শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৭০

কেনেডি হত্যাকাণ্ড

সৌমিক অনয়

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

সামরিক শক্তি থেকে শুরু করে গোয়েন্দাগিরি সকল ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ক্ষেত্রে কয়েকশ’ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন। আইন-কানুন রক্ষাসহ অপরাধ নিধনেও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর খ্যাতি রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও পৃথিবীর সর্বক্ষমতারধর ব্যক্তি হিসেবে গন্য করা হয়। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের প্রেসিডেন্টদের নিরাপত্তার থেকে কয়েক গুণ বেশি। কিন্তু ভেবে দেখেছেন নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থাকা স্বত্ত্বেও কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা সম্ভব? তাও আবার মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় ও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপতিকে এবং সেই হত্যা রহস্যও যদি অমীমাংসিতই রয়ে যায়? হ্যাঁ, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি এর হত্যাকান্ড সম্পর্কেই বলছি। যুক্তরাষ্ট্রের খুব কম প্রেসিডেন্টকেই মানুষ মনে রাখে এবং সেই অল্প কিছু প্রেসিডেন্ট এর মধ্যে জন এফ কেনেডি অন্যতম। তার ক্ষমতা এবং জনপ্রিয়তা দুটিই ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু কীভাবে হত্যা করা হয় কেনেডিকে? আর কেনই বা হত্যা করা হয় মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টকে?

 

1.কেনেডি হত্যাকাণ্ড

জে এফ কে পুরো নাম জন ফিট্‌জেরাল্ড কেনেডি। জন্ম ১৯১৭ সালের ২৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের ব্রুকলিনে এক আইরিশ পরিবারে। কেনেডির পিতা জোসেফ প্যাট্রিক কেনেডি ছিলেন ইংল্যান্ডে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। পিতার প্রেরণায় শৈশব থেকেই কেনেডি রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত তিনি ডেমক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৫২ সালে কেনেডি সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হয় এবং এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তার গুরুত্ব বাড়তে শুরু থাকে। ১৯৫৩ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত তিনি সিনেটে ডেমক্রেটদের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৬০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকে পরাজিত করে হয়ে যান ৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি ছিলেন মার্কিন ইতিহাসের অন্যতম কম বয়সী প্রেসিডেন্ট।

 

2.কেনেডি হত্যাকাণ্ড

এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন ভাল বক্তা। যে কারণে রাতারাতিই হয়ে যান অনেক জনপ্রিয়। জিতেছিলেন পুলিৎজার পুরস্কার। জনগণের মন জয় করে নিতে কেনেডির বেশি সময় লাগেনি। কূটনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিলেন সমান পারদর্শী। বিয়ে পরবর্তী সময়ে অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো ও প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে জড়িয়ে অনেক কথা শোনা গেলেও জন ও জ্যাকুলিন ছিলেন স্পষ্টতই সুখী দম্পতি। কিন্তু জন এফ কেনেডির সুখী জীবন বা ক্ষমতার স্থায়ীত্ব কোনটিই বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২২ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে ছাদখোলা গাড়িতে করে স্ত্রী জ্যাকুলিনকে নিয়ে টেক্সাসের ডালাস অঙ্গরাজ্য ভ্রমণের সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় টেক্সাস স্কুল বিল্ডিং এর সামনে তার হাজার অনুগামীর উপস্থিতিতেই জন এফ কেনেডিকে তিন বার গুলি করা হয়। এর আধা ঘন্টা পরেই ডালাস পার্কল্যান্ড হসপিটালে কেনেডিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মাত্র ৩ বছর রাষ্ট্রপতি থাকলেও তিনি হাজার হাজার মার্কিনের চোখের জলে চিরবিদায় নেন। কিন্তু কীভাবে এত নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে হত্যা করা হয় কেনেডিকে?

