মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০   ০৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
২৯৩

করোনা: মালয়েশিয়ায় আজ থেকে জরুরি অবস্থা

নাজনীন সুলতানা তৃপ্তি, মালয়েশিয়া থেকে

প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারি ২০২১  

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে মালয়েশিয়ায়। স্থগিত করা হয়েছে পার্লামেন্ট ও রাজ্যের লেজিসলেচার। নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ জনস্বাস্থ্যের ওপর হুমকি হয়ে উঠার প্রেক্ষিতে সেখানে লকডাউন দেয়া হয়েছে। লাখ লাখ মালয়েশিয়ান রয়েছেন ঘরে বন্দি। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে আরো বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেছেন দেশটির রাজা আল সুলতান আবদুল্লাহ। এ সময়ে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণায় মত দিয়েছেন রাজা। এতে আরো বলা হয়েছে, আগামী ১লা আগস্ট পর্যন্ত অথবা করোনা ভাইরাস সংক্রমণ না কমা পর্যন্ত এই জরুরি অবস্থা অব্যাহত থাকবে।

তবে একে করোনা মোকাবিলার চেয়ে মুহিদ্দিনের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

মঙ্গলবার সকালে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন। তিনি বলেছেন, জরুরি অবস্থার অধীনে জাতীয় পার্লামেন্ট ও স্টেট লেজিসলেচার স্থগিত থাকবে। এ সময়ে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেছেন, কোনো কারফিউ দেয়া হবে না এবং তার সরকারই অব্যাহতভাবে দেশ চালাবে। এর আগে সোমবার রাতে রাজাকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, রাজার সম্মতিতে তিনি সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে আটটি রাজ্যে এবং ফেডারেল অঞ্চলে লকডাউন ঘোষণা করছেন। কারণ, এসব স্থানের হাসপাতালগুলো রয়েছে ‘ব্রেকিং পয়েন্টে’। এই লকডাউনের অধীনে রয়েছে রাজধানী কুয়ালালামপুুর, রাজ্যের মধ্যে সাবাহ, সেলাঙ্গর, পেনাং এবং যোহর। এসব স্থানে লকডাউন আগামী ২৬ শে জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকবে।

এর আগে তিন মাসের কঠোর লকডাউন দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এনেছিল মালয়েশিয়া। এ সময়ে লোকজনকে ঘরের বাইরে বেরুতে দেয়া হয় নি। গত বছরের জুলাইয়ে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে বলে ঘোষণা দেয়। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যেতে থাকে সেপ্টেম্বরে। এ সময়ে সাবাহ রাজ্যের বোর্নিওতে নির্বাচন হয়। সেখানে করোনা সংক্রমণ নতুন করে দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের বিস্তারের মধ্যেই সেখানে নির্বাচন হয়। এ সময়ে সাবাহ ও এর দ্বীপ অঞ্চলগুলোর মধ্যে ঘন ঘন সফর করতে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। লোকজন জমায়েত হয়। ফলে কোয়ারেন্টিন ছাড়া এমন নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সেখানে প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় করোনার।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিন গত মার্চে রাজনৈতিক মারপ্যাচে তখনকার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে সরিয়ে দিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেন। ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই তিনি নিজের সমর্থন প্রমাণের জন্য বড় চাপে রয়েছেন। অনেকে বলেন, পার্লামেন্টে অনেক কৌশলে তিনি নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে করোনা সংক্রমণ তার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। কারণ, করোনার উসিলায় একবার লকডাউন বা জরুরি অবস্থা দিয়ে দিলে অন্য সব কিছুর সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে তিনি যত দমিয়ে রাখতে পারবেন ততই তার জন্য ভাল। কারণ বিরোধী দলের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন তাকে সমর্থন করেন পর্যাপ্ত সংখ্যক এমপি। ফলে তিনি সরকার গঠন করতে পারেন। এরপর রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তিনি। তোলপাড় দেখা দেয় দেশটিতে। হয়তো, এ থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মুহিদ্দিন। তাই মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ সিভিকাস মনিটরের জোসেফ বেনেডিক্ট বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা হলো ক্ষমতা ধরে রাখার, নির্বাচন আটকে দেয়ার, পার্লামেন্টারি নজরদারি বন্ধের একটি কৌশল। করোনা মহামারি মোকাবিলার চেয়ে এটা রাজনৈতিক বড় হাতিয়ার। এক বিবৃতিতে রাজপ্রাসাদ থেকে বলা হয়েছে, রাজপ্রাসাদ থেকে করোনা মোকাবিলার জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হবে।

এই বিভাগের আরো খবর