শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৩

কুমিল্লায় হারিয়ে যাচ্ছে মক্তবভিত্তিক আরবী শিক্ষা

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০২১  

কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের সব’কটি উপজেলার সবর্ত্র কালের বিবর্তন, আধুনিকতা ও দ্বীনহীনতার ছোবলে হারিয়ে যাচ্ছে মুসলিম সমাজের গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সকালের মক্তবগুলোতে শিশু-কিশোরদের আরবী শিক্ষা। প্রতিদিন ভোরে কিংবা সকালে শীত অথবা গরমকালে সূর্য তার আলোক রস্মী ছড়ানোর আগেই গ্রামাঞ্চলের আঁকা বাঁকা পথ দিয়ে আরবী শিক্ষার জন্য ছোট ছোট শিশুরা দল বেঁধে ফোরকানিয়া মাদ্রাসা কিংবা ছোট্ট পরিসরে গড়ে উঠা মক্তব্যগুলোতে যাওয়ার পরিবেশ নানাহ কারনে এখন আর চোখে পড়ে না। সবই এখন আধুনিক প্রযুক্তির যুগে অনেকটাই অতীত। চলমান করোনার আগ্রাসনে দেড় বছর ধরে সকালের মক্তবগুলো বন্ধ থাকায় আরবী শিক্ষায় ধস নেমেছে। ফলে ওই সব শিক্ষার্থীরা আরবী শিক্ষা ছেড়ে মোবাইলে নানাহ গেম খেলায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। 


স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, একটা সময় এ অঞ্চল জুড়ে সকাল বেলায় আরবী শিক্ষার শ্রুতি মধুর সুরে মুখরিত হয়ে উঠতো এ জনপদ। এমনকি ছেলে-মেয়ের শ্বশুর পক্ষের তাদের পছন্দ করতে এসে আরবী শিক্ষার কথা জানতে চাইতো। গ্রামের গৃহবধু কিংবা মায়েরাও ভোরে ফজর নামাজ পড়ে গুন গুন করে কোরআন তেলোয়াত ও দোয়া দুরুদ পড়তো। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বর্তমান প্রজন্ম হয়তো ওইসব দৃশ্যগুলোর গল্প বিশ্বাস করতে চাইবে না। বিশেষ করে আধুনিক প্রযুক্তি, পশ্চিমাদুনিয়াসহ পাশ্ববর্তী দেশের ডিজিটাল নগ্ন সংস্কৃতির দৌরাত্বে আমার ইসলাম, ধর্মীয় বিধি-বিধান ও আরবী শিক্ষাকে নানাহ ভাবে ঠেলে দিয়েছে। আমরা মুসলমানরা তা অনুধাবন করতে না পারলেও ইসলাম বিরোধী শক্তিগুলো ঠিকই বুঝতে পেরেছে। যেমন সকালে মক্তবগুলোতে শিশু-কিশোরদের প্রাতঃকালীন আরবী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রভাব সার্বিক ক্ষেত্রে অত্যন্ত ফল প্রসু। অপরদিকে জেলা দক্ষিনাঞ্চলের সবকটি উপজেলার ইসলামী ফাউন্ডেশন পরিচালিত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র গুলো নিয়ে চলছে হাজারো বির্তক।  ইদানিং বর্তমান সরকার সম্প্রতি বেশ কয়টি ভীনদেশী টিভি চ্যানেল বন্ধ করে  দেয়ার  ঘোষনায় সাধুবাদ জানিয়েছেন অঞ্চলের সকল শ্রেনীর পেশার মানুষ।


সুত্রগুলো আরও জানায়, মুসলিম শিশু-কিশোরদের সকালে মক্তব-মাদ্রাসায় গিয়ে আরবী শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলা-ইংরেজী মাধ্যম বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে আমাদের খুব সন্নিকটে। আমরাও তাদের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে ছেলে-মেয়েদেরকে মক্তব্য-মাদ্রাসায় পাঠানোর পরিবর্তে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিচ্ছি। তবে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নূরানী ও কওমী একাধিক মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলে। অথচ মুসলমানদের ঐতিহ্যের স্মারক গ্রাম-বাংলার চিরায়ত সকালের মক্তবগুলো বিলুপ্তির পথে। সন্তান আমাদের, দায়িত্বও কিন্তু আমাদের আমরা শিশু-কিশোরদের যে শিক্ষা দেবো তারা কিন্তু সে শিক্ষায় গড়ে উঠবে। এ ছাড়া করোনার আগ্রাসনের শিকার হয়ে বিগত দেড় বছর যাবৎ এ অঞ্চলের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আজ খুলে দিলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে।
স্থানীয় আলেম সমাজের একাধিক সূত্র জানায়, আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অনুসরণ করা। যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। মুসলিম সমাজের প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে তাওহীদের উপর ভর করে। এক একটি সন্তান বেড়ে উঠবে ইসলামের বিধিবিধান মেনে চলা এবং তার আমল আকিদা-আখলাক শিক্ষা নির্ভর করে শিশুকালে আরবী শিক্ষার উপর। হাদিসে আছে তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে আরবী কিংবা কোরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়। শিশু সন্তানদের নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য শিশুকাল থেকে আরবী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। 


স্থানীয় মক্তব- মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানায়, মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার জীবনের সব আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের ধারাবাহিকতা চলতে থাকবে। যেমন সধকায়েজারিয়া, কোন এলেমের মাধ্যম রেখে যাওয়া যার দ্বারা দুনিয়াতে মানব জাতির উপকার হবে এবং আরবী শিক্ষার মাধ্যমে নেক সন্তান রেখে যাওয়া যেন তার মৃত্যুর পর তারা তাঁর জন্য দোয়া করবে। ফলে ছেলে-মেয়েদের নেক্কার বানাতে চাইলে ছোট বেলা থেকেই আরবী শিক্ষার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দয্যের জ্ঞান দানের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। দুনিয়া ও আখেরাতে আরবী শিক্ষাই আপনাকে হেফাজত করবে। 


এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশন ও প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক বিভাগের কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

এই বিভাগের আরো খবর