শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

জবি ভিসির সিদ্ধান্তে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

মাহির আমির মিলন, জবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:০৫ পিএম, ১ জুলাই ২০২১ বৃহস্পতিবার

 

 

আসতে না আসতে ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন জবির নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের কয়েকদিনে শিক্ষার্থীদের চাওয়া - পাওয়া সমূহ পূরণ করতে উদাসীনতার পরিচয় দিলেন এই উপাচার্য। 

গত পহেলা জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ২০০৫, এর ১০ (১) ধারা অনুসারে আগামী চার বছরের জন্য জবি নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় অধ্যাপক ড. মোঃ ইমদাদুল হককে। যদিও বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। তবে, ৩রা জুন নবাগত ভিসি ঐতিহাসিক ৬ দফার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চলে যান তাঁর পুরাতন কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সেদিন আর আসেননি নতুন কর্মস্থল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের শুরুতে ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক নাসির আহমেদ কে পুনরায় চাকুরিতে বহালের প্রতিবাদে মানববন্ধনের ডাক দেয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পরবর্তী সময়ে এই মানববন্ধনটি প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের জন্য বাতিল হয়েছে। 

জবির একমাত্র কেন্দ্রীয় খেলার মাঠটি দখল করে খুঁটি বসালেও কিছু জানতেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানালে নতুন উপাচার্য মাঠের বিষয়ে হতাশ করেছে সবাইকে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তিনি সাদামাঠা বক্তব্য দেন। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আপাতত কাজ বন্ধ করলেও মাঠটি নিয়ে ডিএসসিসিকে কিছু বলেন নি বৈঠক হবার পরেও। পুনরায় বহাল থাকে ডিএসসিসির মাঠে মার্কেট নির্মানের সিদ্ধান্ত। 

সবচেয়ে আলোচনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রীদের আবাসস্থল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলটি। সাবেক উপাচার্য হলটি উদ্বোধন করার পরও প্রায় চার মাস হয়েছে এখনো কোনো সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণায়ন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যার ফল হিসাবে গত সপ্তাহে পুরান ঢাকার এক স্থানীয় যুবকের হাতে শ্লীলতাহানির শিকার হয় একজন ছাত্রীকে। শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করলেও উপাচার্যকে পাওয়া যায়নি এই নিয়ে কোনো কথা বলতে। 

করোনা মহামারিতে শুরু থেকে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে দেশের একমাত্র অনাবাসিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। মেস ভাড়া নিয়ে বরাবরের মতো সংকটে রয়েছে পুরান ঢাকার বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের একের পর এক পরীক্ষার সময় দিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসে বিপাকে ফেলে দিয়েছে। অথচ শুরু থেকে পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তবে বর্তমান উপাচার্যের সকল একপক্ষীয় সিদ্ধান্তে হতাশ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। লকডাউন ঘিরে যখন দেশের অন্যান্য  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিজ দায়িত্বে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে সেখানে অনাবাসিক হওয়া সত্বেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন নিশ্চুপ রয়েছে।

 তাছাড়া সীমিত সময়ে সেমিস্টার ফি এবং পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি নিয়ে মনে হয় গা ঢাকা দিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পন্ন আবাসিক হওয়া সত্বেও সকল ফি মওকুফ করেছে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে। অথচ জবি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি থাকার পরও নিজ সিদ্ধান্তে অটল। 

একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যদি এতোটা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কতটা চাপ পড়ে ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ জেনে সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য আহবান করলে সেখানে পোহাতে হয় জাতীয় পরিচয়পত্রের সমস্যা যা অনেক শিক্ষার্থীর নেই। টিকার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্তে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন ধীরগতির সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অধিকাংশ শিক্ষার্থী। যারা এখনো গ্রামের বাড়িতে রয়েছে কিন্তু টিকার জন্য করতে পারেনি আবেদন। 

সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তিন বছর পরে এসে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মুখে পড়ে যে গেটটি রাতারাতি উধাও করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বর্তমান উপাচার্য এসে ঠিক গতকাল বুধবার পুনরায় পূর্বের পুরাতন গেটটি প্রতিস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে। যা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে রীতিমতো হাসিতামাশা শুরু হয়েছে। 

উল্লেখ্য, শুরু থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি নিয়োগ দেওয়া। সকলের একত্রিত মতামত ছিলো উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে জবির শিক্ষকদের যেন বিবেচনা করা হয় তবে এবারে হতাশ করেছে শিক্ষার্থীদের। সবকিছু মিলিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া উপাচার্য সামনের দিনগুলোতে শিক্ষক - শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধন্য দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ তৈরি করবেন।