শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ৭ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

তালাক এমন একটা বিষয় যার মাধ্যমে দীর্ঘ দিনের গড়ে উঠা  সুসম্পর্ক নিমিষেই শেষ যায়।যার মাধ্যমে সুন্দর দাম্পত্ব্য জীবন হারাম হয়ে যায়।তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) সাহাবীদের সাথে তালাকের বিষয় আলোচনা করতে যেয়ে বলেছেন "তালাক হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ" যা মুসলিম নর নারীর জন্য মোটেও কাম্য নয়।বর্তমানে সারা বিশ্বে তালাকের হার হু হু করে বেড়েই চলছে।তাই  আসুন যেনে নেই তালাক কি?কি কি উপায়ে তালাক হতে পারে বা দেওয়া যেতে পারে? তালাকের পর সন্তান কার নিকট থাকবে?তালাক কখন কার্যকর হয় না?তালাক রেজিস্ট্রি করতে হবে কিনা?এবং তালাকের মাত্রা বাড়ার মুল কারন কি? কিভাবে এই নিকৃষ্ট হালাল কাজ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? তালাক রোধে করনীয় কি?
শুরুতেই আসি তালাক কি?
আরবি ভাষায় "তালাক" শব্দের অর্থ হল দাম্পত্ব্য জিবনের সম্পর্ক ছিন্ন করা।তার মানে হচ্ছে বিবাহ চুক্তির মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্ক আইনসিদ্ধ উপায়ে ছিন্ন করাকে "তালাক" বা বিবাহ বিচ্ছেদ বলে। মুসলিম আইনে বিবাহ-বিচ্ছেদ নর নরীর একটি বৈধ ও স্বীকৃত অধীকার।যাহা হাদিসের ভাষায়, সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যার মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদীকে এই কাজে নিরুতসাহীত করা হয়েছে।স্বীমী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্ক যদি এমন পর্যায়ে পৌছায় যে,একত্রে বসবাস করা উভয়ের পক্ষেই বা যে কোন এক পক্ষে সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তারা কিছু নির্দিষ্ট উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন।যার মাধ্যমে দাম্পত্ব্য জিবনে সমাপ্তি ঘটে।
এখন জানা যাক কি  কি উপায়ে" তালাক "হতে পারে -
শরীয়তের বিধান অনুসারে স্বামী কিংবা স্ত্রী যে কোন একজনের মৃত্যুর মাধ্যমে একটি বিয়ের সমাপ্তি ঘটতে পারে। তবে এ ছাড়াও নিম্নে বর্নিত পদ্ধতিতে বিবাহ-বিচ্ছেদ বা তালাক সম্ভবঃ- 
১/ স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রী  কে তালাক। 
২/ তালাক -ই-তৌফিজ বা স্ত্রী কতৃক স্বামী কে তালাক
৩/ আদালতের মাধ্যমে তালাক
৪/খুলার মাধ্যমে তালাক
৫/মুবারাতের মাধ্যমে তালাক

উপরোক্ত পদ্ধতিতে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানো যায়।জেনে রাখা ভাল যে উপরোক্ত ৫ টি পদ্ধতি ই মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ ১৯৬১ দারা অনুমোদিত।
আজ আমরা জানবো স্বামী কতৃক  স্ত্রী কে তালাক কি ভাবে সম্পন্ন হয়?
আমাদের দেশে অনেকের ধারনা আছে যে, মুখে পরপর তিনবার " তালাক" উচ্ছারন করলে অথবা একসাথে "তালাকে বাইন" বা বাইন তালাক কথাটি বললেই তালাক কার্যকরী হয়ে যায়,যাহা সম্পূর্ন ভুল ধারনা। তবে প্রকৃত বিধান হচ্ছে,১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) এর বিধান অনুযায়ী, স্বামী তালাক উচ্ছারন করার পরপরই তালাক দেয়ার সংবাদটি একটি নোটিশের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে জানাবে,অর্থাৎ স্ত্রী যেই চেয়ারম্যান এর এলাকায় বসবাস করে ঐ এলাকার চেয়ারম্যান কে। নোটিশের একটি কপি স্ত্রী  কে পাঠাবে যা পাঠাতে স্বামী বাধ্য।তবে স্বামী যদি তালাকের নোটিশ চেয়ারম্যান ও স্ত্রী কে না পাঠায় সেই ক্ষেত্রে উক্ত আইন অনুযায়ী ৭(২) এর বিধান মতে, স্বামী এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা দশ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।নোটিশ পাওয়ার পরবর্তী ত্রিশ(৩০) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সালিশি পরিষদ ঘঠন করে উভয় পক্ষকে সমযোতায় আনার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।কিন্তু যদি সালিশি পরিষদে কাজ না হয় এবং নোটিশ দেয়ার ৯০ দিনের মধ্যে স্বামী যদি স্ত্রী কে তালাক দেয়ার নোটিশ প্রত্যাহার না করেন তবে ৯০ দিনের পর থেকে তালাক কার্যকর হবে। ৯০ দিন পর না হওয়া পর্যন্ত দম্পতিকে আইনসিদ্ধ স্বামী -স্ত্রী হিসাবে গন্য করা হবে এবং স্ত্রী ও ভরনপোষন পাবে।এই তালাকের মাধ্যমে স্ত্রী তার দেন মোহরের পুরো টাকা পাওয়ার হকদার হবে এবং তা আইন দারা আদায়যোগ্য যাহা স্বামী কে অবশ্যই পরিশোধ করিতে হবে।
(বাকী অংশ চলবে)
তালাক সম্পর্কে যে কোন প্রশ্নের উত্তর জানতে প্রয়োজনে কল করুনঃ-০১৯৫৬৪৪৮৮৫১ এই নাম্বারে (এড.এইচ.এম.এম. মহিবুল হক মুন্সী)