যাল দেখতে পারেননি। অথবা তিনি ভুল করে সিগন্যাল অমান্য করেছেন। যার ফলে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ দুটোর যেকোনোটাই ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন এলাকাবাসী।

এই বিভাগের আরো খবর