শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

দুই বিশ্বকাপের ডামাডোলেও টেলিভিশন বিক্রিতে মন্দা

তরুণ কণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত : ০১:২৩ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২২ মঙ্গলবার

মূল পর্বে এসে জমে উঠছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের এই আসরের পর্দা নামতে না নামতেই শুরু হবে দুনিয়া মাতানো বিশ্বকাপ ফুটবল। পরিবার-পরিজন একসঙ্গে বড় পর্দায় এসব আসরের খেলা দেখতে পছন্দ করেন মানুষ। ক্রীড়াজগতের এমন বড় যে কোনো উৎসব কেন্দ্র করে তাই টেলিভিশন কেনার হিড়িক পড়ে। ব্র্যান্ডগুলোতে থাকে আকর্ষণীয় ছাড়। কিন্তু করোনা পরবর্তী ধাক্কা সামলে উঠেও বড় দুই উৎসব কেন্দ্র করে এই খাতে চলছে মন্দা। বৈশ্বিক সংকট, নিত্যপণ্যের অতিরিক্ত দাম, দুর্ভিক্ষের আভাস প্রভৃতি কারণে এবার আশানুরূপ বেচাকেনা নেই বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

সরেজমিনে বিভিন্ন টেলিভিশন ব্র্যান্ডের শোরুমে গিয়ে কথা বলে জানা যায়, বেচাকেনা নিয়ে কেউই খুব খুশি নন। সংশ্লিষ্টদের দাবি, পুরাতন টিভি সারানো বা সেকেন্ডহ্যান্ড টিভিতে বেশি ঝোঁক ক্রেতাদের। কারণ দুর্মূল্যের বাজারে মানুষের সংসার চালাতেই হিমশিম। বিলাসীপণ্যে কারও নজর নেই।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিশ্বকাপ উপলক্ষে মূল্যছাড় ও বিভিন্ন অফার দিচ্ছে অনেক ব্র্যান্ড। ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে প্রাণ-আরএফএলের ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ভিশন ‘বিশ্বকাপে কাঁপছে সবাই, ভিশন কিনে কাতার যাই’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। টেলিভিশনসহ নির্দিষ্ট ভিশন পণ্য কিনে কাতারে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন ২শ জন ক্রেতা।

Inner-1

বাড্ডার হোসেন মার্কেটে ভিশন এম্পোরিয়ামের শোরুম ম্যানেজার মো. রাকিব উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ক্রিকেট ও ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে যেমন বিক্রির আশা করেছিলাম তেমনটা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরএন পাল বলেন, ভিশন ইলেকট্রনিক্সে আমাদের ক্যাম্পেইনটি চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নত মান ও সাশ্রয়ী দামের কারণে আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড ভিশন ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে। ক্রেতাদের ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য আমরা এই ক্যাম্পেইন চালু করেছি।

ভিশন ছাড়াও বাজারে এখন ওয়ালটন, সনি, মাইওয়ান, স্যামসাং, এলজি, সিঙ্গার, প্যানাসনিক, ট্রান্সটেক, গোল্ডস্টার ও হায়ার ব্র্যান্ডের টিভির চাহিদা বেশি। দোকানের পাশাপাশি অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে টেলিভিশন। দোকানের তুলনায় অনলাইন কেনাকাটায় মূল্যছাড় বেশি।

তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে কোনো অফার নেই র্যাংগসের। বেচাকেনাও কম। র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের কাস্টমার ট্রাস্ট পয়েন্ট ইনচার্জ মো. নুরুননবী সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে তেমন একটা বেচাকেনা নেই। বড় টিভির বিক্রি কম হলেও মাঝারি স্মার্টটিভির বিক্রি বেশি থাকে। চাহিদা বেশি ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের টিভির। উৎসব উপলক্ষে কোনো ছাড় বা অফার আমরা দিচ্ছি না। তবে বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছি। টিভি কেনার পর সেটা বাসায় সেটআপ করা এবং প্যানেল ও পার্টস ওয়ারেন্টি দিচ্ছি।

