শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

মাঝরাতে বস্তিতে মুখোশধারী ওরা কারা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ০৫:৪৮ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ রোববার

চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার চাক্তাই ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ এখনও জানতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। তবে স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছে নানা প্রশ্ন।

বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, তারা আগুন লাগার আগে ওই বস্তির বেশ কয়েকটি কলোনিতে কালোপোশাকে আবৃত মুখোশধারী কিছু যুবককে চলাফেরা করতে দেখেছেন।

আরও পড়ুন : চট্টগ্রামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড : ঘুম থেকে চিরঘুমে ৮ জন

রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) আগুনে পুড়ে মারা গেছে নাসির কলোনির বাসিন্দা সুফিয়া বেগমের দেবরের স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিনি বলেন, ‘আমার দেবরের ঘরের (ফরিদ কলোনি) পাশ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়। হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই। রহিমা ভাবির চিৎকার শুনে কলোনির লোকজন বিষয়টা জানতে পারে। পাশের বেড়া ভেঙে বড় দুই মেয়ে ও স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন সুরুজ ভাই। আমার বাসায় আসার পরপরই রহিমা আপা তার ছোট দুই সন্তানকে উদ্ধারে আগুনের মধ্যেই নিজের ঘরে ছুটে যান। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করে আর ফেরার উপায় ছিল না উনার, এর পরপরই মা আর ভাই-বোনকে বাঁচাতে দৌড়ে ওই জ্বলন্ত ঘরে প্রবেশ করে তার বড় মেয়ে নাজমাও। এরপর মেজ মেয়ে নার্গিস (১২) যখন ঘরে প্রবেশ করতে চাইল আমি তার হাত চেপে ধরলাম। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, কিছুই করার ছিল না।’

সুফিয়া বেগমের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরে এ বাড়িঘর ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু বাড়ির মালিকরা তাদের বিভিন্ন আশ্বাসে যেতে দেয়নি। গতকাল দুপুরেও এ নিয়ে কানাঘুষা হয়েছে কলোনিতে, আর রাতে আগুন লাগল।

তরুণ কন্ঠকে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘বিভিন্ন সময় পোশাকধারী বা পোশাকছাড়া পুলিশ আসে কলোনিতে, পার্টির ছেলেরাও আসে। গতকাল রাত ১২টার পরে নাসির কলোনির পেছন দিক দিয়ে কয়েকজন বস্তিতে প্রবেশ করে। কিন্তু তাদের সবার মুখ বাঁধা ছিল, তাই চেনা যাচ্ছিল না। আগে যদি জানতাম, একটারেও যাইতে দিতামনা।’

এমন কথা শুধু সুফিয়া বেগমের নয়, বস্তির সবার মুখে মুখে। সাত্তার কলোনির বাসিন্দা নুর আশা বেগম তরুণ কন্ঠকে বলেন, ‘রাত একটার দিকে আমি টয়লেটে যাওয়ার জন্য উঠেছিলাম। দেখি গলির মুখে তিনজন মানুষ। সারা শরীরে কালো জামা। মুখটাও কালো রুমালে বাঁধা। হাঁটু পর্যন্ত উঠানো বড় বড় জুতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার পর আমি আবারও বাসায় ঢুকে ঘুমিয়েছি কি ঘুমায়নি। সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পাই আগুন আগুন চিৎকার। পাঁচটা কলোনির ২০০ ঘর জ্বলতে এক ঘণ্টাও লাগেনি।’

নুর আশা বেগম বলেন, ‘আপনার যদি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি, তাহলে রাস্তার ওপারের লাকি স্টোরে যান। সত্য কথা জানতে পারবেন।’

নুর আশা বেগমের কথা অনুযায়ী সেই লাকি স্টোরে গেলেও কেউ কথা বলতে রাজি হননি। তবে রাজু নামের এক যুবক জানান, গতকাল দুপুরে কারা যেন এসে বলেছে বস্তি খালি না করলে আগুন জ্বলবে।

আগুনের কারণ জানতে তরুণ কন্ঠকে পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। খাস জমিতে গড়ে তোলা বস্তির কাঁচা ঘরগুলো খুবই কাছাকাছি ছিল। এছাড়া আশপাশে প্রচুর দাহ্যবস্তু রয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, এর সঙ্গে কোনো নাশকতাকারী জড়িত কি-না তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. ইলিয়াস হোসেন তরুণ কন্ঠকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারাই এর কারণ বের করবেন। আগুন কীভাবে লেগেছে, কোনো মুখোশধারী ছিল কি না-সব জানা যাবে।’

এদিকে এ বিষয়ে জানতে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে পরে কথা বলার অনুরোধ জানিয়ে সংযোগটি কেটে দেন তিনি।