বৃহস্পতিবার   ১০ অক্টোবর ২০২৪   আশ্বিন ২৫ ১৪৩১   ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

স্যার আবেদের স্মরণে অঝোরে কাঁদলেন ড. ইউনূস

প্রকাশিত : ০৩:২৯ পিএম, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ রোববার

 

ফজলে হাসান আবেদকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে লাশ আনা হয় আজ সকাল ১০ টা ২০ মিনিটে। শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয় আজ সকাল সাড়ে ১০টায়। বেলা ১১টার দিকে আর্মি স্টেডিয়ামে আসেন নোবেলজয়ী ড. ইউনূস। সেখানেই অশ্রুসিক্ত নয়নে আবেদকে স্মরণ করে ড. ইউনুস বলেন, তার বিদায়ে কতটা কষ্ট পেয়েছি, তা বলে শেষ করা যাবে না। একটা বিরাট শূন্যতা অনুভব হচ্ছে।

ফজলে হাসান আবেদের হঠাৎ মৃত্যুতে যে একটি গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তাকে সামাল দেয়ার জন্য একযোগে কাজ করার এবং আবেদ প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচল রাখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, যে মূল্যবোধ থেকে, উপলব্ধি থেকে তিনি এসব করেছেন, তা জানা নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আমি তরুণ প্রজন্মকে আহ্বান জানাচ্ছি, তার জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে তার মতো হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

তিনি আবেদের কর্মময় জীবন স্মরণ করে বলেন, ফজলে হাসান আবেদন প্রতিটি বিষয়ের গভীরে গেছেন এবং ব্যাপ্তি সৃষ্টি করেছেন। এটা করতে গিয়ে তাকে বহু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে হয়েছে। তার অবদান হলো—তিনি এসব প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেছেন, এর সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিটাও দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।

ফজলে হাসান আবেদের ফোকাসের কথা তুলে ধরে অধ্যাপক ইউনূস বললেন, হেন কোনো বিষয় নেই, তিনি সেটাতে মনোযোগ দেননি। মনোযোগ দিয়েছেন এবং সেটাকে নমুনা হিসেবে ছেড়ে দিয়ে আসেননি। সেটাকে সর্বব্যাপী করেছেন।

প্রয়াত ফজলে হাসান আবেদের ব্যক্তি প্রচেষ্টার দিকেও দৃষ্টিপাত করেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, ‘তিনি একক ব্যক্তি হিসেবে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় সবকিছু করেছেন। এটা একটা বড় দৃষ্টান্ত হবে আমাদের জন্য।
 
ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পাবনা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর তিনি ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮০ সালে র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।