শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৭৯০

বন্ধ হচ্ছে বিজেএমসির অধীন রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল

প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২০  

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) অধীন পাটকলগুলো বন্ধের পরিকল্পনা করছে সরকার। সেক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পিপিপি) ভিত্তিতে পুনরায় চালু করা হবে পাটকলগুলো। ক্রমাগত লোকসানের বোঝা থেকে মুক্ত হতে এ পরিকল্পনা করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে মত দিয়েছেন।

বহু বছর ধরেই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো লোকসানে চলছে। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছিল সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে। বর্তমানে ২৫টি পাটকলে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক রয়েছেন, যাদের বেতন-ভাতা নিয়মিতভাবেই বকেয়া হয়ে পড়ে। পাওনা আদায়ের জন্য এ শ্রমিকদের প্রায়ই আন্দোলনে নামতে হয়। আবার বিগত বছরগুলোয় যারা অবসরে গিয়েছেন, তাদেরও অবসর সুবিধা বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা পাওনা আছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব পাটকলের কার্যক্রম বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারের দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে সম্প্রতি লোকসানে চলা পাটকলগুলোর বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়ে কর্মপরিকল্পনার একটি সারাংশ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সারাংশে সই করে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে অভিমতও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের ইতিবাচক সাড়া পেয়ে এরই মধ্যে এটি বাস্তবায়নে প্রস্তুতি শুরু করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে প্রথম প্রস্তুতি সভাটি গতকালই অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

সভায় তিন মন্ত্রী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ের সচিব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার মহাপরিচালক, বিজেএমসির চেয়ারম্যান প্রমুখ। সভায় পাটকল কার্যক্রম বন্ধের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কার্যক্রম বন্ধের লক্ষ্যে কী কী করা যেতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ২০১৪ সালের পর থেকে অবসরে যাওয়া ন্যূনতম ছয় হাজার শ্রমিকের অবসর সুবিধা পরিশোধের বিষয়টি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো অনেক দিন ধরেই লোকসান গুনছে। চলতি অর্থবছরেও এ লোকসানের পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সচল রাখার চেষ্টায় গত এক দশকে পাটকলে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে পাটকল বন্ধ নয়, পিপিপির মাধ্যমে চালানো যেতে পারে বলে মনে করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

সভা শেষে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক গণমাধ্যমকে জানান, দেশের পাট খাতে ব্যক্তি খাতের অংশ এখন ৯৫ শতাংশ। মাত্র ৫ শতাংশ আমাদের সরকারি মিলগুলোর। ক্রমাগত লোকসান হবে, এত টাকা সরকারের দেয়ার ক্ষমতা নেই। শ্রমিকদেরও সবসময় আন্দোলন করে টাকা আদায় করতে হয়। নয় হাজার কর্মী আছেন, যারা পেনশনের টাকা পাননি। তাদের প্রথম কিস্তিতে টাকা দেয়া হবে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম কিস্তি দেয়া হবে। করোনা না হলে আমরা পুরোটাই দিতে পারতাম। এখন পার্ট বাই পার্ট দেব। অবশ্যই তারিখ বলে দেব। আমরা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে দিতে চাচ্ছি।

তিনি বলেন, আগে মিলগুলোকে বিক্রি করে দেয়া হয়েছিল। আমরা বিক্রি না করে জুট মিল রাখব। এমন ম্যানেজমেন্ট দেব যাতে লোক ছাঁটাই না হয়। এ শ্রমিকরা এখানেই চাকরি পাবেন, কারণ দক্ষ কর্মী ছাড়া মিল চালাতে দেয়া হবে না। মিলগুলো বুঝে পাওয়ার পর টেন্ডার হবে। যে বেশি দেয় তাকে দেয়া হবে। কিন্তু তাকে অবশ্যই পাটকল পরিচালনায় দক্ষ হতে হবে। দক্ষ না হলে সে কাজ করবে না। জমি নেয়ার চেষ্টা করলে সেটা আমরা দেব না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বঙ্গবন্ধু পাটের জন্য আন্দোলন করেছেন, সুতরাং পাটকে আমাদের রাখতে হবে। পিপিপির মাধ্যমে জুট মিল থাকবে, এটা ডিসাইডেড।

বিজেএমসির অধীনে এক সময় ৭৬টি পাটকল ছিল। বিভিন্ন সময়ে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার কারণে এ সংখ্যা এখন ২৫টিতে নেমে এসেছে। এর মধ্যে তিনটি পাটবহির্ভূত কারখানা। এ হিসেবে সরকারি পাটকলের সংখ্যা ২২টি। এসব পাটকলে কাজ করেন ২৫ হাজার শ্রমিক।

কয়েক বছর আগে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর সংস্কারের জন্য চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান চায়না টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন ফর ফরেন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল করপোরেশনের (সিটিইএক্সআইসি) কারিগরি সহায়তা নেয়ার জন্য একটি সমঝোতা চুক্তি সই হয়। সিটিইএক্সআইসির জরিপ বলছে, পাটকলগুলোর বিদ্যমান পুরনো যন্ত্রপাতি সংস্কার করে কোনো লাভ হবে না। এর সবই বদলাতে হবে। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পিপিপির ভিত্তিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পরিচালনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে সরকার।

এই বিভাগের আরো খবর