শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১১ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৩৩৫

সম্রাটকে নিয়ে যা বললেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী

তরুণ কণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০১৯  

সম্পদ অর্জন নয়, জুয়া খেলাই ছিল সদ্য র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার ও যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের একমাত্র নেশা। এমন তথ্য দিয়েছেন সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী।

রোববার রাজধানীর মহাখালীতে সম্রাটের বাড়িতে র‌্যাবের অভিযানের সময় সাংবাদিকদের সম্রাট সম্পর্কে নানা চমকপ্রদ তথ্য দেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। ক্যাসিনোর আয় সম্রাট দলের জন্য খরচ করত মন্তব্য করে শারমিন চৌধুরী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদও জানান।

সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে যুবলীগের কয়েকজন নেতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে সম্রাটের নামও উঠে আসে। কয়েক দিন ধরে তাকে গ্রেফতারের গুঞ্জন শোনা গেলেও রোববার কুমিল্লা থেকে একজন সহযোগীসহ তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এরপর সম্রাটের বাসা ও অফিসে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মহাখালীর বাসায় অভিযানের সময় তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

আপনার স্বামী র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, এ ব্যাপারে কিছু জানেন কি না- জানতে চাইলে শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘হ্যাঁ জানি, ও অ্যারেস্ট হয়েছে, এটা জানি। তবে ওর সাথে আমার দুই বছর ধরে সম্পর্ক নেই। ও যে ক্যাসিনোর গডফাদার, এটাও আমি জানি না। আমি জানি, সে যুবলীগের ভালো একজন নেতা। এটা ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের সবাই জানে ও খুব ভালো একজন নেতা। আমিও সেটাই জানি। আমার সাথে যেহেতু দুই বছরের দূরত্ব সে কারণে আমি জানি না যে, এত বড় একটা ক্যাসিনো চালায় সে।’

দুই বছর আগে আপনি কী জানতেন? এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম সে একজন নেতা। আর কিছুই জানতাম না।’


তার সম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে জানতেন না- এ বিষয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বলেন, ‘ওর সম্পদ বলতে কিছুই নেই। ক্যাসিনো চালিয়ে ও যা ইনকাম করে তা দলের জন্য খরচ করে, দল পালে (পালন করে)। আর যা রাখে তা সিঙ্গাপুর কিংবা এখানে জুয়া খেলে। ওর সম্পদ বলতে কিছুই নেই।’

ক্যাসিনো চালিয়ে দল পালে এটা কীভাবে বুঝলেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা জানি,বোঝা যায়, ওর জনপ্রিয়তা দেখেই তো বোঝা যায়। আর এরকম জনপ্রিয়তা কোনো নেতার আছে বলেন? আর কোনো নেতার নেই, একমাত্র ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের আছে। উত্তরেও (ঢাকা উত্তর) তো একজন আছেন নিখিল নামে, তার তো এত জনপ্রিয়তা নেই।’

ক্যাসিনো চালাতে আপনি কী কখনও নিষেধ করতেন না- এ বিষয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘আমার সাথে ওর একটু মিলতো কম। ও ছেলেপেলে নিয়ে বেশি থাকতে একটু পছন্দ করত।’

আপনার সঙ্গে দূরত্ব কী রাজনৈতিক কারণে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, ব্যক্তিগত কারণে।’

সম্রাটের উঠে আসার বিষয়ে কী জানেন- এ বিষয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বলেন, ‘ও কিন্তু শুরু থেকেই সম্রাট, নাম যেমন...সহ-সভাপতি আরও অন্য কেউ যে আছে ওদের মতো না ও। আগে থেকেই ওর চলাফেরা ভালো। ক্যাসিনোতে  ধীরে ধীরে কীভাবে আসছে আমি জানি না। ওর জুয়া খেলার নেশা আছে।’

‘আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে এ অভিযানের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাব। তিনি যদি আরও আগে উদ্যোগ নিতেন, তবে আরও ভালো হতো।’

উনি তো মাঝে মাঝে সিঙ্গাপুর যেতেন, আসলে কী জন্য যেতেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ও সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতেই যেত। জুয়া খেলা তার নেশা, কিন্তু সম্পত্তি গড়া তার নেশা নয়। দোকান, গাড়ি- এগুলো তার নেশা নয়। একভাগ জমাত সেটা দিয়ে সিঙ্গাপুর গিয়ে জুয়া খেলত।’

সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্রাটের ছবি দেখেছি, এ বিষয়ে কী জানেন- জানতে চাইলে দ্বিতীয় স্ত্রী বলেন,‘ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে না, আমার সঙ্গে দুই বছর ধরে ও (সম্রাট) সিঙ্গাপুর যায় না, সিঙ্গাপুরে আমাকে নেয় না। ওখানে বোধহয় চায়না-মালয়েশিয়া মিক্স এমন একজনের সঙ্গে সম্পর্ক হইছে। ও (সম্রাট) গেলে ওর সঙ্গেই সময় কাটায়।’

যখন সম্পর্ক ছিল তথন আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই শেয়ার করত, কাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা, টাকা-পয়সা কোথায় যেত- এ বিষয়ে শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাসিনোটা ৩-৪ বছর ধরে। এর আগে কিন্তু ক্যাসিনোটা ছিল না। তখন তো ঠিকাদারি যেটা করে, মনে হয় ওগুলো করত। আর নিশ্চয়ই দলে কোনো বড় ভাই আছে।’

তার গুরু বা নেতা কে ছিলেন জানেন- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, এটা জানি না। ও কিন্তু সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে। সবার সাথে ভালো একটা বন্ডিং আছে।’

সম্প্রতি জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ গ্রেফতার হন, তাদের চেনেন- জানতে চাইলে সম্রাটের স্ত্রী বলেন, ‘চিনি না, খালেদকে দেখছি। মাঝে মাঝে অফিসে যেতাম, দেখতাম, ওইটুকুই। আর কিছু না।’

আপনার সঙ্গে কোনো নেতাকে নিয়ে গল্প করত না- এ বিষয়ে বলেন, ‘না, না। ও এগুলো পছন্দ করে না- আমি ফেজে আসি, কোনো ক্যামেরার সামনে আসি, কোনো রাজনীতি করি, এটা পছন্দ করত না। ও চাইত আমি হাউজওয়াইফ...আমি শুরু থেকেই নামাজটা পড়া খুব পছন্দ করি। ঘরে থাকা পছন্দ করি। জাস্ট ও আমাকে এভাবেই রাখছে।’

আপনি যখন জানলেন তিনি জুয়ায় আসক্ত, অন্য নারীর প্রতি আসক্ত- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা পরে জানতে পেরেছি। যখন বিয়ে করেছি তখন জুয়া জিনিসটা কী, এত বড় যে খেলার জায়গা আছে, আমার মাথায়ই ছিল না।’

আপনাদের বিয়ে হয়েছে ১৯ বছর। তখন তার অবস্থা কেমন ছিল, আর এখন কেমন- জানতে চাইলে বলেন, ‘আগে যেমন ছিল সম্পদের দিক থেকে এখন ঠিক তেমন। তার সম্পদ, ফ্ল্যাট, গাড়ি করার নেশা নেই। একমাত্র নেশা জুয়া খেলা।’

‘আমি দ্বিতীয় স্ত্রী, প্রথম তার বিয়ে হয়েছিল, সেখানে ডিভোর্স হয়ে গেছে, ও বাড্ডা থাকত’,- বলেন শারমিন চৌধুরী।

তার ঢাকায় কয়টি বাড়ি- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জানামতে শান্তিনগরের বাসা, এই বাসা, আরেকটা ডোম-ইনোতে স্লোভাবে (কিস্তি) দেয়া শুরু করেছে, সেটা এখানে (মহাখালী) ৩১ নম্বর রোডে।’

কাকরাইলে তার যে অফিস সেটা তার নিজের কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘যে ফ্লোরে তার অফিস সেটা তার নিজস্ব অফিস।’

এ ভবনটি কী তার দখল করা- এ বিষয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী বলেন, ‘না, পুরাটা দখল করা না। গেটে ঢুকতে যে চেক করা হয়, ওভাবে কেউ চেক করে আর উঠতে চায়নি। অতএব আস্তে আস্তে অফিসটা খালি হয়ে গেছে। যে ফ্লোরে তার অফিস সেটাই তার অফিস এবং নিজস্ব কেনা।’

তার সঙ্গে কী এখন আপনার কোনো সম্পর্ক নেই- এমন প্রশ্নের জবাবে শারমিন বলেন, ‘সম্পর্ক আছে, সেপারেশনও না। মাঝে মাঝে কথা হয়, মাসে দু-তিনবার আমি কাকরাইলে যাই। ও (সম্রাট) এখানে আসে না। ও ওপেন হার্ট সার্জারির রোগী, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নিষেধ।’

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের পর বলা হয় তিনি নিখোঁজ, তিনি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘না, যোগাযোগ করেনি। ও সবসময় ভাবে আমি বোকা, আমি বলে দেব সত্য কথা। ভয় ছিল।

এই বিভাগের আরো খবর