শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৪

কুরআন হাদিসের আলোকে শবে বরাত

 মুহাম্মদ সৈয়দুল হক

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০১৯  

মুসলিম উম্মাহর ঐতিহ্যবাহী পালনীয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে শবে বরাত অন্যতম। যুগযুগ ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটিকে ভাবগাম্ভীর্যের সাথে পালন করে আসছে। এ রাতের রয়েছে অশেষ বরকত। রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে মাগফিরাতের শুভসংবাদ, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা।

পবিত্র কুরআনের সুরা দুখানে এই মহিমান্বিত রাতের ব্যাপারে উল্লেখ হয়েছে, ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের! নিশ্চয় আমি সেটিকে বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমিই সতর্ককারী। ঐ রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়ের ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয় আমিই প্রেরণকারী।’

অধিকাংশ তাফসিরকারকের মতে, উল্লিখিত আয়াতে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বা ‘বরকতময় রজনী’কে শবে কদর বলে উল্লেখ করলেও কেউ কেউ এটিকে শাবান মাসের ১৫তম রাত তথা শবে বরাত বলে ব্যাখ্যা করেছেন। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, রাসুলে কারিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু।

তাফসিরকারকদের ভাষ্যমতে, যেহেতু আল্লাহ তাআলার আদেশে এ রাতে যাবতীয় বিষয়ের ফায়সালা করা হয়, তাই আয়াতের অর্থ নিতে হবে, এই রাতে কুরআন নাজিলের ফায়সালা বা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় আর তা নাজিল হয় শবে কদরে। (তাফসিরে ইবনে আব্বাস, মাযহারি, খাযিন, ইবনে কাছির ইত্যাদি)

পবিত্র হাদিস শরিফেও এ রাতের ব্যাপারে বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “আল্লাহ তাআলা শাবানের পনেরতম রাতে স্বীয় সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমতের দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন এবং মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান- ৫৬৬৫)

এ ছাড়াও হযরত আলি ইবনে আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন শাবানের পনেরতম রাত আসে, তখন তোমরা রাতে নামাজ পড় এবং দিনে রোজা রাখো। কেননা ঐ দিন সূর্যাস্তের সময় থেকে আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলতে থাকেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেও কি আছো, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। রিজিক আন্বেষণকারী কেও কি আছো, আমি তাকে রিজিক দিব। আসুস্থ কেও কি আছো, আমি তাকে সুস্থতা দান করব। এভাবে অন্যান্য বিষয়েও বলতে থাকেন যতক্ষণ-না ফজর হয়। (ইবনে মাজাহ-১৩৮৮)

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতেও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, ‘এক রাতে আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে ঘরে না-পেয়ে তাঁর খোঁজে বের হলাম। তখন দেখলাম, তিনি জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে আসমানের দিকে মাথা মুবারক উত্তোলন করে অবস্থান করছেন (দুআ করছিলেন)। আমাকে সেখানে দেখে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ভয় করছ যে, আল্লাহ ও তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমার প্রতি অবিচার করবে? তিনি উত্তর দিলেন, তেমন কিছু আমার মনে নেই; বরং আমি ধারণা করেছি যে, আপনি আপনার অন্যকোনো স্ত্রীর হুজরায় গিয়েছেন। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা শা’বানের পনেরতম রাতে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লি বর্ষণ করেন। অতঃপর বনু কাল্ব গোত্রের মেষগুলোর লোমের চেয়েও অধিক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন।’’ (ইবনে মাজাহ -১৩৮৯)
 
বুঝা গেলো, শাবান মাসের পনেরতম রাত এবং দিন দুটিই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে এ রাত এবং দিনের বহু নিআমতের কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সেসব নিআমতদানে ধন্য করুন। আসুন, আমরা এ পবিত্র রাত একাগ্রচিত্তে মাওলার প্রেমে অতিবাহিত করি। রাসুলুল্লাহ এ রাতে কবর জিয়ারত করেছেন, আমাদেরও তা করা উচিত। এবং পরের দিনের বরকতপূর্ণ রোজা পালন করা উচিত। আল্লাহ তাআলা আমাদের সে তাওফিক দান করুন, আমিন।