 

3.কেনেডি হত্যাকাণ্ড

কেনেডি হত্যার এক ঘণ্টার মাথায় গ্রেফতার করা হয় হত্যাকারী লি হার্ভে অসওয়াল্ড। তার স্নাইপার রাইফেল দিয়ে টেক্সাস স্কুল বিল্ডিং এর উপর থেকে কেনেডিকে লক্ষ্য করে তিনটি গুলি ছোড়ে। পালানোর সময় তিনি একজন পুলিশ অফিসারকেও হত্যা করেন। এর আধা ঘন্টা পরেই একটি সিনেমা হল থেকে অসওয়াল্ডকে গ্রেফতার করা হয়। অসওয়াল্ড একজন সাবেক মেরিন সদস্য। ১৯৫৬ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত তিনি মেরিন সদস্য ছিলেন। এরপর তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন এবং মার্ক্সবাদী হয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি একজন সোভিয়েত নারীকে বিয়ে করেন। কিন্তু সোভিয়েত নাগরিকত্ব পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৬৩ সালের প্রথম দিকে মেইল অর্ডারে একটি দশমিক ৩৮ রিভলবর ও টেলিস্কোপিক সাইটসহ একটি রাইফেল ক্রয় করেন এবং টেক্সাক্স স্কুল বিল্ডিং এ চাকুরি নেন। যেখান থেকেই তিনি কেনেডিকে হত্যা করেন। কেনেডি হত্যার একদিন পরেই অসওয়াল্ডকে কোর্ট বিল্ডিং এ নেয়ার সময় একজন নাইটক্লাবের মালিক জ্যাক রুবে তাকে আচমকা গুলে করে হত্যা করে। কিন্তু কেন করা হয় কেনেডিকে হত্যা?

 

4.কেনেডি হত্যাকাণ্ড

কেনেডি হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অমীমাংসিত রহস্যগুলোর মধ্যে একটি। নতুন প্রেসিডেন্ট জনসন ক্ষমতায় আসার পরেই কেনেডি হত্যার বিচার এর জন্য “ওয়ারেন কমিশন” গঠন করেন। ১৯৬৪ সালে ওয়ারেন কমিশন রিপোর্ট পেশ করেন। রিপোর্টে বলা হয়, অসওয়াল্ড বা রুবে কেউই কোনো আন্তর্জাতিক বা দেশিও ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন না। অসওয়াল্ড তার মত ভিন্নতার কারণে কেনেডিকে হত্যা করেন এবং রুবে কেনেডি হত্যার শোক সইতে না পেরে অসওয়াল্ডকে হত্যা করেন। ১৯৬৬ সালে রুবের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মার্কিনরা তাদের প্রিয় রাষ্ট্রপতি হত্যার কারণ হিসেবে ওয়ারেন কমিশনের রিপোর্ট মানতে নারাজ। তারা বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাসী। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে অনেকগুলোই তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন অসওয়াল্ড রাশিয়া অবস্থানকালে রাশিয়ানরা তাকে গুপ্তচরে রুপান্তর করেন এবং কেনেডি হত্যার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়।

 

5.কেনেডি হত্যাকাণ্ড

আবার কেউ কেউ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করেন ইজরাইলকে। কারণ কেনেডি ক্ষমতায় আসার পরে ইজরাইলি স্বার্থ নষ্ট হচ্ছিল। সন্দেহের খাতা থেকে বাদ যায়নি খোদ সি আই এ। ধারণা করা হয় প্রেসিডেন্ট কেনেডির ভিয়েতনাম যুদ্ধে মত না থাকার কারণে সি আই এ এর অস্ত্র ব্যবসা এবং নীতিতে বাঁধ সাধায় কেনেডিকে হত্যা করেন সি আই এ। আবার অনেকের মতে, উপ রাষ্ট্রপতি জনসন ক্ষমতা লোভে হত্যা করেন কেনেডিকে। সন্দেহের তীর থেকে বাদ যায়নি খোদ কেনেডির স্ত্রীও। কিন্তু ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন প্রার্থী কেনেডির ছোটভাই রবার্ট এফ কেনেডি আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ায় ষড়যন্ত্রের ধারণা পরিষ্কার হয়। এরপরে ১৯৭৮ সালে হাউজ সিলেক্ট কমিটিও এই হত্যাকাণ্ডকে একটি বড় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু কি সেই ষড়যন্ত্র? তা হয়তো অমীমাংসিতই থেকে যাবে।

এই বিভাগের আরো খবর