শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

ইতিহাসের ধারায় ৪ শতবর্ষে হযরত শাহ বোগদাদি (রাঃ) এর স্মৃতিসমুহ....

কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৪:৩৫ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ, দীঘি ও হযরত শাহ শরীফ বাগদাদী (রঃ) এর মাজার পর্যটকদের কাছে হতে পারে দর্শনীয় স্থান। এ জন্য আট বছর আগে এলাকাটি অধিগ্রহণ করে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। 

 

তথ্যনুসন্ধান এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে হায়াত আবদে করিম নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তখন এ এলাকাটি শাসন করতেন রাজা নাটেশ্বর রায়। হায়াত আবদে করিম নাটেশ্বর রাজার বাড়িতে চাকরি করতেন। একদিন এ এলাকায় শাহ শরীফ বোগদাদী (রহ.) নামে একজন পীরের আবির্ভাব ঘটে। পরে হায়াত আবদে করিম তার অনুসারী হন। একসময় রাজা নাটেশ্বরও ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। অন্যদিকে নিঃসন্তান হায়াত আবদে করিম রাজা নাটেশ্বর রায়ের অধিনে কাজ করে নিজের বেতনের টাকা দিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর সময় লাগিয়ে নির্মাণ করেছিলেন এ ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি।

 

দিঘীর উত্তর পূর্ব কোণে সমতল ভুমিতেই ইট পুড়িয়ে অত্যন্ত সুন্দর ও নিখুঁত নকশায় টালি ইট ও চুন-সুরকির ওপর খোদাই করে তৈরি করা হয় তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ।

মসজিদটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৩৬০টি মসজিদের মধ্যে একটি। এই মসজিদকে ঘিরে এলাকাটি হতে পারে একটি পর্যটন কেন্দ্র। এই মসজিদের উত্তর-পশ্চিম কোণে হযরত পীর শাহ শরীফ হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও আয়েশা হালিম এতিমখানা রয়েছে। মসজিদের তত্ত্বাবধান করছেন এ মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা। আট বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।

 

এই ঐতিহাসিক মসজিদটির পাশে রয়েছে ঐতিহাসিক নাটেশ্বর দীঘি। রাজা নাটেশ্বর তার নামানুসারে এই দীঘি খনন করেন। ২৭ একর জমির ওপর দীঘিটি খনন করা হয়। দীঘিটি কুমিল্লা ও চাঁদপুর এই দুই জেলার সীমান্তবর্তী স্থানে অবস্থিত। দীঘির পশ্চিমপাড়ে রায়েরবাগ নামে একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেন রাজা নাটেশ্বর। নাটেশ্বর দীঘির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত পীর হযরত শাহ শরীফ বোগদাদী (রহ.)-এর মাজার। সমতল ভুমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচুঁতে অবস্থিত এ মাজারটিতে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বিশাল ওরস ও ওয়াজ মাহফিলের, সমাগম ঘটে লক্ষ লক্ষ ভক্ত মুরিদানের। 
 মসজিদটির পূর্ব পাশদিয়ে বয়ে গেছে ডাকাতিয়া নদী।আর পশ্চিম দক্ষিণ কোনায় রয়েছে আরো সু- বিশাল ২ টি দিঘী, যা "জোড় সতীনের দিঘি" নামে পরিচিত। দর্শনার্থীদের অভিমত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ স্থানগুলো ঘুরে বেড়ালে মনে প্রশান্তি জাগে। এসব পুরোনো কীর্তিগুলো গ্রামের শোভাবর্ধনের পাশাপাশি হয়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন স্পট।

 

এলাকাবাসী মনে করে, সরকারের সহায়তা ও প্রচার পেলে শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ, দীঘি, মাজার পর্যটকদের কাছে হতে পারে দর্শনীয় স্থান।

 

এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা জানান, শরীফপুর শাহী জামে মসজিদ ও নাটেশ্বর দীঘিকে ঘিরে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলোকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা স্থানীয় সাংসদ, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব মো. তাজুল ইসলাম মহোদয়ের কাছে সহায়তা চাইব। এই স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হলে প্রতিদিন এই জেলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বহু লোকের সমাগম ঘটবে।