শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৭৭০

জগন্নাথবিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার চেয়ে পুরানঢাকায় মেস পাওয়া কঠিন

মাহির আমির মিলন, জবি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১  

গাজীপুর থেকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ছয়টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে মেস ভাড়া নিতে রওয়ানা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ। 

সকাল সাড়ে নয়টার দিকে (জবি) ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান। অযথা সময় নষ্ট  করে নিজ বিভাগের বন্ধুদের সহায়তা নিয়ে বের হন পুরান ঢাকায় মেস খুঁজতে। দীর্ঘ ১৮ মাস পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে জরুরি ভিত্তিতে মেস ভাড়া নিতে আসেন।

১৬ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে শুরু করে রাত ১০ টা অবধি ক্যাম্পাসের আশেপাশে থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার কলতা বাজার, লক্ষ্মীবাাজার, নারিন্দা, ওয়ারী, বাংলাবাজার, রায়সাহেব বাজার সহ প্রতিটি অলি-গলিতে লিফলেটের সহায়তায় মেস খুঁজলেও মিলেনি কোনো কাঙ্ক্ষিত মেস। 

জবির ১৫ তম ব্যাচের এই শিক্ষার্থী রায়হান জানায়, যা কয়েকটি বাসা খালি রয়েছে কল করার পরে জানিয়ে দেওয়া হয় ব্যাচেলর ভাড়া দেওয়া হবে না আর না হয় মাত্রাতিরিক্ত ভাড়ার জন্য বাসা নিয়ে কথা বলা যায় না। একে তো কোনো রুম পাচ্ছি না তার উপরে আবার তীব্র মেস সংকটে ভুগছি আমরা বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থী। 

এই শিক্ষার্থী আরও জানান, বৃহস্পতিবার সারাদিন খোঁজার পরে কোনো বাসা খালি পাওয়া যায় নি। শুক্রবারও সকাল সকাল বের হয়ে পড়ি বাসা খুঁজতে। শেষ পর্যন্ত কোনো উপায় না পেয়ে ছয়জন বন্ধু মিলে আপতত পরীক্ষার কথা চিন্তা করে একটা বাসা নিয়েছি। তবে বাসার অবস্থা এতোটা নোংরা এখানে থেকে পড়াশোনা তো দূর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি দেখছি। 

অপরদিকে মেয়েদের তো রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে বাসা ভাড়া নেওয়া থেকে শুরু করে বাসা খুঁজে পাওয়া অবধি। একেই তো একমাত্র ছাত্রী হলের সিট বরাদ্দ করবে বলে আমাদের একের পর এক আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে বাসা ভাড়া নিতে গিয়ে নানা দুশ্চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। 

কুমিল্লার শিক্ষার্থী সুমাইয়া জামান মিলি বলেন, আমরা ১৩ জন মেয়ে মিলে এক সপ্তাহে ধরে বাসা খুঁজছি কিন্তু কিছুতেই মিলছে না ফাঁকা বাসা। আমরা মেয়ে বলে বিকেলের পরে আর বাসা খুঁজতে বের হতে সাহস পাচ্ছি না। এখনো পর্যন্ত মিলেনি কোনো বাসা। পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসছে আর আমাদের চিন্তা বাড়ছে শুধু। 

আমাদের ক্যাম্পাসের পরিধি যেমনি ছোট ঠিক তেমনিভাবে হাজারো সমস্যায় জর্জরিত পুরান ঢাকার পথে - ঘাটে। পুরান ঢাকার অলি-গলি গুলো দেখলে এমনিতে ভয় করে। সেই সাথে কিছু বাসার নকশা এমনি যে কোনো সাধারণ মেয়ের পক্ষে এইসব বাসায় উঠা মোটেও নিরাপদ নয়। কবে যে হলে সিট পাবো সেই আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছি। 

জবির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা আফরিন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার চেয়ে পুরান ঢাকাতে মেস ভাড়া পাওয়া কঠিন। একটা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশেপাশে কোথায় বাসা ভাড়া পাওয়া যাবে না বিষয়টা মেনে নিতে কষ্ট হয় আমাদের। পরিবারের মধ্যে যুদ্ধ করে আমরা পড়াশোনা করে যাচ্ছি রীতিমতো। 

আসলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কি চাই তারা নিজেরাও জানে না। একটা হল তৈরি করেছে তাহলে সেটা চালু করতে কি এতো সমস্যা তাদের। আমাদের মেয়েদের কতটা সংগ্রাম করতে হয় জবি প্রশাসন হয়তো ভুলে গেছেন। 

জবি শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, একের পর এক পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করে আমাদের রীতিমতো বিভ্রান্ত করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে আমরা বাসা ভাড়া নিয়ে পড়েছি বিপাকে। একটা অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা কতটা কঠিন তা আজ বুঝতে পারছি আমরা। এক নতুন ক্যাম্পাস হবে বলে আশায় বসে আছি সেটাও মনে হয় আগামী পাঁচ বছরে আদ্য সম্ভব না। একের পর এক মিথ্যা আশ্বাস আর দুর্নীতি সব খেয়ে ফেলছে আমাদের সম্পদ গুলোকে। 

উল্লেখ্য যে, গত জুলাই পরীক্ষা নিবে বলে জানান জবি প্রশাসন। পুনরায় আবার নতুন তারিখ ঘোষনা করে আগস্টের শুরুতে পরীক্ষা নিবে এবং সেটূ বাতিল করে নতুন তারিখ ঘোষনা করে আগামী ৭ই অক্টোবর থেকে সশরীরে হবে জবির সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। তার পর থেকে মেস ও বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন জবির প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার অনাবাসিক শিক্ষার্থী। 

এই বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ  ইমদাদুল হকের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কিছুতেই সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। 
 

এই বিভাগের আরো খবর