মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১   ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

কাজিপুরে ভূট্টার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

শফিকুল ইসলাম, কাজিপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:৫২ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানি স্তর নেমে যাওয়ায় স্বল্প সময়ে কম পানিতে কৃষকদের মধ্যে রবিশষ্য আবাদে উৎসাহ দিন দিন বাড়ছে। স্বল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে এ উপজেলায় ভূট্টা চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় মাঠ জুড়ে ছড়িয়ে আছে ভুট্্রার গাছে সবুজ পাতা। বাজার দর ভাল পেলে আগামীতে ভুট্্রার চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে জানিয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। 

কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নে ৫০০ হেক্টর জমিতে ভূট্টা চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষমাত্রা ছারিয়ে প্রায় ৭৫০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে বাদাম ও মরিচ উত্তোলন শেষ হলে আরও ভূট্টা চাষ হবে। এতে ভূট্টা চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছে তারা। গত কয়েক বছর থেকে কৃষকরা ধানের আবাদ করে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন। সরকার ধানের মূল্য নির্ধারন করে দিলেও কিছু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ধানের নায্যমূল্য পান না। আবার সরকারি গুদামেও ধান দিতে গেলে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। গুদামে নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দেওয়ার পর বাজারে খুচরাভাবে বিক্রি করে মূল্য পাওয়া যায় না। দেখা যায় ধান উৎপাদন করতে যে টাকা খচর হয় সবকিছু বাদ দিয়ে কৃষকদের হাতে কোন টাকা থাকেনা। এতে করে কৃষকদের লোকসানে পড়তে হয়। কৃষকরা এখন ধানের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে দিয়ে স্বল্প পরিশ্রমে ও অল্প খরচে অধিক লাভের আশায় ভূট্টা চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।

চরগিরিশ ইউনিয়নের চরনাটিপাড়া, রাজনার্থপুর  গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম, আঃ মোতালেব বলেন, এবার ১৫ বিঘা জমিতে উন্নজাতের সুপার সাইন ২৭৬০ ভূট্টার চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। আর ফলন হয় প্রায় ১৫-২০ মণের মতো। ভূট্টার চাষে খরচও কম আবার পরিশ্রিমও কম। দাম ভাল পেলে আগামীতে আরো বেশি পরিমাণ জমিতে ভূট্টার চাষ করবেন তারা। ছালাল গ্রামের কৃষক রফিক ২৫ বিঘা জমিতে প্যাসিফিক-৬০ ও মতিয়ার রহমান চাকলাদার প্যাসিফিক-১১ জাতের ভূট্টার চাষ  করেছেন। তারা বলেন, ধানের চাষে পরিশ্রম বেশি। সে তুলনায় দাম পাওয়া যায়না। কিছু সিন্ডিকেটের কারণে মাঝখান থেকে লাভবান হয় মধ্যস্তভোগীরা। আর প্রতিবছরই কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। গত বছর কাঁচা ৪শ’ থেকে ৪৫০ টাকা এবং শুকনা ৫৫০-৬৫০ টাকা পর্যন্ত ভূট্টা বিক্রি হয়। এবার ভাল দাম পেলেই হয়। কৃষক রফিকুল ইসলাম, আঃ মোতালেব, রফিক ও মতিয়ার রহমান চাকলাদার বলেন, ভূট্টার আবাদে রোগবালাই তেমন নেই। মচির ও বোরো ধানের চাষ কিছুটা কমিয়ে দিয়ে ওইসব জমিতে ভুট্্রা চাষের দিকে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। ভুট্্রার দাম সরকারিভাবে নির্ধারন করা হলে কৃষকরা নায্য মূল্য পাবে বলে তাদের প্রত্যাশা। 

চরগিরিশ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান, এ এবার কাজিপুরে প্যাসিফিক-১১ জাতের ৩২০ হেক্টর, প্যাসিফিক-৬০ জাতের ১৯০ হেক্টর, এনকে-৪০ জাতের ১৭০ হেক্টর, ৯০০ এম গোল্ড জাতের ৪২০ হেক্টর, মিরাকেল জাতের ২৯৬০ কেক্টর, বারি ভুট্্রা-৯ জাতের ৫০ হেক্টর, কনক জাতের ৩৭০ হেক্টর, এলিট জাতের ৩১০ হেক্টর, ডন-১১১ জাতের ৪৩০ হেক্টর, সুপারসাইন-২৭৬০ জাতের ৫১০ হেক্টর, কাবেরী জাতের ২৫০ হেক্টর, রকেট বিএস ৯০৯৯ জাতের ৩৪০ হেক্টর, কোহিনুর জাতের ৩৯০ হেক্টর, এন টি-০৩২৩ জাতের ২৫০ হেক্টর, এন টি-৬৬২১ জাতের ২৫০ হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ করা হয়েছে।  

কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, বোরো চাষের প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। অন্যান্য ফসল বাড়াতে হলে বোরো চাষ কমাতে হবে। ভূগভেৃর পানি সঞ্চয় করার জন্য কৃষকদের রবিশয্যসহ স্বল্প পানি দিয়ে স্বল্প সময়ে ফসল চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উপজেলার কয়েক শ’ কৃষককে ভূট্টা চাষের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আগামীতে ভুট্্রার আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে এমনটাই আশা করছেন তিনি।