মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১   ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২১৫

গণসংযোগ আর প্রচার-প্রচারণায় জমে উঠেছে ইউপি নির্বাচন

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ নভেম্বর ২০২১  

প্রাার্থীরা বলছেন-ভোট চাই, সেই সঙ্গে দোয়া করবেন আর আমরাতো আপনার সাথে আছি। প্রার্থী ও ভোটারা হাসি মুখে এইসব আলাপন করছেন। চায়ের কাপের ধোওয়ার সাথে উচ্ছাস আর আবেগের মাখামাখিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে হাট-বাজারে এবং উঠোনে। তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮শে নভেম্বরে। এবারেও দলীয় প্রতীকে হতে চলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের আগ্রহ ও কৌতূহলের যেন শেষ নেই। কেমন হবে এবারের নির্বাচন? দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সুবিধে কী?

এসব প্রশ্ন এখন ভোটারদের মুখে মুখে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণায় ও গণসংযোগে ব্যস্তা সময় কাটাচ্ছেন। পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন অলি-গলি, রাস্তা-ঘাটে, বাসা-বাড়ি, চায়ের দোকান ও স্থাপনায়। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে কোমর বেঁধে নির্বাচনী মাঠে দিন-রাত সময় দিচ্ছেন। তারা ভোটারদের কাছে গিয়ে তাদের আদর্শের বয়ান সহ ইউনিয়নে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছেন।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে কালাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা দলবেঁধে গণসংযোগ, প্রচার ও প্রচারণায় নির্বাচনী এলাকা সরগরম করে তুলছেন। তারা অটোরিকশা ও ইজিবাইক মাইক বেঁধে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে মোট ২শ ৩৬ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন।

এরমধ্যে উপজেলার পুনট ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. আব্দুল কুদ্দুস ফকির একক প্রার্থী থাকায়, সেখানে তিনি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন । একই ভাবে পুনট ইউপির ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য এবং সাধারণ ইউপি সদস্য ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত হচ্ছেন। একই ভারে জিন্দারপুর ইউনিয়নের ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিনা-প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন। বিনা-প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ীরা ব্যতীত আগামী ২৮শে নভেম্বরে তৃতীয় ধাপে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্যসহ মোট ২শ ২৭জন প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন।

এরমধ্যে ৯ জন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাসদ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন-মাত্রাই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আ.ন.ম.শওকত হাবিব তালুকদার লজিক নৌকা প্রতীকে এবং একই ইউপিতে মাত্রাই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধক্ষ্য মো. মনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

উদয়পুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো.ওয়াজেদ আলী দাদা নৌকা প্রতীকে এবং একই ইউপিতে, উদয়পুর ইউনিয়ন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. মিলন হোসেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন আর জাসদ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. তারেকুল ইসলাম সরকার মিলন মশাল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। জিন্দারপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো.জিয়াউর রহমান জিয়া নৌকা প্রতীকে এবং একই ইউপিতে উপজেলার বিএনপি’র সাবেক যুগ্ম সাধারণ-সম্পাদক মো. আব্দুস সবুর স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোটর-সাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন এবং আহম্মোদাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো.আলি আকবর আলী এবং একই ইউপিতে আহম্মোদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সদস্য নূর মোহাম্মদ মন্ডল কালাম স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মোটরসাইকেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, জাসদ মনোনীত ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাদের প্রতীক নিয়ে এখন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।

এদিকে সংরক্ষিত নারী সদস্য ৪২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৭৬ জন প্রার্থীও নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে মাঠে-ঘাটে কোমর বেঁধে অবিরাম প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী সময় ঘনিয়ে আসার সাথে ইউপিগুলোর বাজার, রাস্তা-ঘাট, অলি-গলি, চায়ের দোকান, হোটেল, বিভিন্ন স্থাপনা ও বসত বাড়ির সামনে পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে। প্রার্থীরা সবাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তাছাড়া অন্যান্য প্রার্থীরাও বলেন জনগণের ইচ্ছাতেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাই জনগণ নির্বাচনে ভোট দিয়ে জয় করবেন এ কামনা করছেন তারা। এদিকে নারী প্রার্থীদের সাথে মাঠে নেমেছেন স্বামী সন্তানরাও। তেমনি পুরুষ প্রার্থীদের সাথেও স্ত্রী সন্তানরা বসে নেই। সবার আশা ভোট যুদ্ধে জিততেই হবে। তবে সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার ব্যাপারে কোনও প্রার্থীদেরকেই নিরাস করছেন না। প্রার্থীরা ব্যবসায়ী ভোটারদের দোকানে গিয়েও ভোট প্রার্থনা করছেন। শুধু তাই নয় মাঠে কর্মরত প্রমিকদের কাছেও যাচ্ছেন ভোটের আশায়। দিচ্ছেন নানা ধরণের প্রতিশ্রুতিও।

