শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২২৩৮

কাশ্মীরের রক্তাক্ত ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ৬ আগস্ট ২০১৯  

ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার সোমবার সংবিধানের অধীন কাশ্মীরের বিশেষ স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। এতে উপত্যকাটিতে নতুন করে রক্তপাত ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

বিরোধপূর্ণ হিমালয় অঞ্চলটিতে বড় বড় রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংঘাতের সময় এখানে উল্লেখ করা হল। এসব সংঘাতে ৭০ হাজারের বেশি লোক নিহত হয়েছেন।

১৯৪৭-১৯৪৯

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারত ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। সাবেক হিমালয় রাজ্য কাশ্মীর ওই দুই দেশের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ভূখণ্ডটির ওপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব পেতে দেশ দুটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

১৯৪৯ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ সমর্থিত একটি অস্ত্রবিরতি রেখায় সম্মত হয় ভারত-পাকিস্তান। নিয়ন্ত্রণরেখা নামে যেটি এখনও দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত হয়ে আছে।

১৯৫৩

জম্মু ও কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহকে বরখাস্ত এবং কারাবন্দি করে ভারত। উপত্যকাটির স্বাধীনতায় তার সমর্থনের জন্য ১১ বছর তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়। পার্টিশনের পর অবশেষে ১৯৭৫ সালে রাজ্যটির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়ে তিনি ক্ষমতায় ফিরে আসেন।

১৯৫৭

জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান কার্যকর করা হয়। রাজ্যটিকে ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়।

১৯৬৫-৬৬

কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান। কোনো নিষ্পত্তি ছাড়াই সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে সেই যুদ্ধ শেষ হয়।

১৯৭১-৭২

ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি সই করে এবং নিয়ন্ত্রণরেখা নামে পরিচিত একটি অস্ত্রবিরতি লাইনে তারা একমত হয়।

১৯৮৪

এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যার দায়ে ভারতের জেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা মকবুল ভাটকে।

১৯৮৯-৯০

কাশ্মীরে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু হয়। এতে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ে এবং রাজ্যটিতে ভারত সরাসরি কেন্দ্রীয় শাসন আরোপ করে।

১৯৯৬

সাত বছরের মধ্যে কাশ্মীরে রাজ্যসভার নির্বাচন হয়। কিন্তু নয়াদিল্লির বলপ্রয়োগের অভিযোগের কারণে নির্বাচনটি বিতর্কিত হয়। এটি ঠিক ১৯৮৭ সালের নির্বাচনের মতো হয়। যেটা দুর্নীতি ও সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে গোলযোগপূর্ণ হয়েছিল।

১৯৯৯

কাশ্মীরের কার্গিল সেক্টরে অভিযান চালায় পাকিস্তান। ছয় সপ্তাহের যুদ্ধে দুই পক্ষের হাজারখানেক সেনা মারা যায়। মার্কিন চাপে ওই যুদ্ধ বন্ধ হয়।

এ বছর দুই দেশ লাহোর ঘোষণায় সম্মত হয়। কাশ্মীরসহ সব ইস্যুতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানানো হয় এতে।

২০০১-২০০৩

ভারতীয় শহর আগ্রায় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের সম্মেলন কাশ্মীর ইস্যুতে অবসান ঘটে।

২০০১ ও ২০০২ সালে দফায় দফায় হামলায় নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত-পাকিস্তানের সেনা জড়ো করে। ২০০৩ সালের নভেম্বরে একতরফা অস্ত্রবিরতি ঘোষণা করে পাকিস্তান।

২০০৮

বার্ষিক তীর্থযাত্রার ব্যবস্থাপনায় একটি ট্রাস্টকে একখণ্ড জমি দেয়ার পরিকল্পনা করে রাজ্য সরকার। এতে বিচ্ছিন্নবাদীরা হিন্দু অধিগ্রহণ ও ভারতবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরবর্তী সময়ে ওই পরিকল্পনা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

২০১০

তিন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর এক রক্তাক্ত বিদ্রোহ শুরু হয়। সড়কে বিক্ষোভ করায় শতাধিক লোককে হত্যা করা হয়।

২০১৬

এক জনপ্রিয় বিদ্রোহী নেতাকে হত্যার জেরে কয়েক মাস ধরে কাশ্মীরের রাস্তায় বিক্ষোভ চলে। এতে কয়েকশ লোক নিহত হন।

ওই বছর একটি সেনাঘাঁটিতে হামলায় ১৮ জওয়ান নিহত হন। ১৫ বছরের মধ্যে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় হামলা ছিল এটি।

২০১৯

স্থানীয় এক তরুণের আত্মঘাতী হামলায় ভারতীয় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ ওই হামলার দায় স্বীকার করে।

এ ঘটনার জেরে পাকিস্তানের বালাকোট শহরের বাইরে বোমা হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালালে এক ভারতীয় পাইলট আটক হন। শান্তির নিদর্শন হিসেবে ইমরান খান তাকে ফেরত দেন।

সোমবার কাশ্মীরের স্বায়ত্তশানের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়ে রাজ্যটিকে দুই ভাগে বিভক্ত ঘোষণা করে ভারত। গত সাত দশক ধরে এই স্বায়ত্তশাসন ভোগ করে আসছিল কাশ্মীর।

এই বিভাগের আরো খবর