সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩০ ১৪৩২   ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: ওসমান হাদির ওপর হামলা

নাজমুল হুদা

প্রকাশিত : ১০:৩৭ এএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার

রাজধানীর বিজয়নগরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনাটি নিছক কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নয়, বরং দেশে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির দীর্ঘমেয়াদি ছক কষেই হামলা চালানো হয়েছিল। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, হামলাকারীরা কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করে এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে।

 

যেদিন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, তার ঠিক পরের দিনই হাদির ওপর এই হামলা—যা এই পরিকল্পনার সঙ্গে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির যোগসূত্রকে আরও জোরালো করেছে।

 

 

পুলিশের তদন্তে এ পর্যন্ত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে শুটার এবং রেকি (অনুসরণকারী) রয়েছেন। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো, এই তিনজনই আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। ফয়সল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল। ইনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। জানা গেছে, তিনি ৫ আগস্টের পর নিজের নাম 'দাউদ খান' নামে পরিচয় দিতেন। আলমগীর শেখ, যিনি আদাবর থানা যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।  রুবেল, যিনি আদাবর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী বলে জানা গেছে।

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাদির বিভিন্ন গণসংযোগে এই তিনজনের একসঙ্গে থাকা ছবিও পেয়েছে, যা প্রমাণ করে তারা দীর্ঘদিন ধরে হাদিকে অনুসরণ করছিলেন।

 

 

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র মনে করছে, হাদিকে হত্যার লক্ষ্য নিয়ে কমপক্ষে দুই মাস ধরে পরিকল্পনা চলছিল। তফসিল ঘোষণার পর তাঁকে হত্যা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল, এর জের ধরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করা। ওই ঘটনার দিন রাতে রাজধানীতে বাসে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোও এই হামলার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

হামলার পরপরই 'শুটার' ফয়সল করিম ও আলমগীর শেখ দ্রুত দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে, ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যে তারা ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।

 

এই সন্দেহে সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে লোক পারাপারে জড়িত থাকার অভিযোগে সঞ্জয় চিসিম ও সিবিরন দিও নামের দুজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা জানান, তারা দুজন বাংলাদেশি নাগরিককে ভারতে পাচারে সহযোগিতা করেছেন, যাদের ফয়সল ও আলমগীর বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

 

ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে গতকাল সন্ধ্যার পর র‍্যাব নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে ফয়সল করিমের স্ত্রী, শ্যালক ও বান্ধবীকে আটক করেছে। হাদিকে গুলি করার আগে ফয়সলের সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার প্রমাণ পাওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পল্টন থানায় সোপর্দ করা হয়।

 

এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত কিছু ব্যক্তি কীভাবে গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য জননিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করাই এখন তদন্তকারী সংস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জ।