তবে বিশ্বকাপ উপলক্ষে কোনো অফার নেই র্যাংগসের। বেচাকেনাও কম। র্যাংগস ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের কাস্টমার ট্রাস্ট পয়েন্ট ইনচার্জ মো. নুরুননবী সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে তেমন একটা বেচাকেনা নেই। বড় টিভির বিক্রি কম হলেও মাঝারি স্মার্টটিভির বিক্রি বেশি থাকে। চাহিদা বেশি ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দামের টিভির। উৎসব উপলক্ষে কোনো ছাড় বা অফার আমরা দিচ্ছি না। তবে বিক্রয়োত্তর সেবা দিচ্ছি। টিভি কেনার পর সেটা বাসায় সেটআপ করা এবং প্যানেল ও পার্টস ওয়ারেন্টি দিচ্ছি।

Inner-1

জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ওয়ালকার্টের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) শওকত ইলাহী জাগো নিউজকে জানান, ক্রিকেট ও ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে ওয়ালটন টেলিভিশনের বিভিন্ন ছাড় দেওয়া শুরু হয়েছে। মডেলভেদে ১২ থেকে ২৮ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় আছে।

জাগো নিউজকে তিনি বলেন, অন্যান্য উৎসবের তুলনায় এবার বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। দুটি ইভেন্ট এবার একসঙ্গে হচ্ছে। টেলিভিশন আমাদের সর্বাধিক বিক্রিত পণ্য হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা সেরকম রেসপন্স পাচ্ছি না। মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে হিমিশিম খাচ্ছে। বিলাসীপণ্য কিনতে তারা খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না।

‘আমাদের সার্ভিস সেন্টার ও সেলস পয়েন্টগুলোতে একটা জরিপ চালিয়েছি। সেখানে দেখছি পুরাতন টিভি সারানোর জন্য মানুষ আসছে। যাদের বেসিক টিভি আছে তারা সেগুলোকে অ্যান্ড্রয়েড টিভিতে রূপান্তর করতে অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স কিনছেন। এগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে ক্রেতারা নতুন টিভি কেনার চেয়ে পুরাতন টিভি ব্যবহার করতে চাইছেন।’

তিনি আরও বলেন, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে টিভি সর্বাধিক বিক্রিত পণ্য হওয়ার কথা থাকলেও অক্টোবর মাস প্রায় শেষ হতে চলেছে, টিভির বিক্রি আশানুরূপ নয়।

Inner-1

রাজধানীর স্টেডিয়াম মার্কেটে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মধ্যে টেলিভিশনের বিক্রি কিছুটা বেশি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, গত মাসের চেয়ে চলতি মাসে বিক্রি বেড়েছে। বিশ্বকাপের সময় যত ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে টেলিভিশনের বেচাকেনা।

মৌসুমি ইলেকট্রনিক্সের বিক্রয়কর্মী রনি হাসান বলেন, ফুটবল বিশ্বকাপের সময় টিভি বেশি বিক্রি হয়। ক্রিকেট বিশ্বকাপে তেমনটা হয় না। ক্রিকেট খেলা মোবাইল ফোনে দেখা গেলেও ফুটবলটা বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে বড় টিভিতে দেখতে চায় মানুষ। টিভি বিক্রি কিছুটা বেড়েছে, বলা যায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এটাকে বাড়ছে বলা যাবে না। কেননা এই সময় অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বিক্রি কমে যায়। আর টিভি বিক্রির পাশাপাশি সাউন্ড বক্স, র্যাংকসহ অন্যান্য জিনিস বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার টিভিই বিক্রি হচ্ছে কম। ক্রেতারা এসে দাম জিজ্ঞাস করে চলে যাচ্ছেন। আমরা আশা করছি ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হলে টিভি বিক্রি কিছুটা বাড়বে।

গুলিস্তানের নিউ আবির ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী হাবিব আবির জাগো নিউজকে বলেন, টেলিভিশনের চাহিদা খুবই কম। কিছু প্রজেক্টর বিক্রি হচ্ছে রাস্তাঘাটে খেলা দেখার জন্য। মানুষের কাছে টাকা নেই, বাজার মন্দা বলা যায়। মানুষ খেয়ে-দেয়ে বাঁচলে ইলেকট্রনিক্স জিনিস বা শখের জিনিস কেনে, এখন তো বেঁচে থাকাই কঠিন।