শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১২৬৫

ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

জুনায়েদ হোসেন

প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮  

পম্পেই নগরীর নামটি অনেকেরই জানা! এটি এমন এক নগরী যেটি ধ্বংস হওয়ার সময় সেখানকার মানুষ চোখের পলক ফেলার সময়টুকু পায়নি। মুহূর্তেই মানুষগুলো ভস্মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কেন এমন হল? এ নগরী নিয়ে ইসলাম ধর্মের পবিত্র কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে। জেনে নিন কীভাবে ধ্বংস হল এ নগরীটি-

 

1.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলের নেপলসের (নাপোলি) কাছে যে আগ্নেয়গিরি রয়েছে তার পাদদেশে "পম্পেই" নামক ছোট এ নগরীটি অবস্থিত। হাজার বছরের পুরনো একটি শহর এটি। আজ থেকে প্রায় দু-হাজার আশি বছর পূর্বে পম্পেই নামক নগরটি রোমানদের দ্বারা অধিকৃত হয়। সেই থেকে রোমানরা সেখানে বসবাস শুরু করে। অভাব নামক শব্দটি হয়ত তাদের কাছে ছিল একদমই অপরিচিত। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি ছিল এ নগরটি। সে সময়কার পৃথিবীর সব থেকে সুখি নগরী ছিল এটি। কিন্তু পম্পেই নগরীর মানুষগুলো ছিলো অত্যন্ত বর্বর, অসভ্য ও নির্মম। তারা যে আগ্নেয়গিরির পাদদেশে বসবাস করতে সেই আগ্নেয়গিরির আগুন ও ছাই এক মূহুর্তে ধ্বংস করে দেয় নগরীটি। সেখানকার প্রতিটি মানুষ,পশুপাখি সহ সকল জীবন্ত প্রাণের স্পন্দন চোখের পলকে ভষ্মীভূত হয়ে যায়।

 

2.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

প্রাচীন গ্রিকরা খ্রীস্টাব্দ ৮ সালের দিকে এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। সে সময় বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ পম্পেই শহরে আসত বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে। এটি ব্যবহার হত বাণিজ্যিক বন্দর হিসেবে। শহরটির এক পাশে রয়েছে সমুদ্র, অপর দিকে সবুজ ভেসুভিয়াস পাহাড় ও বিশাল আকাশ। নগরীটি দু’ভাগে বিভক্ত ছিল যার একটি নিচু স্থান যার নাম পম্পেই এবং অপরটি উঁচু স্থান যার নাম হার্কুলেনিয়াম। তৎকালীন সময়ের রোমের বিশিষ্ট নাগরিকদের জন্য একটি সমৃদ্ধ আশ্রয়স্থল ছিল এ নগরীটি। মার্জিত ঘর এবং বিস্তৃত পাকা রাস্তা, অবাধ যৌনতা, পতিতালয় এসব কোনো কিছুর অভাব ছিল না এ নগরীতে। প্রাচীন গ্রীক, রোমসহ বিভিন্ন দেশের নাবিকদের অবাধ চলাচল ছিল এই নগরীতে।

 

3.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

তাদের সন্তুষ্টির জন্য ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকা থেকে সুন্দরী রমনীদের আনা হত। এই স্থানের অন্যতম বড় ব্যবসা ছিল দেহ ব্যবসা। এ নগরীতে ছিল গ্যালাডিটরিয়াম স্টেডিয়াম, যেখানে দু’জন বন্দি সৈনিক ছেড়ে দেয়া হত একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর শর্ত জুড়ে দেয়া হত, যে বেঁচে থাকবে শুধুমাত্র সে মুক্তি পাবে। তখন দুই সৈনিক একজন অপরকে খুবই নৃশংসভাবে হত্যা করত। এ নৃশংস হত্যা দেখে গ্যালারির মানুষ পৈচাশিক মজা পেত। তাদের এসব কর্মকান্ড হয়ত প্রকৃতিও সহ্য করতে পারেনি। ৭৯ খ্রিষ্টাব্দতে ভেসিভিয়াস আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের ফলে পম্পেই শহরসহ তার আসেপাশের বেশ কিছু অঞ্চলের ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। যেখানে পম্পেই শহরের ছিল ১৬ হাজার মানুষ।

