মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ২৪ ১৪৩২   ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

অর্থনীতিতে চরম শঙ্কা: কর্মসংস্থান কমে বেকারত্ব বাড়ার তীব্র

সুমন হোসেন

প্রকাশিত : ১০:২০ এএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সরকারের উন্নয়ন ব্যয় এবং ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের হার উভয়ই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি ও বেসরকারি—দুই দিকেই বিনিয়োগ কমার এই প্রবণতা ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান সংকটকে তীব্র করবে, মূল্যস্ফীতি বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

 

 

চলতি অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ গত অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কমেছে।

 

  • প্রকল্পের ভাগ্য: ‘অপ্রয়োজনীয় ও লুটপাটের প্রকল্প’ বাতিল করার সরকারি উদ্যোগের ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) বেশ কিছু প্রকল্প বাতিল করে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ হাজার কোটি টাকার বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ আগামী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

  • কর আদায়ে ব্যর্থতা: বছরের শেষভাগে দেখা যাচ্ছে, উন্নয়ন ব্যয় পূরণের জন্য কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাতেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি।

 

 

ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় সরকার এখন ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিবর্তে নন-ব্যাংকিং খাতের ওপরই বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে এই প্রবণতা স্পষ্ট:

 

সময়কাল ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া ঋণ (কোটি টাকা) পরিবর্তন
জানুয়ারি – জুন (৬ মাস) ৮৬,৩৪৮
জুলাই – ৮ ডিসেম্বর (প্রায় ৫ মাস) ৩০,৯৩৩ ৬৪% হ্রাস

 

 

অর্থাৎ, আগের ছয় মাসের তুলনায় সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার হার প্রায় ৬৪ শতাংশ কমিয়ে মাত্র ৩৬ শতাংশে নামিয়েছে।

 

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মো. শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানান, সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নে অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগের ‘কনফিডেন্স’ জড়িত। সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমার কারণে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিও নিম্নমুখী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শহীদুল জাহীদ এই বিনিয়োগের ‘হাতটান’ নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন:

 

"নতুন কোনো প্রকল্প শুরু হয়নি। বিদ্যমান অনেক প্রকল্পও প্রায় স্থবির হয়ে আছে। কোথাও কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, কোথাও কর্মী ছাঁটাই হয়েছে; আবার অনেক জায়গায় বেতন কমানো বা বেতন দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে মানুষের হাতে অর্থ কম যাচ্ছে, ক্রয়ক্ষমতাও কমছে। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।"

 

অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে বেকারত্বের হার বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতির চাপ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

 

 

কর আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পিছিয়ে থাকায় সরকারের তহবিল ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সব খাত মিলিয়ে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা অর্থসংস্থান করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের (৪ লাখ ৯৯ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।