শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৬৯

‘বাংলাদেশে আনা ইভিএম মেশিনে শতভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যালটের চেয়েও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যারা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তারা এই মেশিনটি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। বাংলাদেশে আনা এই অত্যাধুনিক মেশিনে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত ভোট গ্রহণ সম্ভব। তবে ইভিএমের বিষয়ে আস্থার সংকট রয়েছে।

জনমনে আস্থা সৃষ্টিতে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
আজ শনিবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও ইভিএম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন।

এডিটরস গিল্ড সভাপতি মোজাম্মেল বাবুর সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তারা আরো বলেন, শুধুমাত্র ইভিএম’র মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন, সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্তরিক হতে হবে। ভোটারদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এই আলোচনায় অংশ নিয়ে লেখক ও প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি ইভিএমের বিভিন্ন অংশ দেখতে খুলে রাখতে বলেছিলাম। আমাকে যে মেশিনটি দেখানো হয়েছে, তার হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে সব কিছু আমি দেখেছি, তারা খুব সুন্দরভাবে এটি করেছেন। ক্যাবলসহ সকল কিছু স্পেশালি কাস্টমাইজড করে তৈরি করা। অন্য কোনো যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস এতে যুক্ত করার সুযোগ নেই। এই বিষয়গুলো ভোটারদের জানা প্রয়োজন। ইভিএম’র টেকনিক্যাল বিষয় নিয়ে টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের নিয়ে আলোচনার সুপারিশ করেন তিনি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে বিমানবন্দরেও সমস্যায় পড়তে হয়। ইভিএমে এটি অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, সময় লাগতে পারে। এটি ভোটারদের জন্য বড় অন্তরায়। ভারতেও ভিভিপ্যাটের (ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলিং) বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন ভোটারদের আস্থা না থাকলে ইভিএমে যতো ভালো নির্বাচনই হোক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

সাবেক কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন বলেন, আগের ইভিএমের চেয়ে এখনকার মেশিনগুলো অনেক উন্নত। সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে এটি আনা হয়েছে। কারো সন্দেহ থাকলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখে আসেন। একটিতে না হলে ৫০টি মেশিন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ইভিএমে শতভাগ স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানী ও রাজনীতি পর্যবেক অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে ইভিএম ছিল না, তারপরেও কিন্তু সেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। আবার কুমিল্লার সিটি নির্বাচনে ইভিএম থাকলেও পরাজিত প্রার্থী নির্বাচনী ফল মেনে নিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য মাঠে রাজনৈতিক ব্যালেন্স থাকতে হবে। সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ইভিএম নিয়ে যারা বিরোধিতা করছে সেই বিএনপির তো নির্বাচন কমিশন, সরকার, এমনকি জনগণের ওপরও আস্থা নেই। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকেও তারা বিতর্কিত করেছে।

বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন, ইভিএমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সবকিছু লকড। তারপরও কথা রয়েছে। এই মেশিন সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে না। এটি মাঠ পর্যায়ের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। ইভিএম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ইভিএম উদ্ভাবন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়া, আগের রাতেই ভোট দেওয়া এবং ভোটের পর ফল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া- এসব বন্ধ করতেই ইভিএম আনা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে এগুলোর কোনোটিই সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, ইন্টানেটসহ কোনো ধরনের সংযোগ নেই। এক্সটার্নাল ডিভাইসও যুক্ত করার সুযোগ নেই। ফলে ইভিএমে কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই।

মানবাধিকার ও উন্নয়ন কর্মী খুশি কবীর বলেন, গত ২০ বছর ধরে যত মেশিনে আমি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছি, ক্ষেত্রে আমার সমস্যা হয়ে আসছে। এখন ইভিএম সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই কম। অনেক দেশে এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানুষের প্রশ্নের জবাব দিয়ে ইভিএমের প্রতি আস্থা সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মূল বিষয় হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সকল দলের অংশগ্রহণের পাশাপাশি ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নির্বাচনের পর সুবর্ণ চরের মতো গণধর্ষণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেবিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই হবে, যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আস্থা আসবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই আস্থা আছে কিনা, সেটাই মূল প্রশ্ন। ক্ষেত্রে ইভিএমে ভোট হওয়ার পরেও নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ ওভাররাইটের মতো ১ শতাংশ না ৫০ শতাংশ দেওয়া হলে তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। যে বিষয়টা নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে পারে। আবার ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট কম পড়ার ঘটনাও রয়েছে। তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য আগে জনমনে আস্থা ফেরাতে হবে।

নির্বাচন পর্যবে মনিরা খান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এত হাজার কোটি টাকা দিয়ে কেন ইভিএম কেনার কথা হচ্ছে, দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি সেই প্রশ্নটি রাখতে চাই। আবার ১৫০টি আসনে ইভিএম মেশিনে শতভাগ ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন হলে বাকি আসনের ভোটারদের অধিকার লঙ্ঘন হবে। এ সকল বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সূচনা বক্তব্যে এডিটর্স গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সবকিছু নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হয়। তবে ইভিএম নিয়ে কমনগ্রাউন্ডে আলোচনা হতে পারে। সঠিক-বেঠিকের বিষয় না, এর কতটা ইতিবাচক ও কতটা নেতিবাচক দিক আছে, তা আলোচনা করা যেতে পারে। ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে না গিয়ে ইভিএম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটাই আলোচনার বিষয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এই বিভাগের আরো খবর