আহম্মোদাবাদ ইউনিয়নের তাজুল হোসেন নামে এক ভোটার জানান, ভোট আসলে প্রার্থীদের আনা-গোনার কমতি থাকে না। ভোট শেষ হলেই তাদের দেখা পাওয়া যায় না। নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে, তারা আর সেই মোতাবেক কাজ করে না। তারা নির্বাচনের পর সব কথা ভুলে যায়। উদয়পুর ইউনিয়নের আরেক ভোটার সিরাজুল ইসলাম জানান, স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অনেক সময় সংঘাত-সংঘর্ষ ঘটে। অতীতেও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো।

এ নির্বাচনের ভোটের দিনে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোটারা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা নিলেই সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে আসবে। বাড়বে ভোট প্রদানের হার। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা জনগণের যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনে সহায়ক হবে। উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মো.জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আমি নির্বাচিত হতে পারলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংগঠনিক সম্পাদক, জয়পুরহাট-২ আসনের এমপি ও হুইপ আবু সাঈদ আল-মাহমুদ স্বপন’র হাতকে শক্তিশালী করবো। এই নির্বাচনে ভোটারা আমাকে আবারও এই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলে আওয়ামী লীগকে সু-সংগঠিত করাসহ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো। আহম্মোদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটর সাইকেল প্রতীক) নূর মোহাম্মদ মন্ডল কালাম বলেন, জনগণের ইচ্ছাতেই নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হয়ে ছিলাম। এবারও জনগণের ইচ্ছাতেই প্রার্থী হয়েছি। কারণ এর আগের চেয়ারম্যান এ ইউনিয়নে কোন উন্নয়ন করেনি, এমনকি জনগণের সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগও রাখেনি। এই নির্বাচনে জনগণ যদি শান্তিপ্রিয় ভাবে ভোট দিতে পারলেই আমি চেয়ারম্যান পদে বিজয় হবো। আর যদি আওয়ামীলীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর ক্যাডার বাহিনীরা ভোটের আগের দিন বা ভোটের দিনে জনগনের ভোট কেটে নেয়, তাহলে আমি চেয়ারম্যান হতে পারবো না। আমিসহ ভোটারা চাচ্ছে এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক। এই নির্বাচন বিষয়ে কালাই সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক মো. মাহফুজার রহমান মন্ডল সাধন বলেন, এক সময় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া ভোট হয়েছিলো।

তখন ভোটাদের মাঝে ভোট দেওয়া অনেক ইমেজ দেখা গেছে। প্রার্থীর সংখ্যাও থাকতো অনেক। ভোটারা তাদের নিজের পছন্দ অনুযায়ী প্রার্থীদের ভোট দিতেন। এখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের ভাল-মন্দ দুটি দিক-ই রয়েছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে ক্ষমতাশীন দলের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়াবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। আর এর একটি ভাল দিক আছে, সেটি হচ্ছে- দলের একনিষ্ঠ কর্মীরা প্রার্থী হওয়ার সুযোগও রয়েছে। কালাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম বলেন, কালাই উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ১০ জন প্রার্থী। সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৪৬ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ১৮০ জন প্রার্থী। তার মধ্যে উপজেলার পুনট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্ডিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন। একই ভাবে পুনট ইউপির ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য এবং সাধারণ ইউপি সদস্য ৩, ৬ ও ৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত হচ্ছেন। এছাড়াও জিন্দারপুর ইউনিয়নের ৩ নং সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য বিনা-প্রতিদ্বন্ডিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।

তফসিল অনুযায়ী তৃতীয় ধাপে উপজেলায় পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮শে নভেম্বরে। এই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা এক লাখ, তিন হাজার ৪শ ৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫১ হাজার ৮ জন এবং মহিলা ভোটার ৫২ হাজার ৪শ ৭৮ জন। এই ইউপি নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি চলছে। আমি আশা করি এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভাবে ভোট গ্রহণ হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর