শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৯২৪

পুলিশ ও আওয়ামীলীগে শুদ্ধি অভিযান জরুরী, সময় গেলে সাধন হবে না

এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু

প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

 

সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্যদের অপরাধ প্রবনতা হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় সহ বিভিন্ন অভিযোগ। এবং আওয়ামিলীগ ও ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারীদের অপকর্ম । শুদ্ধ রাজনৈতিক চর্চা বাদ দিয়ে সকলের মাঝে নেতা হওয়ার প্রবনতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক শিক্ষায় দিয়ে নতুন কর্মী সৃষ্টি না করে ছাত্রলীগ নেতাদের বাণিজ্য নীতি সহ নানানরকম অনিয়ম ও বিভিন্ন অরাজনৈতিক কার্যকলাপের বিষয় উল্লেখ করে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোষ্ট করেছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামিলীগ নেতা এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহানগর আওয়ামিলীগ নেতা এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু মঙ্গলবার রাতে তার নিজ ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া স্টাটাস টি হুবহু তুলে ধরা হলো। “আজ একটি ভালো সংবাদ দেখলাম । ঢাকা মহানগরীর কোন এক থানায় একজন নিরিহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করার অপরাধে একজন এসআই এবং একজন এএসআই কে বরখাস্ত করা হয়েছে । পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে এ ধরনের আচরন আশা করছে দেশের সকল জেলা , উপজেলা ও গ্রামের মানুষেরা । এ সংবাদ আমাকে ভীষণ ভাবে আশাবাদী করেছে । জনগণ নিশ্চয়ই এ সংবাদে খুশী হয়েছে। পুলিশের মধ্যে জবাবদিহিতার নীতি থাকলে পুলিশ বেপরোয়া হতে পারবে না । সাড়া দেশ ভয়ংকর মাদকে ছেয়ে গেছে ! গ্রামে গঞ্জেও পৌছে গেছে ইয়াবা , ফেন্সিডিল ! বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা প্রতিনিয়ত সেবন করছে !! কিশোর তরুন তরুণীরা জানে কোথায় কার কাছ থেকে মাদক কিনতে হবে । সিএনজি ড্রাইভার কিংবা রিক্সাওয়ালাও মাদক বিক্রির স্পট চিনে ! কিন্তু প্রকৃত বিক্রেতারা ধরা পরছেনা!!

অপরদিকে নিরিহ, সাধারন মানুষকে মাদক মামলায় চালান দেয়া হচ্ছে। বিদেশ ফেরৎ লোক পাওয়া গেলেই পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে মাদকের আসামী করে দেবে ভয় দেখিয়ে অর্থের বিনিময়ে দফারফা করছে !! দরদামে না মিললে চালান দিয়ে দিচ্ছে !! এটি কোন একটি বিশেষ থানার চিত্র নয় , দেশব্যাপী চলছে এসব। গ্রামের চা দোকান থেকে শুরু করে অফিস আদালত সর্বত্র আছে এই নিয়ে প্রতিনিয়ত আলোচনা !!

যদি আইন সংশোধন করে , নতুন আইন করা যায় যে , কাউকে মাদক সহ গ্রেফতার করলে , যত পিস ইয়াবা কিংবা ফেন্সিডিল সহ গ্রেফতার করা হয়েছে - তার মধ্য থেকে দুই পিস রাসায়নিক পরিক্ষার জন্য পাঠিয়ে বাকি সকল মাদক আসামীর সাথে কোর্টে প্রেরণ করতে হবে । কোর্টেই থাকবে মাদক রাখার কক্ষ  এবং সাত দিনের মধ্যে কোর্ট প্রঙ্গনে বিচারক সাহেব তা ধংস করবেন , তাহলে মিথ্যা মামলার ব্যপকতা কমতে বাধ্য। কয়েক মাস যাবৎ জমানো মাদক ধংশের দায়ীত্ব পাওয়ার জন্য অনেক বড় লেনদেন হয় , আমরা কি তা জানি ?

কাউকে বিনা কারনে কোন ভাবেই হয়রানি করা যাবেনা । পুলিশের আচরনের জন্য যেন সাধারন মানুষ সরকারের উপর বিরক্ত না হয় তা নিশ্চিত করা উচিৎ । হিন্দু ,বৌদ্ধ, খৃষ্টান , নাস্তিক , উপজাতি ও মেথর সম্প্রদায়ের সুবিধার জন্য সাধারন দোকানপাটে কোকাকোলা স্প্রাইটের মত বিয়ার ওয়াইন বিক্রি বৈধ করার সময় এসে গেছে । আর দেরী করা ঠিক হবেনা , যুব সমাজ ধংস হয়ে যাচ্ছে। একই রকম ভাবে আওয়ামীলীগ ও তার সকল অংগ ও সহযোগী সংগঠনেও শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন । ছাত্রলীগ গত দশ বছরে ঝাকে ঝাকে আদর্শবান নেতা তৈরী করা উচিৎ ছিল । দেশের প্রতিটি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা হয়ে উঠা উচিৎ ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক ও বাহক এবং দেশপ্রেমিক রাজনীতি সচেতন মানুষ । কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের একটা বিশাল অংশ জানেনা , বঙ্গবন্ধু দেশের জন্য কি করেছেন । দলের কর্মীদের তিনি কেমন করে ভালোবাসতেন । তিনি কত বছর জেলে ছিলেন। তিনি জেলে থাকার পরও তাঁর কর্মী সমর্থকেরা কিভাবে ভাষা আন্দোলন, গণ অভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ সফল করেছে । এমনকি জানেনা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন কবে ।

ছাত্রলীগ নেতাদের দায়ীত্ব হচ্ছে , কর্মী সমর্থকদের তৈরী করা , তাদের রাজনৈতিক দীক্ষাদান করা , তাদের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু যে নীতি আদর্শ অনুসরন করতেন তা মোমের আলোর মতো জ্বেলে দেয়া । গত দশ বছরে তা হয়েছে বলে মনে হচ্ছেনা । ছাত্রলীগের প্রতি আমাদের আবেগ হচ্ছে , কিশোর জীবনের প্রেমের মত । যা কখনো ভুলার উপায় নেই । এই প্রজন্মের ছাত্রলীগ নেতাদের বেশীর ভাগের অনুভূতি আমাদের মত তীব্র নয় বলেই আমার ধারণা । ছাত্রলীগে এখন কাউকে সদস্য প্রার্থী হতে দেখিনা , সবাই সভাপতি কিংবা সাধারন সম্পাদক প্রার্থী !! এই অদ্ভুত পরিস্থিতি আগে ছিল না । আওয়ামীলীগে যোগদানের নামে অনুপ্রবেশ ঘটছে সর্বত্র ! অনুপ্রবেশকারীরা দেশে বিদেশে যুবলীগ , মহিলা আওয়ামীলীগ , ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সহ বিভিন্ন অংগ সংগঠনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়ে যাচ্ছে !! এরা পুকুর ভরাট , জমির দালালী , মাদক নিয়ন্ত্রন , চোরাচালান , পরিবহনে চাদাবাজি , শালিস বিচার , কেউ বাড়ী করতে গেলে ইট বালু সাপ্লাই দেয়া ইত্যাদি করছে , সাধারণ মানুষ এতে বিরক্ত হচ্ছে । এরা অনেক শক্তিশালী এবং বিভিন্ন যায়গায় নীতি নির্ধারকও ! কারা কেন এদের ঢুকিয়েছে , ঢুকাচ্ছে এবং পুনর্বাসিত করেছে , করছে , তাদের চিহ্নিত করতে হবে । এবং বিচার করতে হবে । দলের সকল স্তরে এবং পুলিশ বাহিনীর নিচের দিকে শুদ্ধি অভিযান ভীষণ জরুরী । এবং তা এখনই করা উচিৎ । ইতিমধ্যে দেরী হয়েও গেছে । সময় গেলে সাধন হবেনা !”

এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু এর ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত। 
এপিপি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, জজ কোর্ট কুমিল্লা।
যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ ।

এই বিভাগের আরো খবর