 

4.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

ভেসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি অবশ্য রাতারাতি গড়ে ওঠেনি। বিষেশজ্ঞদের মতে এ পর্বত শত হাজার বছরের পুরানো একটি পাহাড় যেটি পূর্বেও কয়েকবার বিস্ফোরিত হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিষ্টাব্দ ১৭৮০ সালে এটি আবারো বিস্ফোরিত হয় যেটি আমাদের কাছে এভেলিনো ফাটল হিসাবে পরিচিত। এ বিস্ফোরনটি খুবই শক্তিশালী ছিল। প্রায় ২২ মাইল দূর পর্যন্ত কয়লা, পাথরসহ ভূর্গভস্ত খনিজ পর্দাথগুলো ছিটকে যায়। পুরো আকাশ কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়। ১৫ মাইলের মধ্যে থাকা প্রায় প্রতিটি গ্রাম, ঘর এবং খামার ধ্বংস হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে অনেকটা পরিবর্তিত হয়েছে ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি। বেশ কয়েকবার অগ্ন্যুৎপাতের ধাক্কায় অনেক বদলে গেছে পাহাড়টি। বর্তমানে এটিকে বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে গণ্য করা হয়।

 

5.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

চলুন এবার জেনে নেই পবিত্র কোরানুল কারীমে পম্পেই নগরী সম্পর্কে কি বল হয়েছে। পবিত্র কোরানে সূরা ইয়াসীনের ৬৬ এবং ৬৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা এরশাদ করেছেন-"হে মানবজাতি তোমরা শুনে রাখ, আমি ইচ্ছা করলে তাদের চক্ষু সমূহকে বিলীন করে দিতাম যার কোনো অস্তিত্ব থাকত না, অতঃপর তারা লাফ দিয়ে রাস্তার দিকে যেত কিন্তু তারা কিছুই দেখত না। এবং আমি ইচ্ছা করলে ঘরে বসা অবস্থাতেই তাদের আকৃতিগুলো পরির্বতন করে দিতাম কিন্তু তারা কিছুই করতে পারত না, তারা যেখানকার সেখানেই থেকে যেত ফলে তারা সামনেও এগোতে পারত না"।

 

6.ইতিহাসের বর্বরতম নগরী পম্পেই

পম্পেই নগরীর বাসিন্দারা আল্লাহর অবাধ্যতায় এতটাই নিমগ্ন ছিল যে, তারা পশুপালের সঙ্গেও যৌনচার করতে দ্বিধাবোধ করত না। এখানে নারী পতিতালয়ের পাশাপাশি পুরুষ পতিতালয়ও ছিল। এখানকার মানুষ হযরত ঈসা (আঃ) এত প্রচারিত ধর্মের পথ পরিহার করে যুক্ত হতে থাকে নানা পাপাচারে। তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সকল মুসলমানেরা এ নগরী ত্যাগ করে চলে যায়। ঠিক সেই সময় আল্লাহ তা'য়ালার পক্ষ থেকে নেমে আসে কঠিন থেকে কঠিনতর আজাব। সেদিন সকালে কেউ বিশ্রামে ছিল কেউ বা পাপাচারে ব্যস্ত ছিলো। ঠিক সেই সময় গর্জে ওঠে ভেসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত লাভা আর ছাই প্রায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার উচ্চতায় ওঠে তারপর আচরে পরে পম্পেই নগরীতে। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সকল প্রানের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যা এ নগরী থেকে। যে অবস্থাতে তারা ছিলেন সেভাবেই তাদের শরীর ঝলসে কয়লায় পরিনত হয়।

এই বিভাগের আরো খবর