শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার দাবি সিপিডির

প্রকাশিত : ০৬:০৫ পিএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার

কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ দাবি জানান। তিনি বলেন, সম্প্রতি কৃষকদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। শিল্প ও কৃষির মধ্যে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকে, তা কৃষকদের বিপরীতে গেছে। এটা যদি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কৃষকদের টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন হবে। 
 
আমরা সিপিডির পক্ষ থেকে খুব পরিষ্কারভাবে বলছি, কৃষকরা অবশ্যই সরকারের কাছে আর্থিক ভর্তুকি দাবি করতে পারেন। কার্ডধারী প্রত্যেক কৃষককে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঁচ হাজার টাকা করে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত, এতে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো লাগবে।
 
মঙ্গলবার (১১ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘জাতীয় অর্থনীতির পর্যালোচনা ও আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
 
বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ছিল। এটি একটি দেশের অর্থনীতির একটি শক্তি। সেই শক্তিতে ভাঙন ধরেছে। এটা যদি অতিক্রম না করা যায়, তাহলে আমাদের উন্নয়নের যে আকাঙ্ক্ষা রয়েছে তা পূরণ হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের সুযোগ কমবে এবং অন্যান্য উৎস থেকে যদি আমরা বিনিয়োগের চেষ্টা করি তাহলে সামষ্টিক অর্থনীতি আরো দুর্বল হয়ে যাবে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এবছর মাত্র তিন মাসে অর্ধেক এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটা নিয়ে আর কিছু বলার বাকি থাকে না।
 
বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ পরিস্থিতিকে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়ার আর একটি কারণ হিসেবে বলেছেন এই অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি ভালো থাকা সত্ত্বেও  বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি বাড়ছে।
 
টাকার মান পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার যেটা করছে- ডলার বিক্রি করে টাকাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করছে। সরকার মনে করছে টাকাকে সস্তা করলে আমদানি ব্যয় বাড়বে। কিন্তু এতে মূল্যস্ফীতির ওপর একটা প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি মূল্যস্ফীতির হার যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই টাকাকে কিছুটা অবমূল্যায়ন করলেও বর্তমানে তা সহ্য করার শক্তি অর্থনীতির আছে। কিন্তু অন্য সময় মূল্যস্ফীতি যদি বেড়ে যায়, তাহলে এটা করা জটিল হয়ে পড়বে।
 
ব্যাংকিং খাতের বিষয়ে তিনি যথেষ্ঠ আফসোসের সঙ্গে বলেন, ৩/৪ বছর ধরে খাত নিয়ে বলতে বলতে সবাই এ খাতের সংকট উপলব্ধি করলেও সঠিক প্রতিক্রিয়ার অভাব রয়েছে। সরকার যে কয়টা পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটিও এ খাতের জন্য ভালো হয়নি।
 
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে তা আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার পরিপন্থি হবে। কেননা দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে- ঘুষ, অনুপার্জিত আয়, কালো টাকা, পেশীশক্তি মাধ্যমে উপার্জন করা টাকাকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে।
 
সিপিডির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস উম্মে শেফা রেজওয়ানা, মোস্তফা আমির সাব্বির, সারাহ সাবিন খান, রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস সিরাজুম মুনিরা ফারিন, মো. আল-হাসান, সৈয়দ ইউসুফ সাদাত, কাজী গোলাম তাসফিক প্রমুখ।   
 
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো- রাজস্ব আহরণের সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, সরকারি ব্যয় সুশৃঙ্খলভাবে করা, যাতে অপচয় না হয়, কর ছাড়ের হিসাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে আনা, প্রত্যেক কৃষককে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিতে হবে, ব্যাংক কমিশন গঠন ও সুদের হার বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর ছেড়ে দিতে হবে, পুঁজিবাজারের সংস্কারের ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিতে হবে, সরকারি প্রতিষ্ঠান অডিট করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে, সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে এবং টাকার অবমূল্যায়ন করতে হবে।