বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রিন লাইনের সব গাড়ি নিলামে বিক্রি: হাইকোর্ট

প্রকাশিত : ০১:১৪ পিএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

আদালতের আদেশ সত্ত্বেও প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘যতবড় বিজনেস ম্যান হোক না কেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যান নি। একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রিন লাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। সব গাড়ি সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেওয়া হবে।’

ক্ষতিপূরণের অগ্রগতির বিষয়ে শুনানিকালে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ পালন না করায় বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার মধ্যে পরিবহনটির ব্যবস্থাপককে তলব করেছেন আদালত। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। অন্যদিকে, গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের আদেশের পর গ্রিন লাইন পরিবহনের কেউ কোনও যোগাযোগ করেন নি, টাকাও দেন নি। তাদের মালিককে স্ব-শরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।’

এসময় গ্রিন লাইন পরিবহনের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ আদালতকে বলেন, ‘আমি সব সময় তাদেরকে আদালতের আদেশ জানিয়ে এসেছি।’ আদালত বলেন, ‘এর (গ্রিন লাইনের) মালিক কে?’ জবাবে অজি উল্লাহ বলেন, ‘মো. আলাউদ্দিন। তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।’ আদালত জানতে চান, ‘কোথায় আছেন এবং কবে আসবেন?’  জবাবে আইনজীবী অজি উল্লাহ বলেন, ‘আমি জানার চেষ্টা করছি।’

এরপর আদালত বলেন, ‘ব্যবসা তো বন্ধ নেই, ব্যবসা তো চলছে? ম্যানেজারকে ডাকেন। ম্যানেজারের কাছ থেকে পজিটিভ কিছু না পেলে আমরা গ্রিন লাইন পরিবহনের সব বাস সিজ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করবো। আমরা সব স্টপ করে দেবো। একটা সীমা থাকা দরকার। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে হয়ে যান নি।’

পরে আদালত বৃহস্পতিবার দুপুর দুটার মধ্যে গ্রিন লাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হতে বলেন। দুপুর দুটার পর এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি হবে বলেও আদালত আদেশ দেন।

রাসেল সরকারএর আগে গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এফআরএম  নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। একইসঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

এরপর গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে গ্রিন লাইন পরিবহনের করা আবেদন খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। তার  গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার জেলার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা।

এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে এ রিট আবেদন করেন। পরে আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেন।