শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২১

ড্রেণ নির্মানের কথা বলে প্রবাহমান খাল ভরাট, দূর্ভোগে এলাকাবাসী

মাসুম হাওলাদার বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২  

খাল ভরাটের ফলে শীত মৌসুমের সামান্য বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে পূর্ববাসাবাটি এলাকায়। এছাড়া একমাস ধরে খালটি বন্ধ থাকায় গোসল-পয়ঃনিস্কাশনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানিও স্থানীয়দের দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

স্থানীয়দের দাবি বাগেরহাট পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মানের কথা বলে এই খালে বালু ফেলেছেন।এদিকে কাউন্সিলর বলছেন নাব্যতা হারিয়ে খালটি মরে যাওয়ায় ড্রেণ নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, দ্রুতই কাজ শুরু হবে। তবে বালু অপসারণ করে খালটিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম।

 

স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাট শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদী থেকে রহমানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক ঘেসে পূর্ববাসাবাটি এলাকায় প্রবেশ করা খালটি স্থানীয়দের কাছে পূর্ববাসাবাটি খাল নামে পরিচিত। খালটি গড়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট চওড়া এবং ৭ থেকে ১০ ফুটের মত গভীর ছিল। কিন্তু দুই পারের মানুষের দখল ও এলাকাবাসীর ফেলা ময়লায় খালটির বেশিরভাগ অংশ মৃত প্রায়। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা থাকলেও খালটি খননের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরন্তু মাস খানেক আগে, বাগেরহাট পৌরসভার ৩ (৭,৮ ও ৯) নং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মানের কথা বলে খালটির বেশিরভাগ অংশ বালু ফেলে ভরাট করে ফেলেছেন। একমাসেও খালটিতে ড্রেণ নির্মান বা পুনঃখনের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।এলাকার এ্যাড শহীদুল ইসলাম বলেন বাগেরহাট পৌরসভায় পর্যাপ্ত ড্রেন ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় ভোগান্তিতে পড়ে সাধারন মানুষ। সামনে বর্ষা মৌসুম এ অবস্থায় এলাকার পানি নিষ্কাষনের একমাত্র এ খালটি বালু দিয়ে ভরাট করে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর। সরেজমিনে পূর্ববাসাবাটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় রুবেল নামের এক যুবক বালুর মধ্যে কোদাল দিয়ে লাইন করার চেষ্টা করছেন। কারন জিজ্ঞাসা করলে জানান, একমাস ধরে গোসল, খাওয়া, টয়েলেটের পানি সবকিছু আটকে রয়েছে আমাদের। গন্ধে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বালু তুলে পাইপের মুখ বের করার চেষ্টা করছি। এভাবে কিছুদিন থাকলে এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
একই এলাকার বৃদ্ধ মুনছুর আলী শেখ বলেন, কয়েক যুগ আগে জমি ক্রয় করে এই এলাকায় বাড়ি করেছি। তখন থেকেই এই খালটি দিয়ে বৃষ্টির পানিসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানি নিস্কাশন হত। কিন্তু একমাস আগে স্থানীয় কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম ড্রেন নির্মানের কথা বলে ড্রেজার দিয়ে বালু ফেলে আমাদের খালটি বন্ধ করে দেয়। খাল বন্ধ করায় এখানে আর বসবাসের পরিবেশ নেই। খুবই বিপদের মধ্যে রয়েছি আমরা। 

 

স্থানীয় অপর এক ব্যক্তি অলিল খলিফা বলেন, দশ বছর আগেও এই খালে সাতার কেটেছি, মাছ ধরেছি। তবে দীর্ঘদিনের অবহেলায় খালটির খুব করুণ অবস্থায় ছিল। আর এখন তো বালু ফেলে এর অস্তিত্বই শেষ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই দ্রুতই-ই খালটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হোক।

খাল খনন করা না হলে বর্ষার সময়ে ঘরের মধ্যে দুই তিন ফুট পানি হয়ে যাবে বলে জানান সুফিয়া বেগম। তিনি বলেন, ড্রেণের দরকার নেই। এই খাল যেমন ছিল, তেমন চাই আমরা। খালের পানি দিয়ে আমরা থালবাটি, মাছ-তরকারি ধোয়া, বৃষ্টির সময় বাচ্চাদের গোসলসহ সবই করতাম। বৃষ্টি আসার আগে এই খাল খনন করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যে পাশ থেকে খালটি ভরাট করা হয়েছে, ওই পাশেই রাজু আহমেদ নামের এক ব্যক্তি জমি ক্রয় করে প্লট আকারে বিক্রি করছেন। মূলত ওই জমিতে যাওয়ার রাস্তা তৈরির জন্যই এই খালটিকে ভরাট করা হয়েছে। 

 

সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালটি তার নাব্যতা হারিয়েছে। দুই পারের মানুষের বর্জ্যে খালটি এত নোংরা হয়েছিল যে, কোন শ্রমিক নামতে রাজি হচ্ছিল না। যার কারণে খালটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। দরপত্র আহবানের মাধ্যমে খুব দ্রুতই এখানে ড্রেন নির্মান শুরু করা হবে। খাল ভরাট করে ড্রেন নির্মান আইনগত ভাবে বৈধ কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খাল তো স্থায়ীভাবে ভরাট করা হচ্ছে না। এখানে ড্রেন নির্মান করা হবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, খালে বালু ভরাটের বিষয়টি আমরা জেনেছি। ইতমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের সার্ভেয়ার খালটি পরিদর্শণ করেছেন। কাউন্সিলর কোহিনুর বেগম ডালিমকে খালটিকে পূর্বের স্থানে ফিরিয়ে আনতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তিনি যদি খালটি পুনঃখনন না করেন, তাহলে ম্যাপ অনুযায়ী খালটি পরিমাপ করে পুনঃখননের ব্যবস্থা করা হবে। এবং যিনি খালটি ভরাট করেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর