শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
৪০৭

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

দেশজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০১৯  

দেশজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া

দেশজুড়ে উপজেলা নির্বাচনের হাওয়া

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি। দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে তফসিল আর মার্চের শুরু থেকে পাঁচ ধাপে হবে এই নির্বাচন।

আট বিভাগে চার ধাপে এবং অবশিষ্টগুলোর মেয়াদ শেষ হলে একসঙ্গে ভোট হবে। সদর উপজেলার সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। এবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতীকে হবে উপজেলা নির্বাচন। ফলে এবার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে আছে বাড়তি আগ্রহ। তবে জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আগ্রহে ভাটা পড়েছে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় নব নির্বাচিত এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা চাচ্ছেন উপজেলায় প্রার্থী হতে। মনোনয়নের দৌড়ে থাকা নেতারা এরই মধ্যে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সবার কাছে দোয়া চাইছেন। পুরানো প্রার্থীদের সঙ্গে এবার চারদিকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি।

প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৪-৬ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী সরব রয়েছেন। বিএনপির কোন প্রার্থী এখনও পর্যন্ত মাঠে নেই। বিএনপি নেতারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে বলা যাবে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা দলীয়ভাবে করি, জোটগতভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা কখনো করিনি। এমনকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনও আমরা দলীয়ভাবে দলীয় প্রতীকেই করেছি। এবার আমাদের দলের সভাপতি আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীকে হবে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাদের স্বাক্ষরসহ সম্ভাব্য তিনজন প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে পাঠাবেন। সেখান থেকে উপজেলা নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ জরিপ চালিয়েছে, সেই জরিপে যারা এগিয়ে এবং যোগ্য, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এবার যারা উপজেলায় মনোনয়ন চাইবেন তাদের প্রথমে স্থানীয়ভাবে তৃণমূলের স্বীকৃতি নিয়ে আসতে হবে। উপজেলায় বর্ধিত সভা করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে তিন জনের নাম তারা ‘রিকগনাইজড’ করবে। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন জনের মধ্যে থেকে কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড একজনকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে মনোনয়ন দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্তত ১২ বছর আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে তার মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা কম। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল।

এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো অনিয়মের আশংকায় ধানের শীষ প্রতীকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন না করার পক্ষে মতামত দেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তবে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে বিএনপি আপত্তি করবে না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মতামত গ্রহণ করা হবে। আজ ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে সারাদেশের প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ মিলে ভোট বাক্স ভর্তি করেছে। জনগন ভোট দিতে পারেনি। উপজেলা নির্বাচনেও সেই একই কায়দায় আরেকটি প্রহসন করতে চাচ্ছে তারা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এখন কোনো নির্বাচনেই মানুষের আগ্রহ নেই। রিজভী বলেন, বিগত এক দশক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনসহ একাধিক স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বিএনপি। কখনও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেখানে ক্ষমতাসীনরা কিভাবে অনিয়ম করে তা দেশের নতুন প্রজন্ম ও বিদেশিদের সামনে প্রমাণ করতে এবং আন্দোলনের অংশ হিসেবে এসব নির্বাচনে অংশ নেয়া হয়েছে। বারবার ক্ষমতাসীনদের অনিয়মের চিত্র প্রকাশ পেয়েছে, প্রমাণ হয়েছে। নতুন করে সেই চিত্র আর প্রকাশ করার দরকার কি?


প্রসঙ্গত যে, গত সোমবার কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে বিভাগ অনুযায়ী ভোট গ্রহণ করা হবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা ও সামনে পবিত্র রমজান- এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। তিনি বলেন, জেলা সদর উপজেলাগুলোয় ইভিএম ব্যবহারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদর উপজেলার সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

এই বিভাগের আরো খবর